হিন্দুপল্লীতে হামলার চার্জশীটভূক্তরা নৌকার টিকিটধারী!
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
হিন্দুপল্লীতে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে হলেন নৌকা প্রতীকের টিকিটধারী! এই নিয়ে খোদ দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝেই বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। এই চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায়। সেখানকার ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে সদর ও হরিপুর ইউনিয়নে বিতর্কিত দুইজন আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
জেলার নাসিরনগর উপজেলার হিন্দুপল্লীতে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ মামলার চার্জশীটভুক্ত দুই আসামি দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি ও আবুল হাসেমকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আবুল হাসেম নাসিরনগর সদর এবং আঁখি হরিপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এই দু’জন নাসিরনগর উপজেলা সদরের গৌরমন্দির ভাঙচুর মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী।
চার্জশিটভুক্ত আসামীদের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নাসিরনগর উপজেলাজুড়েই সমালোচনার ঝড় বইছে। এছাড়াও মন্দির ভাঙচুর মামলার আসামী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের নাম তালিকা প্রকাশ করা হয়।
হিন্দুপল্লীতে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ মামলার দুই আসামি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার খবরে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত জেলা আওয়ামী লীগও। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, আবুল হাসেম ও আতিকুর রহসান আঁখি যে মন্দির ভাঙচুর মামলার আসামী- সেটি হয়তোবা দলের সভাপতির কাছে গোপন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘আমরা জেলা বাছাই কমিটি থেকে তাদের ব্যাপারে আপত্তি দিয়েছিলাম। এরপরও এটি হয়েছে। মনে হয় তাদের মামলার বিষয়টি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উত্থাপিত হয়নি অথবা কেউ গোপন করেছে। কেন্দ্রের দৃষ্টিতে গেলে হয়তো এটি পরিবর্তন হবে।’
উল্লেখ্য, ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননাকর একটি পোস্টের জেরে বিগত ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলা সদরে হিন্দুপল্লীতে হামলা চালিয়ে মন্দির ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট করে দুস্কৃতিকারীরা। পরবর্তীতে দুই দফায় হিন্দুদের কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ হয়। এসব ঘটনায় দায়ের করা মোট ৮ মামলায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে আসামী করা হয়। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর গৌরমন্দির ভাঙচুর মামলায় নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম ও হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিসহ ২২৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেয় পুলিশ।