মায়ের কাছে খোলা চিঠি

মনোয়ার হোসেন রতন।।
পবিত্র কুরআনের মা সূরা ফাতিহা,  আর সমস্ত মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ পবিত্র স্থান মক্কা – মদিনা। তেমনি আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়, শ্রেষ্ঠ প্রেরণা আমাদের “মা”। দীর্ঘ দশ মাস দশ দিন তুমি তোমার সন্তানকে  বহন করেছো, অসহনীয় কষ্ট সয়ে এনেছো পৃথিবীর আলোয়। তোমার নাভিমূল ছিঁড়ে আমরা এসেছিলাম পৃথিবীর আলোয়। তুমি রেখেছো বুকের সমস্ত আলো, ভালোবাসা ও স্নেহ দিয়ে।
প্রতিটি মায়ের জীবনের সংগ্রাম এক মহাকাব্য। যুদ্ধকালীন সময়, দুর্ভিক্ষ, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা – সবকিছু মোকাবেলা করেও তুমি আমাদের আগলে রেখেছিলে মমতার ছায়ায়। তুমি শুধু একজন মা নও, তুমি ছিলে ত্যাগ ও প্রজ্ঞার প্রতীক, বাবা’র শ্রদ্ধার সাথী, ঘরের আশীর্বাদ।
তুমি আমাদের প্রথম শিক্ষক। ফজরের আজানে জাগিয়ে তোলা, তাহাজ্জুদের অশ্রুসিক্ত প্রার্থনা, কোরআন তিলাওয়াত, হাদিস পাঠ, পর্দা ও নৈতিক জীবনের অনুশীলন – এ সবের ভিত রোপণ করেছো তুমি। বিনয়, ধৈর্য, ধর্মীয় মূল্যবোধ – তোমার হাত ধরেই শিখেছি আমরা।
মা, তুমি যখন চলে গেলে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে, আমি তখন মাত্র আট বছরের শিশু। সেই শোক আজও কাটেনি। সময় সব ভুলিয়ে দেয় – এ কথার বাস্তবতা আমি খুঁজে পাইনি; বরং সময়ের সাথে সাথে তোমার শূন্যতা আরও গভীর হয়েছে। প্রতিটি দিন তোমার স্মরণে কাটে, তোমার জন্য দোয়া করি।
তুমি তোমার ছেলে মেয়েদের বলেছিলে, ছবি তুলতে নেই। তাই তোমার কোনো ছবিও নেই আমাদের কাছে। কিন্তু হৃদয় বক্ষে ছবি গেঁথে রেখেছি – একটা উজ্জ্বল মুখ, কোমল হাসি আর অফুরন্ত মমতার প্রতিচ্ছবি। আকাশের উজ্জ্বল তারাদের মাঝে আজও তোমাকে খুঁজে ফিরি। কত কিছু ভাবি, হয়তো তুমি-ই ঝলমলে হাসি নিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছো, আকাশের তারা হয়ে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে।” আমি সেই জান্নাত তোমার মাঝেই দেখেছি, মা। এখন তুমি নেই, তবু তোমার স্মৃতি আমার জান্নাতের ঠিকানা। রাসুল (সাঃ) আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি দয়ার দৃষ্টিতে তার পিতা – মাতার দিকে তাকায়, তার জন্য একটি কবুল হজ্বের সওয়াব লেখা হয়।” আমি তাকিয়ে থাকি আকাশের তারা, স্মৃতির দরজা, কল্পনার জানালায় – হয়তো একটা কবুল হজ্বের সওয়াব পেতে পারি এ আশায়!
মা, তুমি থাকলে হয়তো আমাদের প্রতিটি সাফল্যের পেছনে থাকতো তোমার দোয়া, আর প্রতিটি বিপদের মুহূর্তে তুমি হতে আমাদের ঢাল। আজ আমি কেবল স্মৃতির আঁধারে তোমাকে ছুঁতে চাই। হে আল্লাহ, তুমি পৃথিবীর সমস্ত মাকে ক্ষমা করো, তাঁদেরকে দয়া করো এবং পৃথিবী ছেড়ে যে মারা চলে গেছেন তাঁদের সবার কবরকে জান্নাতের বাগিচা বানিয়ে দিও।
মা দিবস আমার কাছে শুধুই একটি দিন নয়, বরং প্রতিটি দিনই তোমাকে মনে করার, তোমার জন্য দোয়া করার দিন। আমি চাই, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ জানুক, একজন ‘মা’ কেমন হন – তুমি যেমন ছিলে: নীরব অথচ দৃঢ়, ধর্মভীরু অথচ বিনয়ী, প্রজ্ঞাময় অথচ নিঃস্বার্থ। মা, তুমি ছিলে, আছো, থাকবে – আমাদের হৃদয়ের সবচেয়ে পবিত্রতম স্থানে। আকাশের সবচেয়ে দূরের যে তারাটির দীপ্তি চোখের জল কণার মতো জ্বলজ্বল করে, সেই তারাটি আমার মা, আমাদের মা “হোসনে আরা”।
inside post
আরো পড়ুন