দেলোয়ার হত্যার দুই বছর ; অধরা হত্যার পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি
অফিস রিপোর্টার।।
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনকে গুলিতে করে হত্যা করা হয়। ওইদিন রাতে নিজ বাড়ির কাছাকাছি নগরীর সামবক্সি (ভল্লবপুর) এলাকায় সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলে করে এসে দেলোয়ারকে গুলি করে। এ ঘটনার পরদিন নিহতের বড় ভাই মো.শাহাদাত হোসেন নয়ন বাদী হয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় একই এলাকার আবদুর রাজ্জাকের ছেলে রেজাউল করিম ও আবুল কালামের ছেলে কাউছারসহ অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি রেজাউলের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলাসহ মোট ৩০টি মামলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার আলোচিত এই হত্যাকাÐের দুই বছর । তবে এখনো এ হত্যার পরিকল্পনাকারী ও আসামিরা অধরা রয়ে গেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেলোয়ারের পরিবার ও স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেলোয়ার হত্যা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ। পরে মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। থানা পুলিশের হাতে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে প্রথমে গ্রেপ্তার হয় রেজাউলের সহযোগী সোহাগ এবং পরে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় রেজাউলের চাচাতো ভাই শাহাদাত। কয়েক মাস কারাগারে থাকার পর দু’জনই জামিনে বেরিয়ে আসেন। এছাড়া ঘটনার পর পরই এজাহারনামীয় দুই আসামি ভারতে পালিয়ে যায়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কুমিল্লা।
পিবিআই ও কুমিল্লার আদালত সূত্র জানায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর পিবিআইয়ের সদস্যরা এ মামলায় সদর দক্ষিণ থানার নোয়াগ্রাম গ্রামের সফিকুর রহমান রহমানের ছেলে আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। আনোয়ার মামলার প্রধান আসামি রেজাউলের বিশ্বস্ত সহযোগী। ওইদিন পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে সে দেলোয়ার হত্যাকাÐের পুরো ঘটনা স্বীকার করে। এরপর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আনোয়ার। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আনোয়ার জানায়, দেলোয়ারকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার। এছাড়া মামলার আসামি রেজাউল, চাষাপাড়া গ্রামের মীরন খন্দকারসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম প্রকাশ করে সে।
এদিকে গত ১১ নভেম্বর নগরীর চৌয়ারায় কুপিয়ে হত্যা করা যুবলীগ কর্মী জিল্লুর রহমান চৌধুরী ওরফে গোলাম জিলানীকে। এ হত্যা মামলায় কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার ২নম্বর আসামি। জিলানীর পরিবারের দাবি, কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার এই হত্যাকাÐেরও অন্যতম মূলহোতা। স্থানীয়দের অভিমত,দেলোয়ার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হলে গোলাম জিলানী হত্যাকাণ্ড ঘটতো না।
দেলোয়ার হত্যা মামলার বাদী মো.শাহাদাত হোসেন নয়ন বলেন, কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে খুন করিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দুই বছর হলেও এখনো সন্ত্রাসী রেজাউলসহ আসামিরা ধরা পড়েনি। এতে আমরা খুবই হতাশ। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া রেজাউলের সহযোগী আনোয়ার হোসেন এই খুনের অনেক তথ্য পিবিআই ও আদালতে দিয়েছেন বলে আমরা জেনেছি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিটি নির্বাচন ও চৌয়ারা বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেলোয়ারকে খুনের পরিকল্পনা করেন কাউন্সিলর সাত্তার। এক সময় সাত্তার দেলোয়ারের কর্মী ছিলো। দেলোয়ার ২০১৭ সালের সিটি নির্বাচনে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন আবদুস সাত্তার। যদিও নির্বাচনের আগে সাত্তারকে দলীয় প্রার্থী দলীয় প্রার্থী করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন দেলোয়ার। পরে সে নিজেই দলীয় প্রার্থী হওয়ায় তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
এদিকে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে অভিযুক্ত কাউন্সিলর আবদুস সাত্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই, কুমিল্লার পরিদর্শক মো.মতিউর রহমান বলেন, হত্যাকাÐের পরপরই রেজাউল ও কাউছার ভারতে পালিয়ে যায়। কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার হওয়া আনোয়ার এ হত্যাকাÐের বিস্তারিত স্বীকার করেছে। আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দির আলোকে আমরা হত্যায় জড়িত খুনিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।