কুঁড়ি থেকে ফুল–কে এম নেছার উদ্দিন

inside post
স্বাধীনতার অনেক আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অনুষ্ঠানে কুঁড়ি থেকে ফুল হতে যাওয়া এই দেশটির নাম দিয়েছিলেন ‘বাংলাদেশ’। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় ‘বাংলাদেশ’ নামটি চূড়ান্ত করেন বঙ্গবন্ধু নিজেই। বর্তমানে এই দিনটি ‘বাংলাদেশ দিবস’ বা ‘বাংলাদেশের নামকরণের দিবস’ হিসেবেই পালিত হয়।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ওই স্মরণসভায় বঙ্গবন্ধু জানান, দেশ স্বাধীনের পর নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখা হবে। এমনকী তিনি সেদিন স্লোগানও দিয়েছিলেন ‘আমার দেশ, তোমার দেশ-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’।’’ তোফায়েল আহমেদ জানান, বঙ্গবন্ধু কখনও পূর্ব-পাকিস্তান বলতেন না, তিনি সবসময় ‘পূর্ব-বাংলা’ বলতেন।
তোফায়েল আহমেদের এই কথার সত্যতা উঠে আসে ১৯৫৮ সালের একটি ঘটনায়। ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পর ১৯৪৭ সালে বঙ্গ-প্রদেশ ভারত ও পাকিস্তানে বিভক্ত হল। সে সময় পাকিস্তানিরা পূর্ব-বাংলার নাম দিতে চাইলো পূর্ব-পাকিস্তান। কিন্তু এ নিয়ে সেই সময় থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলা। এরপর ১৯৫৭ সালে করাচিতে পাকিস্তানের গণপরিষদের তরুণ সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা দেওয়ার সময় ‘পূর্ব-পাকিস্তান’ নামটির প্রতিবাদ করে বলেন যে, পূর্ব-বাংলা নামের একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। আর যদি পূর্ব-পাকিস্তান নাম রাখতেই হয়, তাহলে বাংলার মানুষের জনমত যাচাই করতে হবে। তারা নামের এই পরিবর্তন মেনে নিবে কিনা- সেজন্য গণভোট করতে হবে।’’
বিবিসি’র ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ‘বাংলাদেশ’ শব্দের উৎপত্তিগত ব্যাখ্যা দেন তাদের কাছে। এতে তিনি বলেন, ‘‘যেখানে ‘বাংলা’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত শব্দ ‘বঙ্গ’ থেকে। আর্যরা ‘বঙ্গ’ বলে এই অঞ্চলকে অভিহিত করতো বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। তবে বঙ্গে বসবাসকারী মুসলমানরা এই ‘বঙ্গ’ শব্দটির সঙ্গে ফার্সি ‘আল’ প্রত্যয় যোগ করে। এতে নাম দাঁড়ায় ‘বাঙাল’ বা ‘বাঙ্গালাহ্’। ‘আল’ বলতে জমির বিভক্তি বা নদীর ওপর বাঁধ দেওয়াকে বোঝাতো।’’
ইতিহাসবিদ আবুল ফজলের উদ্ধৃতি দিয়ে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মুসলমান শাসনামলে বিশেষ করে ১৩৩৬ থেকে ১৫৭৬ সাল পর্যন্ত সুলতানি আমলে এবং ১৫৭৬ সালে মোঘলরা বাংলা দখল করার পরে এই অঞ্চলটি বাঙাল বা বাঙালাহ নামেই পরিচিতি পায়।’
জানা যায়, সোহরাওয়ার্দীর ওই স্মরণসভায় এই নাম দেওয়ার কারণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ১৯৫২ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলা ভাষা থেকে-বাংলা। এরপর স্বাধীন দেশের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে-দেশ। এই দুটি ইতিহাস ও সংগ্রামকে এক করে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করা হয়।
এ সম্পর্কে ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার উদ্ধৃতি রয়েছে। ওইদিন আলোচনায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এক সময় এই দেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে বাংলা কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকু চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে।… একমাত্র বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোনও কিছুর নামের সঙ্গে বাংলা কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই।… জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্ব-পাকিস্তান এর পরিবর্তে হবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ।’
লেখক:
কে এম নেছার উদ্দিন,
শিক্ষার্থী, বিএএফ শাহিন কলেজ- ঢাকা।
আরো পড়ুন