মাসুমের পরিবারের চোখের জলে ভেজা ঈদ

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
লাজুক ছিলেন। কথা কম বলতেন। সেই তরুণ বৈষম্যমুক্ত সমাজের জন্য জীবন উৎসর্গ করে এসেছেন। ২৪বছরের তরুণ মাসুম মিয়া। বাসা কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর রামপুর গ্রামের পূর্বপাড়ায়। পরিবারের বড় ছেলেকে ছাড়া এবার ঈদ পালন কঠিন বলে মন্তব্য করেন পরিবারের সদস্যরা। মাসুমের জন্য তাদে ঈদ কেটেছে চোখের জলে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির হাঁটাপথ দূরত্বে পাড়ার মসজিদ। মসজিদের পাশে মাসুমকে দাফন করা হয়েছে। বাবা এসে কবরের ঘাস পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। বাড়িতে গেলে এই প্রতিবেদককে দেখে মা হোসনেয়ারা বেগম ছেলের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার আগের ছবি,তাকে নিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনা ও মৃত্যুর পরে তোলা ছবি দেখান। কিছুক্ষণ পর পর তিনি চোখ মোছেন।

inside post


মা হোসনেয়ারা বেগম বলেন,২ছেলে এক মেয়ে ছিল। তার মধ্যে মাসুম বড়। এখন আছে রেজাউল করিম মাহফুজ ও মেয়ে তাসমিন আক্তার। তার বাবা ট্রাক্টর চালান। মাঝে দুইবার দুর্ঘটনায় পড়েছেন। পরিবার চালাতেন হিমশিম খেতেন। মাসুম পরিবারের হাল ধরতে রেস্টুরেন্টে কাজ নেন। কাজ থেকে রাত ১২-১টায় বাসায় ফিরতেন। মা- মা বলে ডাক দিতেন। এখনও মাঝ রাতে ছেলের মা ডাক শুনে উঠে বসি। কিন্তু ছেলে তো আর ফিরে আসে না। ছেলে তো আর ফিরবে না। আমার অনেক কষ্টের নাড়ি ছেঁড়া ধন। ছোট বেলায় নিউমোনিয়া হয়েছিলো। মরে যায় যায় অবস্থা। সেই সময় মরেনি। ছেলে যুবক হয়ে উঠার পর মেলে ফেললো। ছেলেকে পায় গুলি ও মাথায় কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার ছেলেকে যেভাবে কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে। তাদেরও যেন সেই রকম কঠিন সাজা হয়। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।


তিনি ছেলের গত ঈদে কেনা শার্ট জড়িয়ে কাঁদছেন আর শার্ট থেকে ছেলের গায়ের ঘ্রাণ শুকে নিজেকে সান্ত¡না দিচ্ছেন। তিনি বলেন, তার তেমন চাহিদা ছিলো না। ছোট ভাই ও বোনদের দিতে পারলে খুশি হতো। এই শার্টটা তার পছন্দ হয়েছিলো। পরে ১১শ’ টাকা দিয়ে কিনে দিয়েছি। শার্ট আছে ছেলে তো নেই।
ছোট ভাই রেজাউল করিম মাহফুজ বলেন, ভাইয়ের কোন টাচ ফোন ছিলো না। ফোন ব্যবহার করতে মন চাইলে আমারটা নিতো। আমরা একসাথে ঘুমাতাম। এখন ঘুমাতে গেলে বিছানাটা খালি লাগে। ভাই চুপচাপ থাকতেন। ঈদে আমাকে ১০০টাকা কখনও ২০০টাকা বকশিস দিতেন। এবার ঈদে ভাইকে খুব মিস করছি।
বাবা শাহিন মিয়া বলেন, টিনের ঘরে পানি উঠে যেত। সেখানে তার থাকতে কষ্ট হতো। নতুন বাসায় আমরা উঠলাম। তার তো নতুন বাসায় উঠা হলো। তিনি বলেন, আমরা বিএনপি,জামায়াত,বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতাদের থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছি। ছোট ছেলেকে প্রবাসে পাঠানোর চিন্তা করছি।
উল্লেখ্য-২০২৪সালের ৪আগস্ট কুমিল্লা কোটবাড়ি বিশ্বরোডে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে মাসুমকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। ৮আগস্ট পরিবার তার খোঁজ পায়। তার লাশ তুলে গ্রামে এনে পুনরায় দাফন করা হয়।

আরো পড়ুন