নতুন বছরে কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা
চাঁদনী আক্তার, কুবি।।
নতুন বছর মানেই নতুন আশা, নতুন সুযোগ, পিছনের ক্লান্তি দুঃখ ব্যর্থতাগুলো ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করার প্রয়াস। জীবনকে নতুন রঙে রাঙ্গিয়ে সুশিক্ষার আলোতে নিজেকে আলোকিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রত্যেকটি মানুষ। নতুন বছরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নতুন আশা, প্রত্যাশা নিয়ে বছর শুরু করার মাধ্যমে নিজেদের ভাবনা প্রকাশ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম নিজের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা নিয়ে জানান, সব সময়ই নতুন বছর আমাদের জাতীয় এবং ব্যক্তিজীবনে কিছু নতুন প্রত্যাশা এবং আকাঙ্খা নিয়ে আসে এবং আমরা সব সময় সে প্রত্যাশা পূরনে কাজ করে যাই। ২০২৩ সাল শুরু হচ্ছে, নতুন বছরে একজন কুবিয়ান হিসেবে আমার প্রত্যাশা হচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতিতে দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হবে, বাহিরের শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা রাজনীতির চেয়ে গবেষণা ও পাঠদানে বেশী মনযোগী হবে এবং জ্ঞানের চর্চা করবেন। মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন স্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গুণগত পরিবর্তনের কথা বলছেন, স্যারের কাছে আমার প্রত্যাশা উনি সকল সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে সেই গুনগত পরিবর্তন আনবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সুবাহ ইয়াসমিন বন্যা জানান, নতুন বছরকে বিগত সকল গ্লানি মুছে বরণ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি। ২০২২ সালে ছোট ছোট অপ্রাপ্তির চেয়ে প্রাপ্তির সংখ্যাটাই বেশি। তাই নতুন বছরে আকাঙ্খার পরিমানও অনেক। একজন রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতকে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি সহজ করা হোক, এক্ষেত্রে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, সরকারি আর্থিক সংস্থান অপ্রতুল হলে বেসরকারি সংস্থান বাড়ানো হোক। অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে দেশের বাহিরে থাকায় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয়ই নানামুখী সমস্যায় ভুগছে। সেক্ষেত্রে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ করা এবং রিসার্চ পাবলিকেশন বেইজড শিক্ষক নিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রোম্মানা হোসাইন জানান, সকল জীর্ণতা কাটিয়ে নতুনত্বের সূচনা। ২০২৩ সালে রয়েছে আমাদের হাজারো তৃপ্তি, আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া। গত বছরের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে ক্ষীণ অংশ মনে করে, ইতিবাচক পরিবর্তনগুলোকে সাবলম্বী করে নিজেদের পথ চলার শুরুটাই হলো নতুনকে স্বাগতম জানানো, যা হয়ে উঠুক আমাদের জীবনের এক সুন্দর পথ চলা। ক্যাম্পাসের প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। শিক্ষার্থীদের মনে আনন্দের ঢল নেমেছে। প্রকৃতির অপরূপ এক সৌন্দর্যের মহিমায় মুখরিত প্রাণের বিদ্যাপীঠ কুবি। পূর্বে আমরা যে সমৃদ্ধি অর্জন করেছি, নতুন বছরে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দটির বিস্তৃতি ও বিশালতা বহু ঊর্ধ্বে। বিশ্বের বিদ্যা আহরণ করাই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য। শুধুমাত্র দুনিয়াবি পেশা কিংবা অর্থ উপার্জনের জন্য শিক্ষা নয়, মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হোক প্রতিটি শিক্ষার্থীর অন্তরে।
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রোকেয়া আক্তার জানান, নতুন বছর শুরু হয় সকল ত্রুুটি-বিচ্যুতিকে ভুলে গিয়ে নতুনভাবে পরিকল্পনা করার মধ্য দিয়ে। আমি প্রত্যাশা করি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গবেষণায় আরো গতিশীল হবে। তাছাড়া সকল প্রকার দ্বন্দ্ব ও মনমালিন্যকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে স্বাগত জানাবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের মধ্যে সুসম্পর্কের মাধ্যমে। তাহলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আজকের অবস্থান থেকে আরো ভালো অবস্থানে এগিয়ে যাবে।
ফার্মেসি বিভাগের শহীদ নাঈম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে নতুন বছরে কিছু প্রত্যাশা থাকবে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণাবান্ধব একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠাগারমুখী করা, হল ও ক্যাফেটেরিয়ায় সুলভ মূল্যে খাবারের মান বাড়ানো, বিভিন্ন বিভাগে চলমান সেশনজট নিরসনে কাজ করা, যুগোপযোগী নতুন বিভাগ খোলা এবং অবহেলিত ব্যায়াম চর্চা কেন্দ্রের সংস্কার করা ইত্যাদি। এসব দিকগুলো বিবেচনা করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখলে বিশ্ববিদ্যালয় আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।