দুই মেয়রসহ ৫০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী জামানত হারাচ্ছেন
অফিস রিপোর্টার।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে দুই প্রার্থীসহ সংরক্ষিত নারী ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১৪৯জন প্রার্থীর ৫০জন তাদের জামানত হারাচ্ছেন। মেয়র পদে জামানত হারাতে যাচ্ছেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৩০৪০ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল হরিণ প্রতীকে পেয়েছেন ২৩২৯ ভোট। মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ১লাখ ৩৪ হাজার ৭৪৫টি। নির্বাচন কমিশনের সূত্রমতে, মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়।
এছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীর অনেকেই পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের ভোটই পাননি। দুই অংকের ঘরে সীমাবদ্ধ ছিলো তাদের ভোটের অংক। এতে জামানাত হারাচ্ছেন তারা। এনিয়ে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের চায়ের দোকানে নানা আলোচনা চলছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাধারণ ওয়ার্ডে ১০৮ জন প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারাতে যাচ্ছেন ৫০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। এর মধ্যে মহিলা কাউন্সিলর রয়েছেন ৯ জন।
কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর ১ নং ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারিয়েছেন ইকবাল হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, ২ নং ওয়ার্ডে ৫ প্রার্থীর মধ্যে আবদুল মন্নাফ, নাহিদা আক্তার, ৩ নং ওয়ার্ডে ৭ প্রার্থীর মধ্যে আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, মনিরুল আলম, স্বপন আলী, আবদুল্লাহ আল মোমেন, ৪ নং ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থীর মধ্যে রোকসানা আক্তার। ৭ নং ওয়ার্ডে ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন খান। ৮ নং ওয়ার্ডে ৫ প্রার্থীর মধ্যে বিকাশ চন্দ্র দাস, রাজন পাল, সৈয়দ মহসিন আলী, ৯ নং ওয়ার্ডে ৫ প্রার্থীর মধ্যে আশিকুর রহমান, মিজানুর রহমান, ১১ নং ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থীর মধ্যে কাজী সামছুল আলম, মো. পারভেজ হানিফ, ১২ নং ওয়ার্ডে ৩ প্রার্থীর মধ্যে ওমর ফারুক, ১৪ নং ওয়ার্ডে ৩ প্রার্থীর মধ্যে আহাদ হোসেন বিশ^াস, ১৫ নং ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থীর মধ্যে সাইফুল ইসলাম, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ প্রার্থীর মধ্যে মো. সাইফুল ইসলাম, মো. হাবিব, সৈয়দ রুমন আহমেদ, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ প্রার্থীর মধ্যে নাছিম হোসেন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ প্রার্থীর মধ্যে মোজাম্মেল হোসেন, ২০ নং ওয়ার্ডে ৩ প্রার্থীর মধ্যে মাহে আলম, ২১ নং ওয়ার্ডে ৫ প্রার্থীর মধ্যে জামাল হোসেন কাজল, মো. মিন্টু, আক্তার হোসেন, ২৩ নং ওয়ার্ডে ৭ প্রার্থীর মধ্যে মাহাবুব আলম, মো. আবু হাসান, নুরুল ইসলাম, শাহজালাল, ২৪ নং ওয়ার্ডে ৫ প্রার্থীর মধ্যে মো. আবু হানিফ, নাসির উদ্দিন, ২৫ নং ওয়ার্ডে ৬ প্রার্থীর মধ্যে রফিকুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, অহিদুর রহমান, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ প্রার্থীর মধ্যে জালাল উদ্দিন আহমেদ, মকবুল আহমেদ ও হোসাইন মোশাররফ জামানত হারাচ্ছেন।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডে এ পদে নির্বাচনে অংশ নেয়া ৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারাতে যাচ্ছেন ৯ জন প্রার্থী। তারা হলেন- ১ নং ওয়ার্ডে ৬ প্রার্থীর মধ্যে মমতাজ বেগম, রোকসানা ইসলাম, ছফুরা সুলতানা এনি, ৩ নং ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থীর মধ্যে ফাতেমা আক্তার, ৪ নং ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থীর মধ্যে মোসা. ফাতেমা আক্তার, ৫ নং ওয়ার্ডে ৬ প্রার্থীর মধ্যে শিউলি আক্তার, ৭ নং ৪ প্রার্থীর মধ্যে ফারজানা আক্তার, ৮ নং ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থীর মধ্যে আমেনা বেগম ও ৯ নং ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থীর মধ্যে সেলিনা আক্তার জামানত হারাতে যাচ্ছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী জানান, কোনও প্রার্থী যদি মোট প্রদও ভোটের ৮ শতাংশ না পান তাহলে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। গেজেট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের জামানতের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।
ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবির মনে করেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনেকেই কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে এসেছেন নিজেকে চেনানোর জন্য। অনেকেই আবার ব্যক্তিগত আক্রোশে প্রার্থী হয়েছেন। আবার তাদের মধ্যে অনেকে অন্য প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য ড্যামি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এছাড়াও ওয়ার্ডগুলোতে রাজনৈতিকভাবে একই দলের একাধিক প্রার্থী হয়েছেন। এসবের কারণে প্রার্থীরা জামানত হারাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, আগে এলাকার লোকজন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মানুষকে উৎসাহিত করতেন নির্বাচন করার জন্য। বর্তমানে নিজেরাই নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে। এতে তারা পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের ভোটের বাইরে আর কোন ভোট পান না।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন কুমিল্লা সিটির ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, কাউন্সিলর পদে ১০৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ১০৫ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৩০৪০ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল হরিণ প্রতীকে পেয়েছেন ২৩২৯ ভোট।