‘পিঠে দিয়ে ঢুকে বুলেট পেটে দিয়ে বের হয়’
আবদুল্লাহ আল-মারুফ।।
‘নামাজ পড়ে বের হয় আমার মানিক। সাথে ছিল দুই বন্ধু। একজনের পায়ে গুলি লাগে। তবুও দুইজন কোনরকম দৌড়ে আসতে পারলেও আমার পাখিটা আর উঠতে পাওে নাই। পিঠে দিয়ে ঢুকে বুলেট পেটে দিয়ে বের হয়।’ সোমবার (২৯ জুলাই) ভাঙা টিনের চালার ঘরের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সন্তানের ছবি দেখে এভাবেই আহাজারি করছিলেন মনোয়ারা বেগম। গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) কারফিউর দিনে ঢাকার সাভারের রেডিও কলোনিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাইমন ইসলাম আল আমিন(২৫)। আল-আমিন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর মধ্যপাড়ার মো. বাবুল ও মনোয়ারা বেগম দম্পতির মেঝো ছেলে। তিনি সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। একই এলাকার একটি ফ্যাক্টরিতে নতুন কাজ পেয়েছেন। শনিবার তার লাশ দাফন করা হয় নানা বাড়ি বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে। সেখানে তাকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়।
আল আমিনের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের বাসা সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায়। মসজিদ আমাদের বাসা থেকে সামান্য দূরে। রাস্তা পার হয়ে যেতে হয়। ছেলেটা রাস্তা পার হয়ে জুম্মার নামাজ পড়তে যায়। নামাজ শেষে ফিরছিল বাসায়। নামাজ শেষে বাসা থেকে গুলির শব্দ শুনে বের হই। আমার মনটা কেমন কেমন জানি করছিল। কিছুক্ষণ পর তার এক বন্ধু কল দিয়ে বললো আল আমিন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বাসা থেকে বের হতে হতে আরেকটা কল আসে, হাসপাতাল থেকে করা অচেনা ওই নাম্বারে বলছিতেছিল, ‘খালাম্মা আল আমিন মারা গেছেন’। এসময় চারদিকে আর্তনাদের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আমি দৌড়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি পাখিটার রক্তাক্ত শরীর পড়ে আছে। যেন হাসতেছিল আমাকে দেখে।
আল আমিনের বাবা মো. বাবুল বলেন, যখন মৃত্যুর খবর পাই আমি তখন আমার কর্মস্থল গাজীপুরে। সকালে আল আমিনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার ছেলেটা আমাকে কত অনুরোধ করে বলেছিল যেন বের না হই। গত ৫ মাস আগে বিয়ে করেছে। বউটাকে আর তুলে আনতে পারে নাই।