গাছ কেটে জীবন চলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রমেশের

inside post

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
চোখে দেখেন না, কানেও শোনেন না। রয়েছে শ্বাসকষ্ট। বয়স ৬৫ বছর। লাঠি দিয়ে পথ চিনে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে গাছির(গাছের ডাল কেটে পরিষ্কার) কাজ করেন। তাল ও নারিকেল গাছ পরিষ্কারের এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে তিনি পরিবারের আহার জোগাড় করেন। ভিক্ষা ভালো না বলে তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও গাছ পরিষ্কার করছেন। তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার চাপাতলী গ্রামের রমেশ চন্দ্র মজুমদার। সচেতদের অভিমত,চিকিৎসা করালে তার চোখ ভালো হয়ে যেতে পারে। এছাড়া পরিবারের একটা আয়ের ব্যবস্থা করা হলে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে রক্ষা পাবেন।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়,পাশের লক্ষীপুর,পুটিয়া,মালিগাঁও,বাসরাসহ বিভিন্ন গ্রামে তিনি তাল নারিকেলের গাছের ডালা কেটে পরিষ্কার করে দেন। কেউ একজন তাকে হাতে গাছ ধরিয়ে দিতে হয়। গাছে দাঁড়ানোর জন্য লাঠি বাঁধা,ধারালো ছেনি দিয়ে ডাল কাটাসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন। লক্ষীপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের বাড়িতে তাকে গাছ কাটতে দেখা যায়। খালি গায়ে গাছে উঠছেন। পাশ টিনের চালা, চোখে দেখেন না। গায়ে লাগলে কেটে যেতে পারে। বাড়ির লোকজন চিৎকার করে উঠেন। যেন সাবধান হন। তিনি কানেও কম শোনেন। তখন আরো জোরে চিৎকার করলে কিছু শোনেন। খুব যত্ন করে কাজ করেন। হাত দিয়ে অনুভব করেন কোথায় কাটতে হবে। হাতই হয়ে উঠে তার জীবন ধারণের চোখ! তিনি ৪৫বছর ধরে গাছ কাটেন। গত ১৫বছর ধরে তার চোখের আলো হারিয়েছেন। এক ছেলে দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে বিদেশে গিয়ে কাজ পাননি,বেকায়দায় আছেন। পরিবার চালাতে তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও কাজে যান।
রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন,তিনি ভিক্ষা পছন্দ করেন না, তাই কাজ করেন। কেউ তাকে ঠকায় না। তিনি প্রতি নারিকেল গাছ কাটায় ১২০টাকা করে নেন। এখন তাল গাছ কাটা ছেড়ে দিয়েছেন। কোন দিন ৪০০ কোন দিন ৬০০টাকা আয় হয়। তবে প্রতিদিন বের হন না, যখন ভালো লাগে তখন বের হন।
তার স্ত্রী তুলসী মজুমদার বলেন, তিনি কাজে গেলে দুশ্চিন্তায় থাকি। কিভাবে ফিরবেন? কখন ফিরবেন? পরিবারের অবস্থা ভালো না হওয়ায় তিনি এই অবস্থায় কাজে যান। চিকিৎসা ও সহযোগিতা পেলে তার কষ্ট কমতো।
স্থানীয় শিক্ষক মতিন সৈকত ও সমাজকর্মী এসএম মিজান বলেন,রমেশ মজুমদারকে ব্যক্তিগতভাবে জানেন। তিনি একজন কাজ পাগল মানুষ। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও তিনি গাছ কাটার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন। তার সহায়তায় প্রশাসন ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরীন আক্তার বলেন,রমেশ চন্দ্র মজুমদারের বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খবর নেবেন। তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করবেন বলেও তিনি জানান।

আরো পড়ুন