আদালতের নির্দেশনায়ও কলেজে যেতে পারছেন না অধ্যক্ষ

অফিস রিপোর্টার।।
জুলাই আগস্ট বিপ্লবের পর কুমিল্লা কালেক্টরেট কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মোসাম্মৎ নার্গিস আক্তার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না। বেতন ভাতাও পাচ্ছেন না। কুমিল্লার নাগরিক সমাজ ও অভিভাবকদের অভিমত, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তিনি শিক্ষকদের নিয়ে বসলেই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। উল্লেখ্য ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি কুমিল্লা কালেক্টরেট কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মোসাম্মৎ নার্গিস আক্তার।
প্রতিষ্ঠার পর খুব কম সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বেশ সুনাম অর্জন করে। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে জাতীয় পর্যায়ে ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রমে এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ৭১০ জনের মতো শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষক আছেন ৫৬ জন। এর মধ্যে নিবন্ধনধারী আছেন ৪১ জন। ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতনও বেশি। কলেজ তহবিলে প্রায় ১১ কোটি টাকার মতো জমা আছে।
জুলাই আগস্ট বিপ্লবের পর অধ্যক্ষ মোসাম্মৎ নার্গিস আক্তারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। তখন জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরবর্তীতে কলেজের চারজন শিক্ষকের একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন মহল ও শিক্ষার্থীদের কিছু অংশকে যুক্ত করে নার্গিসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। গত বছরের ১৮ আগস্ট তিনি সর্বশেষ কলেজে যান। ১৯ আগস্ট তাঁকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়। ওইদিন বৃষ্টিভেজা রাতে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে বের হওয়ার পর তাকে জোর করে টেনেহিচড়ে কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর জোরপূর্বক তাঁর কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেওয়া হয়। নার্গিস এ ঘটনায় উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত তাঁকে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁকে যোগদানে বাধা দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি আর কলেজে যেতে পারছেন না। আদালতের রায়ও কার্যকর হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, কলেজের চারজন শিক্ষক ও জেলা প্রশাসনের একটি অংশ নার্গিসকে কলেজে যেতে দিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তার বলেন, কুমিল্লা নগরবাসী জানেন কিভাবে এ পর্যন্ত এই কলেজকে টেনে এনেছি। আমি আদালতের নির্দেশনার পরেও কর্মস্থলে যেতে পারছি না। চারজন শিক্ষক আমাকে যেতে বাধা দিচ্ছেন। তারা মব তৈরি করছেন। জেলা প্রশাসক স্যার চাইলেই আমি কাজে যেতে পারি। প্রতিষ্ঠান তাঁদের। তাই নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বও তাঁদের। এ প্রসঙ্গে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: আমিরুল কায়ছার সম্প্রতি কুমিল্লা শহরের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময়সভায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আদালত উনাকে (অধ্যক্ষ নার্গিস) কলেজে যেতে বলেছেন, উনি নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে যাচ্ছেন না। আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। কুমিল্লার অন্তত পাঁচজন নাগরিক সমাজের ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, জেলা প্রশাসক সবাইকে নিয়ে বসলে বিরাজমান সমস্যার সমাধান এক নিমিষেই হয়ে যাবে। ভালো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক বা কোন সিন্ডিকেটের কারণে যেন ধ্বংস না হয়। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত না হয়। কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ কুমিল্লার অহংকার। অবিলম্বে এর সংকট দূর করা প্রয়োজন। এদিকে গত ৭ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব দীপায়ন দাস শুভ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়, শিক্ষকগণের জোরপূর্বক পদত্যাগের পেছনে যাদের বিরুদ্ধে যৌক্তিক অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন আইন ও বিধি বিধান অনুযায়ী নিষ্পত্তি না হয়, ততদিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বেতন ভাতা চালু থাকবে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান শিক্ষকনেতা ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো: সেলিম ভূঁইয়া বলেন, “শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ নেওয়া গ্রহণযোগ্য হবে না। তাঁরা ফিরে আসবেন। তাঁদের বেতন দেওয়ার জন্য চিঠি হয়েছে। যাঁরা অন্যায় করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
