বাঞ্ছারামপুরে ভাই-বোন হত্যা; আটক-১
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে হত্যা করা হয় স্কুল পড়ুয়া ভাই-বোনকে। হত্যার পর নিজেদের বাড়িরই দুই কক্ষের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা হয় রক্তাক্ত মরদেহ। ঘটনার পরই ওই বাড়িতে থাকা নিহতদের মামা বাদল মিয়া বেপাত্তা হওয়ায় সন্দেহের তীর তাক হয় তারই দিকে। অবশেষে ঢাকা থেকে আটক হলেন মামা।
বুধবার (২৬ আগস্ট) ভোরে রাজধানী ঢাকার গোড়ান থেকে ভাগ্নি-ভাগ্নেকে খুনের সাথে জড়িত সন্দেহে মামা বাদল মিয়াকে (৩৬) আটক করেছে পুলিশ। এর আগে গত সোমবার রাতে বাঞ্ছারামপুরের সাহেবাবাদ গ্রামের প্রবাসী কামাল উদ্দিনের পুত্র কামরুল হাসান এবং কন্যা শিফা আক্তারের মরদেহ নিজ ঘরের খাটের নিচ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই মামা বাদল মিয়া ছিলেন বেপাত্তা।
জানা যায়, গত প্রায় আড়াই মাস ধরেই বাদল তার বোনের বাড়িতে ছিলেন। তার বাড়ি পাশের কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার খুদে-দাউদপুর গ্রামে। এলাকার একটি মারামারির মামলায় আসামী হবার পর বাদল বাঞ্ছারামপুরে বোনের বাড়িত ছিলেন আত্মগোপনে। এর আগে সে সৌদিআরবে প্রবাসী ছিলেন। ঘটনার পর বাদলকে আটক করতে ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জে অভিযান চালায় পুলিশ। অবশেষে বুধবার ভোরে তাকে ঢাকার গোড়ান এলাকা থেকে আটক করা হয়।
এদিকে ঘটনার পর থেকে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে নিহত শিফা ও কামরুলের বাবা কামাল উদ্দিন ও মা হাসিনা আক্তার। পুলিশ জানায় ওই ঘটনার সময় নিহতদের বাবা-মা ও মামা বাদল ওই বাড়িতে ছিলেন। এদিকে এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। উল্লেখ্য,সলিমাবাদ ইউনিয়নের সাহেবাবাদ গ্রামে নিজ ঘরের খাটের নিচ থেকে শিফা আক্তার (১৪) এবং তার ভাই কামরুল হাসানের (১০) মরদেহ সোমবার রাতে পুলিশ উদ্ধার করে। শিফা বাঞ্ছারামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ও কামরুল সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন।
ঘটনার দিন সোমবার বিকেলে প্রথমে কামরুল নিখোঁজ হয়। তাকে খুঁজতে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় শিফাকে ঘরে রেখে যান তার মা হাসিনা আক্তার। পরে ঘরে এসে দেখেন শিফাও নেই। এদিকে নিখোঁজ দু’জনের খোঁজ পেতে এলাকায় মাইকিং করা হয় এবং রাত সাড়ে আটটায় থানায় গিয়ে পুলিশের সহায়তা চান তাদের বাবা-মাসহ স্বজনেরা। শিফা ও কামরুলের পিতা কামাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের সৌদীআর প্রবাসী। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখে ছুটিতে দেশে আসেন কামাল উদ্দিন। এরপর লকডাউনে আটকে আর যাওয়া হয়নি তার।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট বাড়িটিতে প্রবাস ফেরত কামাল উদ্দিন, তার স্ত্রী, দুই কন্যা ও পুত্র ছাড়া কেউই থাকতো না। বেশ কিছু দিন ধরে কামালের শ্যালক বাদল মিয়া অবস্থান করছিলেন ভগ্নিপতির বাড়িতে। বিদেশ যাওয়ার জন্য বোনদের কাছ থেকে ১৪/১৫ লাখ টাকা ধার নেয় বাদল। কিছুদিন বিদেশে ছিলোও। পুনরায় বিদেশে গিয়ে ব্যবসা করবে এমন আশ্বাস দিয়েই বোনদের কাছ থেকে টাকা কর্জ নেয়। সম্প্রতি লকডাউনের কারণে বিদেশ থেকে চলে আসার পর তার বোনেরা জানতে চাইলে সে জানায় আবার বিদেশ চলে যাবে। সেখানে ঝামেলা হয়েছে তাই দেশে এসে পড়েছে। পরবর্তীতে ধার-দেনা মিটিয়ে দেবে। সোমবার ভগ্নিপতি কামালকে তিন লাখ টাকা পরিশোধের কথা ছিল বাদলের। এদিন রাতেই ঘটলো কামাল উদ্দিনের দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যা। সেদিন বাদল এই বাড়িতেই অবস্থান করছিলো। বাড়ির দুটি কক্ষের খাটের নিচেই মিলে শিফা ও কামরুলের হাত-পা বাঁধা রক্তাক্ত মরদেহ।
সূত্র জানায়, ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করা হয় শিফা ও কামরুলকে। হত্যা নিশ্চিত করতেই এমনটি করা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আঘাতের বেশকিছু চিহ্ন। শিশু কামরুল হাসানের মরদেহ যে কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়, সে কক্ষেই অবস্থান করতো তার মামা বাদল। সোমবার সন্ধ্যের পর প্রতিবেশীরা উচ্চস্বরে ডেকসেট বাজানোর শব্দও শুনেছে। জোড়া খুনের ঘটনায় কতজন অংশ নিয়েছে তা পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে পেশাদার খুনীদের সহায়তায় নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘঠিত হতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছে। পুলিশ জানিয়েছে যেহেতু এই বাড়িতে মামা এবং শিশুদের পরিবারের সদস্যরা থাকতো তারাই জানতে পারে ঘটনার মূল রহস্য। ঘরের লোকজনই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। ঘটনার পর ৩/৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যার মোটিভ সমন্ধে ওয়াকেবাহল হতে পারে পুলিশ। জেলা পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা পিবিআইসহ সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থাগুলো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অনীহা প্রকাশ করছে পুলিশ। এদিকে এ ঘটনায় এখনও দায়ের হয়নি কোনো মামলা।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী এখনও পর্যন্ত ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত বাদল মিয়াকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাদল মিয়াকে ঢাকা থেকে আটক করা হয়েছে। তাকে ঢাকা থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে।’