লালমাই; চোর শনাক্তে কাপনের কাপড় পরিয়ে কবরস্থ!

 

inside post

লালমাই প্রতিনিধি
বাড়ির উঠানে কবর খুঁড়ে কাপনের কাপড় পরিয়ে সন্দিগ্ধদের কবরে শোয়ালে প্রকৃত চোরের মুখ দিয়ে রক্ত বমি হবে। নাক দিয়ে রক্ত ঝরবে। এই পদ্ধতিতে চোর শনাক্ত ও চুরি হওয়া টাকা উদ্ধার করা যাবে। কথিত কবিরাজ সালাউদ্দিন এ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের মুন্সীবাড়ির কাতার প্রবাসী আমিনুল ইসলাম চুরি হওয়া ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার ও চোর শনাক্তে গত ২৬ জুন বিকালে নিজ বাড়ির উঠানে কবর খোঁড়েন।

সূত্র জানায়,বাজার থেকে কবিরাজ একসেট কাপনের কাপড় আনেন। সন্দিগ্ধ হিসেবে একই গ্রামের মৃত আমান উল্যা’র ছেলে যুবলীগ কর্মী সোহাগ হোসেন ও আলেক হোসেনের ছেলে সাব্বির হোসেনকে কাপনের কাপড় পরিয়ে কবরে শোয়ানো হয়। কিন্তু সন্দিগ্ধরা কেউ রক্ত বমি করেনি। চোরও শনাক্ত হয়নি। দৃশ্যটি দেখতে গ্রামের অন্তত অর্ধশতাধিক নারী শিশু ওই প্রবাসীর বাড়িতে জড়ো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন গোপনে নিজের মোবাইলে ৫৭ সেকেন্ডের একটি ও ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও করে সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিলে চোর শনাক্তের ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে যায়।

আংশিক দৃশ্যায়িত ভিডিও দুটিতে দেখা যায়, কবরে নামার পর কাপনের কাপড় টেনে সোহাগের মুখ ডেকে দেন প্রবাসী আমিনুল ইসলাম এবং রক্ত বমি না হওয়ায় সোহাগ কিছুক্ষণ পর নিজেই কবর থেকে উঠে আসেন।

গত ২৯ জুন সোহাগের বাড়িতে উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে সালিশ বৈঠক বসলেও অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম সময়ের প্রার্থনা করায় বৈঠকটি স্থগিত করা হয়। ওই বৈঠকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

অপদস্থ হওয়া সোহাগ হোসেন গত ৩০জুন বিকালে প্রবাসী আমিনুল ইসলাম, তার স্ত্রী ফেরদৌসি, মৃত আবদুল মজিদের ছেলে আবদুল ওহাব ও কবিরাজের বিরুদ্ধে লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত আবেদন করেন। ইউএনও বিষয়টি তদন্ত করতে লালমাই থানায় পাঠালে থানার উপ-পরিদর্শক কামাল হোসেন বুধবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পান।

বক্তব্য নিতে ১ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রবাসী আমিনুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রবাসী আমিনুল ইসলামের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ঘটনা উল্লেখ করে চোর শনাক্ত না হওয়ার কারণ জানতে মোবাইলে কল করলে লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজারস্থ মুশকিল আছান চেম্বারের কথিত কবিরাজ মো. সালাউদ্দিন বলেন, আমি যে পদ্ধতিতে বলেছি, তারা সেই পদ্ধতিতে কবিরাজি করেনি হয়তো। সেজন্য চোর শনাক্ত হয়নি। টাকা কত নিছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুশি হয়ে যে যা দেন তাই নিই।

বাকই উত্তর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুল হক বলেন, চোর শনাক্তের নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় যুবলীগ কর্মীকে অপদস্থ করার ঘটনায় ভণ্ড কবিরাজসহ জড়িতদের বিচার চাই।

লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার অজিত দেব বলেন, যেহেতু ফৌজদারী অপরাধ হয়েছে, সেজন্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জকে বলেছি।

আরো পড়ুন