বছরে দেড় কোটি টাকার কুল-লেবু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা

 

মাহফুজ নান্টু।

বিস্তৃীর্ণ মাঠ। বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমে থাকতো। সেই জমির চারপাশে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ফল ও সবজির বাগান। বাগানে এখন থোকায় থোকায় ঝুলে আছে কুল, লেবু ও টমেটো। বাগানের সাথী ফসল হিসেবে রয়েছে শীতকালীন সবজি। রোদের আলোয় ফুলকপির শুভ্র হাসি আর ধনিয়ার সুঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে চারপাশ। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল। সেখানে রয়েছে এত বড় বাগানটি। বাগানটি দেখতে ও ফল কিনতে প্রতিদিনই ভীড় করছেন স্থানীয়রা। আগামী বছর দেড় কোটি টাকার ফল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবাস ফেরত ইউনুস ভূইয়ার বাগানটি এখন অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১৮শ’ শতক জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে বাগানটি। বাগানের চারপাশে উঁচু করে মাটির দেয়াল বাঁধ। ভেতরে কাজ করছেন অন্তত ১৫ জন কৃষি শ্রমিক। কেউ কোদাল দিয়ে নিড়ানি দিচ্ছেন। কেউবা গাছের গোড়ায় পানি সেচ ও সার প্রয়োগ করছেন। বাগানের মাঝে রয়েছে পুকুর। আর চারপাশে খালের মত করে নালা করা হয়েছে। যেন বাগানে পানি না জমে। বাগানের বরই গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে লাল-সাদা কুল, রয়েছে লেবু। মাঝে রয়েছে মরিচ, ফুল কপি, বাঁধাকপি, কুমড়া।
কথা হয় বাগানী ইউনুস ভূইয়ার সাথে। তিনি জানান, দীর্ঘ ১৪ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে কৃষিকাজ করতেন। কয়েক বছর আগে দেশে ফিরেন। দেশে এসে দেখেন বাড়ির পাশে বড় জলাভূমি রয়েছে। পরিকল্পনা করলেন পতিত জমিগুলো লিজ নিবেন। নিজের জমানো অর্থ দিয়ে লিজসহ ১৮শ শতক জমিতে গড়ে তুললেন তার ফল ও সবজি বাগান। ইউটিউব দেখে কুল চাষ পদ্ধতি শিখে গত বছর বাগানে অস্ট্রিলিয়ান বল সুন্দরী জাতের ২৫’শ বরই গাছ রোপণ করেন। এ বছর প্রথম ফল আসলো। পাশাপাশি চায়না জাতের ৭ হাজার সীডলেস (বিচিবিহীন) লেবু গাছ রোপণ করেন। গাছ কেনা, কৃষি শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরিসহ গত এক বছরে অন্তত ১৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বাগান করতে গিয়ে এত টাকা বিনিয়োগ করাতে পরিবার ও প্রতিবেশীদের সমালোচনার মুখে পড়েন। তবে হাল ছাড়েননি ইউনুস। ইউনুসের দুই ছেলে দুই মেয়ে। ছেলেরা নিয়মিত বাগানে বাবার কাজে সহযোগিতা করে।

বাগানি ইউনুস বলেন, এবার মাত্র প্রথমবারের মত আমার বাগানে ফল আসলো। এ পর্যন্ত ১ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছি। আগামী রমজানে বিক্রি করবেন লেবু। সে লক্ষ্যই বাগানে পরিচর্যা চলছে। তবে বাগানে আরো অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্য তিনি ঋণের আবেদন করেছেন । তবে পাচ্ছেন না। কোন ব্যাংকই তাকে ৭/৮ লাখ টাকার বেশী ঋণ দিতে রাজি হচ্ছে না।
ইউনুস বলেন, যদি তিনি চাহিদা মতো তার বাগানে বিনিয়োগ করতে পারেন তাহলে কুল, লেবু ও কৃষি সবজি মিলিয়ে আগামী বছর অন্তত দেড় কোটি টাকার ফল ও সবজি বিক্রি করতে পারবেন।

ইউনুসের বাগান বিষয়ে কথা হয় কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শহীদুল হকের সাথে। তিনি জানান, ইউনুসের বাগানের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করলে তার ঋণের ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে।