জাদুর মেশিনে খুশি কৃষক কিষানি


মেশিনের চাষাবাদে বেড়েছে ফলন কমেছে পরিশ্রম ও খরচ
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর গ্রাম। মাঠে মেশিনে গর গর শব্দ তুলে ধান কাটা হচ্ছে। পেছনে সারিবদ্ধভাবে খড় পড়ছে। কাটা শেষে জমিতে বস্তায় ধান ভর্তি করা হচ্ছে। তা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে অবাক নয়নে দেখছেন কৃষক কৃষানিরা। এদিকে ব্রি ধান ১০২ জাতের চাষ ও মেশিনে লাগানোতে ফলন বেশি হয়েছে বলে কৃষক কিষানিরা মনে করেন। মাড়াইতে খরচ ও পরিশ্রম কমে যাওয়ায় খুশি তারা। তারা ধানের বস্তা মাথায় নিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন।
কৃষি অফিসের সূত্র জানায়,কৃষি যান্ত্রিকীকরণে উদ্বুদ্ধ করতে দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর গ্রামে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৫০ একর বোরো ধানের জমিতে সমলয় চাষাবাদের ব্লক প্রদর্শনী করা হয়। এই কর্মসূচির আওতায় সিডলিং ট্রেতে চারা তৈরি করে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে রোপন করেন। ধান কাটার সময় কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষকদের চাহিদার ভিত্তিতে ব্রি ধান ১০২ জাতটি লাগানো হয়।

inside post


প্রতি একর জমিতে গড়ে ৯১ মণ করে ধান পাচ্ছেন তারা। কোন কোন জমিতে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ মণ। ৫০ একরে প্রায়  ৯০০ মণ অতিরিক্ত ধান উৎপাদিত হয়েছে সমলয়ের মাঠ থেকে। যার বাজার মূল্য সরকার নির্ধারিত ৩৬ টাকা প্রতি কেজি হিসাবে ১২ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা। এদিকে একর প্রতি সাশ্রয় হয়েছে ১৯ হাজার ৮ শত ১৫ টাকা। যা ৫০ একরে দাঁড়ায় ৯ লক্ষ ৯০ হাজার ৭ শত ৫০ টাকা। ৫০ একরের সমলয় চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষকদের সর্বমোট ২২ লক্ষ ৮৬ হাজার ৭ শত ৫০ টাকার অতিরিক্ত ফসল ও অর্থ সাশ্রয় হয়েছে ।
কৃষক সানু মিয়া,নুর হোসেন,নজরুল ইসলাম বলেন, যন্ত্রের সাহায্যে অল্প বয়স্ক ৩০ দিন বয়সী চারা রোপনের ফলে কার্যকরী কুশির সংখ্যা বেড়েছে। এটাই ভালো ফলনের মূল কারণ। এছাড়া ব্রি ধান ১০২ এর ভালো ফলন হয়েছে।
কিষানি অরুনা বেগম ও সাকিনা বেগম বলেন,ধান তোলার মৌসুমে বাড়ির নারীদের কষ্টের শেষ থাকে না। ধান মাড়াইতে দিন রাত এক করে ফেলতে হয়। বাড়ির শিশুদের যত্ন ,রান্না করা ও খাবারের সময় মিলতো না। এখন মেশিনে টিপ দিলে ধান কাটা,মাড়াই শেষ। যেন জাদুর মেশিন। বস্তায় ধান ভরে বাড়ি নিয়ে যাই। খড় শুকাতে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয় না। মেশিনে মাড়াই ও কাটার কারণে পরিশ্রম অনেক কমে গেছে। এছাড়া খরচও কমেছে।
কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের উদ্যোক্তা এমদাদুল হক বলেন,প্রথম দিকে আগ্রহী না হলে এবার মেশিনে ধান লাগানো ও মাড়াইতে আগ্রহ বেড়েছে। এবার ৫০ একর জমিতে মেশিনে ধান লাগানো হয়েছে,আগামীতে তা ১০০একর ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।
উপসহকারি কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মেশিনে লাগানো জমিতে কুশি বেশি হয়। এছাড়া গত বছর পার্টনার প্রোগ্রামের মাধ্যমে এক একরের একটি ব্রি ধান ১০২ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করি। জমির ফলন দেখে এ বছর কৃষকেরা ব্রি ধান ১০২ চাষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, মূলত দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা সমলয় চাষাবাদের ব্লক প্রদর্শনীটি বাস্তবায়ন করেছি। প্রথমত, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ; বিশেষ করে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের ব্যবহারকে জনপ্রিয়করণ, দ্বিতীয়ত, বোরো ধানের নতুন জাত হিসাবে ব্রি ধান ১০২ এর সম্প্রসারণ। দুটি বিষয়েই বেশ ইতিবাচক ফলাফল মাঠ থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাসনাত খাঁন জানান, সমলয় চাষাবাদের ফলে কৃষকের পরিশ্রম, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়, অন্যদিকে ফলন বৃদ্ধি পায়। আগামীতে কৃষকের উন্নয়নে সকল কার্যক্রমে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো।

আরো পড়ুন