এই আমাদের ভিক্টোরিয়া; পিয়াস মজিদ
ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়েছি মাত্র দু’বছর কিন্তু শত বছরের ঐতিহ্যের আভা লালন করেছি বুকে। কলেজ করিডরে, মাঠে হাঁটতে গিয়ে মনে হয়েছে হয়তো এখানেই হেঁটে বেরিয়েছেন একদা, কলেজের প্রাক্তন সেইসব উজ্জ্বল ছাত্রছাত্রী – অদ্বৈত মল্লবর্মণ, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত কিংবা নভেরা আহমেদ।
কত কত কৃতীদের পদভারে মুখর ছিল এই কলেজের আঙিনা! আখতার হামিদ খানের মতো বিশ্বখ্যাত মানুষ এই কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা ও মুক্তিসংগ্রামের পুরোভাগে ছিল এই কলেজ; প্রাণ দিয়েছে কত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী! কুমিল্লার প্রথম শহিদ মিনারও তো সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে এই কলেজের সামনে। ভাবতে অবাক লাগে এই ভেবে যে ভাষা আন্দোলনের উদগাতা শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার রফিকুল ইসলাম- দুজনই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ার ছাত্র।
একটি শিক্ষালয়ের জন্য এর চেয়ে গৌরবের বিষয় আর কী হতে পারে? কবি নজরুল ভিক্টোরিয়ার পাশে বসেই আড্ডা দিতেন, তাঁর প্রিয় দুলী, প্রমীলার প্রতি প্রাণের অর্ঘ্য নিবেদন করেছেন এই সরসী তীরে বসেই। ২০০২ -এ আমরা যখন ভিক্টোরিয়ার ছাত্র হলাম তখন তা কলেজের পরিসর ছাপিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়। দুই ক্যাম্পাসে বিভক্ত, তবে পুরনো ভবনগুলোই আমাদের ভাল লাগত বেশি। রাজনৈতিক হৈচৈয়ের ভিড়েও মুখিয়ে থাকতাম প্রিয় ক্লাসগুলোর পানে; যদি তা আনোয়ারুল হক স্যার কিংবা মাসুদা মনির আপার হতো।
এখনও মনে পড়ে আনোয়ার স্যারের ‘হৈমন্তী’ কিংবা মাসুদা আপার ‘কবর’ নাটক পড়ানো। আর আমাদের কাছে মিথ ছিলেন স্বপ্না রায়; তাঁর ক্লাস পাই নি তবে তিনি আমাদের কলেজে আছেন- এটা ভাবতেই ভাল লাগত। ম্যাডাম আজ পরপারে কিন্তু হাজারও শিক্ষার্থীর স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল। কলেজ মানে কলেজের আশপাশও; আমি এই কলেজের সামনের বইয়ের দোকানগুলোর সাথে বেড়ে উঠেছি বটে।
বাকিতে, অর্ধ -মূল্যে কোনো কোনো দোকান থেকে কিনেছি বুদ্ধদেব বসুর ‘তিথিডোর’, রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা’ কিংবা সৈয়দ শামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’ ; আজও বুকশেলফে বসত করা বইগুলো আমাকে নিয়ে চলে প্রায় বছর কুড়ির আগের ভিক্টোরিয়া -জীবনে। কলেজ রোডে বসে দাদার দোকানে আড্ডা দিয়েছি বেশুমার; গালিবের কবিতা থেকে মার্কসের মুক্তির ইশতেহারে শাণিত হয়েছি ঢের।
আর আমার ভিক্টোরিয়া কলেজের বন্ধুদের কথাও মনে পড়ে বেশ- যাদের বন্ধুতা চলার পথের যে কোনো হিমার্ত পরিস্থিতিতে আমাকে উত্তাপ দেয় অফুরান। দেশে-বিদেশে, যে যেখানে আছে ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্স; সবাইকে জানাই ১২১-এর শুভেচ্ছা আর বলি ভিক্টোরিয়া আমাদের অন্তহীন অহংকার।
লেখক: ভিক্টোরিয়া কলেজের উচ্চমাধ্যমিক ২০০২ ব্যাচের ছাত্র।