তালিকা করা থেকে খেলোয়াড়ের ডিকশনারি!

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
বদরুল হুদা জেনু। ক্রীড়া সংগঠক। ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ম্যানেজার। কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদকের পদে দায়িত্ব পালন করেন। আনুষ্ঠানিক দায়িত্বের বাইরে ২৫বছর। তবুও মাঠের সবার কাছে তিনি ‘জেনু ভাই’ হিসেবে পরিচিত। শৈশবে প্রবীণ সংগঠকদের আহবানে খেলোয়াড়দের তালিকা করা কিংবা খরচের হিসাব করা থেকে তার ক্রীড়াঙ্গনের সাথে প্রেমের অধ্যায় শুরু। সেই প্রেম চলছে ৫০ বছর ধরে। তার জাতীয় স্থানীয় খেলোয়াড়দের জীবন বৃত্তান্ত মুখস্ত।

inside post


জেনুর পরিবার ১৯৬২ থেকে ৭৯সাল পর্যন্ত কুমিল্লা স্টেডিয়ামের পাশে বসবাস করেছেন। বাসা থেকে মাঠের খেলা দেখেন। সেই থেকে প্রেম শুরু। মাঠের প্রতিটি ঘাস থেকে শুরু করে খেলেয়াড় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে তার পরিচিতি গড়ে উঠে। বদরুল হুদা জেনু বলেন, ক্রীড়াঙ্গনকে আমি কি দিতে পেরেছি জানি না। তবে ক্রীড়াঙ্গন আমাকে অনেক দিয়েছে। ‘কুমিল্লার জেনু’ হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছে।
তিনি ১৯৫৭ সালের ৪এপ্রিল নানার বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উপজেলার এখলাসপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তারা তিন ভাই দুই বোন। বড় দুই ভাই রাজনীতিবিদ মাইনুল হুদা ও কবি সংগঠক ফখরুল হুদা হেলাল প্রয়াত হয়েছেন। বাবা আইনুল হুদা কালেক্টেরেট অফিসে চাকরি করতেন। তার পৈত্রিক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে।
শুরুর গল্প বলতে গিয়ে তিনি জানান, ১৯৬৯সালে তখনকার পৌর মেয়র আবদুল আউয়াল ছিলেন মোহামেডানের কর্মকর্তা। তিনি ডেকে নিয়ে বললেন-চলো কুমিল্লা রেল স্টেশনে যাই। সেখানে পাকিস্তানের পেশোয়ার টিমকে কাগজের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানাই। সেখান থেকে উপলব্ধি হয়,খেলার মাধ্যমে অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭৬সাল। চট্টগ্রামে বড় ক্রীড়া আসর বসে। ১৫০জনের মতো ক্রীড়াবিদের বহর। ফজিলত খান ম্যানেজার। তিনি বললেন-হিসাব রাখার জন্য সাথে আমার সাথে চলো। সেখানে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন হয়তো সিনিয়দের নজরে পড়েছি।
তিনি তার মাঠে আসার বিষয়ে কৃতজ্ঞতা জানান, সে সময়ের জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান খান কালু, মার্চেন্ট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চিত্রশিল্পী এসএ রউফ, ফুটবলার ও সংগঠক আশরাফ চৌধুরী,আমান চৌধুরী, বিবি রহমান,শফিকুর রহমান ও ডিকে গুহ জুয়েলের প্রতি।
পরিবারের সাপোর্টের বিষয়ে বলেন, পরিবার বিষয়টি খুব ভালো ভাবে নিয়েছে এমনটি বলা যাবে না। সব পরিবার চায় তার সন্তান আর্থিক সামর্থ্য অর্জন করুক। তবে কোন খারাপ কাজে যাইনি তারা এটা জেনে বাধা দেয়নি। পত্রিকায় আমার নাম দেখলে খুশি হয়েছে।
তিনি বলেন, শৃংখলা ও সময়ানুবর্তিতা তাকে সফলতা দিয়েছে। যারা সংগঠক হবেন তাদেরও সেটা লালন করতে হবে। ইচ্ছে করলেই সংগঠক হওয়া যায় না। তার জন্য শ্রম,ত্যাগ ও সততা প্রয়োজন। লেগে থেকে সবাইকে বুকে আগলে রাখতে হবে।
আনন্দের স্মৃতির বিষয়ে বলেন,কোন খেলোয়াড় যদি ভালো করেন। তখন আনন্দ লাগে। তিনি এই বিষয়ে উল্লেখ করেন,কুমিল্লা জেলা দলে খেলেছিলেন জাতীয় মহিলা দলের কোচ গোলাম রাব্বী ছোটন। তার মধ্যে দেখেছেন- টাকা পয়সা নিয়ে তার আক্ষেপ নেই। দলে সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞ থাকতো। পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা আজ তাকে তুলে ধরেছে। তিনি প্রয়াত ফুটবলার বাদল রায়,জাতীয় দলের গোল কিপিং কোচ বিপ্লব ভট্টাচার্য, জাতীয় ফুটবলার এনামুল হক শরীফসহ অনেক খেলোয়াড়ের কথা তুলে ধরেন।
সংগঠক জীবনের তৃপ্তি নিয়ে বলেন, তার কোন অতৃপ্তি নেই। যা পেয়েছেন তাতেই খুশি। হয়তো বড় দায়িত্ব পেলে বৃহৎ পরিসরে কাজ করা যায়।

 

আরো পড়ুন