আমার মিথ্যাবাদী বাবা–আবদুল্লাহ আল মারুফ
বাবার প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল না। বাবার কোন কথাকে তেমন গুরুত্ব দিতামই না। কারণ বাবা মিথ্যা কথা বলতেন। তবে আমার প্রশ্নের জবাবে। কখনও নিজের ইচ্ছায় আমাকে বিস্ময়ের বাক্য শোনাননি। উদাহরণ টানতে গেলে কটা লাইন দীর্ঘ হবে। আর আপনিও না পড়ে চলে যাবেন। তবুও আপনার ইচ্ছায় বাবার মিথ্যার উদাহরণ দিতেই হয়। সোমবার দুপুর যখন আমি ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হতে গেলাম বাবা আমাকে বলেছিল আজ বৃহস্পতিবার। কারণ আমি ছিলাম এক ভাবনার নবাব। বৃহস্পতিবার ছাড়া আমি কিন্তু সপ্তাহের ছ’দিন ভোরে মধ্যরাত ভাবতাম। বয়স যখন ৬ আমি তখন ক্লাস টুয়ে। বাবা বলতেন নামাজ না পড়লে মানুষ মরে যায়। মরে গেলে বাবা বলে ডাকা যায় না। মিথ্যার সাগর একটা আমার বাবা। নাহ, আমি মাঝে মধ্যে ভাবি তিনি মিথ্যার মহা সাগর। আমি কিন্তু বাবাকে সাগর দেখতে যাওয়ার কথা বলতাম। বাবা বলতেন সাগর বড় হলে দেখে। ছোট বেলায় দেখা ভালো নয়। বয়স তখন কম নয়। বরাবর আট হবে। আমার বন্ধুদের সবাই সাইকেল নিলেও বাবা বলতেন যারা হাঁটতে পারে না সাইকেল একমাত্র তাদের জন্য। ক্লাসে টিচার বকা দিলে বাবা বলতেন, এটা তোমার উপহার। কেউ উপহারের নামে পয়সা দিলে বাবা বলতেন, এটা তোমার নয়। বড়দের শ্রদ্ধা আর সম্মানের বিষয়ে বাবারা বুঝি সিদ্ধহস্ত হয়? তাহলে কেন মানুষকে এত শ্রদ্ধা আর সম্মান করতে বলেন! ভোরের সূর্যের সাথে উঠতে শিখিয়েছেন বাবা। সেটা আজ না-ই বলি। মিথ্যা বলে হলেও শিখিয়েছেন কীভাবে প্যান্টের ব্যাল্ট আর জুতার ফিতা বাঁধতে হয়। কাজ গুলো ছোট কিন্তু এটা বহন করবে বংশের পর বংশ। এতসব মিথ্যার ভিড়েও আমি বাবার সব কথাকেই ধারণ করতাম। প্রাতঃস্মরণীয় করে রাখতাম তার মুখের উচ্চারিত প্রত্যেকটা শব্দ। কারণ বাবার এমন নৈতিক মিথ্যার বাণী আমাকে আমি হতে সাহায্য করেছে। সব বাবাই এমন নৈতিক মিথ্যার বাক্যে পরিপূর্ণ করুক সন্তানদের। পরিপূর্ণ করুক একটা ধর্মীয় বিশ্বাসের।