বাতি জ্বলে না উঠে গেছে কার্পেটিং


শাসনগাছা ফ্লাইওভার:
জন্মেছে গাছ , ছিনতাইকারী মাদকসেবীর উৎপাত
সাইফুল ইসলাম সুমন।।
কুমিল্লা নগরীর ব্যস্ততম শাসনগাছা ফ্লাইওভার ডুবে আছে অন্ধকারে। সড়কবাতি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় রাতে বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। পাশাপাশি, সুযোগ নিচ্ছে মাদকসেবীরাও। অন্ধকারের মধ্যে ফ্লাইওভারের বিভিন্ন স্থানে বসছে তাদের আড্ডা।
মঙ্গলবার রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, ফ্লাইওভারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত কোনো বাতিই জ্বলছে না। গভীর রাতে গাড়ি চলাচল কমে গেলে পুরো ব্রিজটি অন্ধকারে ঢেকে যায়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক পথচারী ও মোটরসাইকেল আরোহী আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছেন।
ফ্লাইওভার দিয়ে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন তরুণ তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাতি বন্ধ থাকায় রাতে এখানে উঠলেই আতঙ্কে থাকি। অন্ধকারের মধ্যে কে কখন এসে দাঁড়ায় বলা যায় না। অনেকেই ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।
পিকআপ চালক বাবুল মিয়া বলেন, দিনে ভাঙা কার্পেটিংয়ে গাড়ি উঠলেই ঝাঁকুনি খেতে হয়। আর রাতে আলো না থাকায় সবসময় ভয় নিয়ে চলতে হয়।
শুধু আলো বন্ধ নয়, ফ্লাইওভারের অবকাঠামোও নষ্ট হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে ছোট ছোট গর্ত তৈরি হয়েছে, যা যানবাহনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রেলিংয়ের নিচে জমে থাকা মাটিতে জন্মেছে ঘাস। কোথাও কোথাও আবার জমে আছে বৃষ্টির পানি। সব মিলিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব স্পষ্ট।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. কামরুল হাসান বলেন, এত টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ হলো, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ নেই। আলো বন্ধ, কার্পেটিং ভাঙা এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যেই ফ্লাইওভারটির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় শাসনগাছা ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ। প্রায় ৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩১ দশমিক ৫০ মিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘ পাঁচ বছরের কাজ শেষে ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল এটি উদ্বোধন করা হয়। কুমিল্লা শহরের রেলওয়ের একমাত্র ওভারপাস হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন এ পথে চলাচল করে।
মানবাধিকারকর্মী আলী আকবর মাসুম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে শাসনগাছা ফ্লাইওভারসহ কুমিল্লা নগরীর বেশিরভাগ স্থানে একই অবস্থা। কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও নেই। এভাবে তো চলতে পারে না।
কুমিল্লা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, ফ্লাইওভারের তার বারবার চুরি হয়ে যাচ্ছে, এজন্য বাতি জ্বলছে না। কিছুদিন আগেও প্রতিটি পিলারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে বাতি জ্বালানো হয়েছিল। কিন্তু আবার তার চুরি হয়েছে। তিনি আরও জানান, বর্ষার কারণে রেলিংয়ের নিচে মাটি জমে ঘাস জন্মেছে, কোথাও কোথাও পানি জমেছে। শিগগিরই ঘাস পরিষ্কার, পানি নিষ্কাশন এবং ভাঙা জায়গায় মেরামতের কাজ করা হবে।
যানচালক ও যাত্রীরা বলছেন, অবিলম্বে ফ্লাইওভারের আলো চালু করা, ভাঙা কার্পেটিং মেরামত এবং সার্বক্ষণিক পুলিশ টহল নিশ্চিত করা জরুরি। নইলে ব্যয়বহুল এই অবকাঠামো দ্রুত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়বে, নগরবাসীও ভোগান্তিতে পড়বেন।