নারিকেলের ছোবড়ায় চারা লাগিয়ে বাজিমাত


মহিউদ্দিন মোল্লা।।
সমেশপুর। কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার প্রসিদ্ধ গ্রাম। এটির সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে আছে। কারণ এই গ্রামের শতাধিক চাষি সবজির চারা উৎপাদন করেন। এই গ্রামের যুবক হোসাইন রাব্বি। তার পরিবারও চারা উৎপাদন করেন। ¯œাতক সম্পন্ন করা তরুণ রাব্বি। কর্মের খোঁজে গিয়েছিলেন প্রবাসে। সেখান থেকে দেশে ফিরে নতুন কিছু করার ভাবনা মাথায় আসে। শুরু করেন নারিকেলের ছোবড়া (কোকোফিট) দিয়ে সবজির চারা উৎপাদন। ট্রেতে মাটির বদলে নারিকেলের ছোবড়ার গুড়ো দিয়ে চারা উৎপাদন করেন। এই নতুন প্রযুক্তি চারদিকে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে উৎপাদন করা চারা থেকে কোকোফিটের চারার চাহিদা বেড়ে গেছে। রাব্বি টমেটো,মরিচ ও ক্যাপসিক্যামসহ বিভিন্ন সবজির ৭০হাজার চারা তৈরি করেন। তা এক মাসেই বিক্রি হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ক্রেতারা চারা কিনছেন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,সাদা পলিথিনে ঢাকা তাবু। তার ভেতরে মাচার ওপরে ট্রে‘র গর্তে কোকোপিট দিয়ে চারা লাগানো হয়েছে। কৃষক চারায় পানি দিচ্ছেন। আরেকজন চারা তুলে বিক্রি করছেন। ঢাকা এক ব্যক্তি এসেছেন চারা কিনতে। ছাদ বাগানে কোকোফিটের চারা লাগাবেন তিনি। এছাড়া অনেকে এসেছেন নতুন প্রযুক্তির চারা দেখতে। সেখানে মাঠ তদারকি করেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আতিকুর রহমান ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইভা আক্তার। তারা কৃষকদের কোকোপিটে চারা উৎপাদনের প্রক্রিয়া দেখিয়ে দিচ্ছেন।
তরুণ উদ্যোক্তা হোসাইন রাব্বি বলেন,মাটিতে চারা তৈরি করে কৃষকের অনেক লোকসান হচ্ছে। তাই কৃষকের লোকসান কমাতে উপায় খুঁজতে থাকি। অনলাইনে কোকোপিটের চারা উৎপাদন দেখেছি। এছাড়া কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে নেমে পড়ি। আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। পলিনেট হাউজ হলে আমরা আরো ব্যাপক আকারে চারা উৎপাদন করতে পারবো।
ক্রেতা খায়রুল বাশার টিপু বলেন, তিনি একটা সংস্থায় কাজ করেন। তাদের ছাদ বাগানের জন্য টমেটোর চারা নিতে ঢাাকা থেকে এসেছেন। এই চারায় রোগ বালাই কম হয়। তাই তিনি এটার প্রতি আগ্রহী হয়েছেন।
তরুণ উদ্যোক্তা সাব্বির হোসেন বলেন,মাটির চারা ৪০ভাগ মার যায়। কোকোপিটের চারা মরে না বললেই চলে। এই চারা লাগিয়ে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তাই এটার প্রতি তাদের আগ্রহ বেড়েছে।
গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ৪৫বছর মাটিতে চারা লাগিয়েছি। অনেক চারা মারা যেতো। জলাবদ্ধতায় পড়তো। তবে কোকোপিট ট্রেতে চারা তৈরি করায় সেই সমস্যা হয়না। এখন গ্রামে কোকোপিটের চারা উৎপাদনের আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আফরিণা আক্তার বলেন, রাব্বির পরিবার আগে মাটিতে চারা উৎপাদন করতো। এখানে জলাদ্ধতা দিন দিন বাড়ছে। তাই তারা ট্রেতে কোকোপিটে চারা উৎপাদনে ঝুঁকছে। এছাড়া কোকোপিটে চার তৈরি করলে মাটিবাহিত রোগ হয় না। চারা মারা যায় না। এই প্রযুক্তি বুড়িচংয়ে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেয়া হবে।
