খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে লোকসানে খামারি


ঘরে ঘরে আর বইছেনা দুধের নহর
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ছিলোনিয়া গ্রাম। এই গ্রামটিসহ পাশের ১২টি গ্রামের ঘরে ঘরে এক সময় দুধ উৎপাদন হতো। যেন ঘরে ঘরে বইতো দুধের নহর। গরু পালন,দুধ বিক্রি ও শ্রমিকের কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ছিলোনিয়া গ্রামে আড়াই শতাধিক পরিবার দুধ উৎপাদন করতেন। দুধের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিলোনিয়ায় এখন অনেকটা নিরব নিস্তব্ধ। ছিলোনিয়াসহ পাশের গজারিয়া, হাপানিয়া, উৎসব পদুয়া.মাতাইনকোট,দোসারি চৌ,জামমুড়া, শাসনমুড়া, আটিটি,বাটোরা গ্রামে এখন আর তেমন দুধ সংগ্রহ ও বিক্রির উৎসব বসে না। গো খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে লোকসানে পড়েছেন খামারিরা। অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু ছিলোনিয়া গ্রামে গত ৬ বছরে আড়াইশ’ খামার থেকে ২০০খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এই সংকট দূরীকরণে খামারিরা সরকারের সুদৃষ্টি চেয়েছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গ্রাম জুড়ে গরুর হাম্মা হাম্বা ডাক। মাঠে চাষ করা হয়েছে সবুজ ঘাস। কেউ গরুর ঘাস কাটছেন। কেউ গোবর পরিষ্কার করছেন। কেউবা দুধ সংগ্রহ করছেন। গরু দুধ ধোয়ানো চলছে। হাতে তেল মেখে ওলান থেকে দুধ নেয়া হচ্ছে। চিরিৎ চিরিৎ শব্দে দুধ পড়ছে বালতিতে। সাদা দুধে ভর্তি হয়ে যায় বালতি। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে দুধের মিষ্টি ঘ্রাণ। ভোরের সোনালি আলো সাদা দুধে পড়ে চিক চিক করে। তবে দুধের মূল্য কমে যাওয়ায় সকালের সোনা ঝরা রোধও এখন খামরিদের নিকট বিবর্ণ মনে হয়। গ্রামে আগের মতো উৎসবের আমেজ নেই, অনেক খামার খালি পড়ে আছে। কোন খামারের আগে ২০টি গরু ছিলো। এখন সেখানে ২টি গরু আছে। খামার যেন মেলা শেষের ভাঙ্গা হাট। খাবার দেয়া পাত্র খালি পড়ে আছে। কোথাও খালি পাত্রে বাড়ি ব্যবহার্য জিসিপত্র রাখা হয়েছে। রাখা হয়ে মাছ ধরার ছাই কিংবা কনুই জাল, সাইকেলের পরিত্যক্ত টায়ার।
খামারি নাইমুল ইসলাম বলেন,বর্তমানে তার ১৮গাভী আছে। দুধের দাম কম খাদ্যের দাম বেশি। তাই অনেক খামারি ব্যবসা থেকে সরে যাচ্ছেন। খাদ্যে ভুতুর্তি ও দুধের বাজার মনিটরিং হলে খামিরা বাঁচবে বলে তিনি জানান।
খামারি জয়নাল আবেদীন বলেন, ২০০৮সালে ৩ টা গাভী দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে আছে ২৩টা। করোনার সময়ে দুধ বিক্রি নিয়ে ঝামেলায় পড়েন। লোকসানে পড়ে গরু ও বাচুর বিক্রি করে খামার চালিয়েছেন। এখন এক কেজি খাদ্যের দাম ৫৫টাকা, পাইকারি এক কেজি দুধের দাম ৪০টাকা। লেবারের দাম আগে দাম ছিলো ৩০০টাকা,এখন ৭০০টাকা। আয় হয় ৩হাজার হলে খরচ ৫হাজার টাকা। এখন খামারে কমতে কমতে গাভী আছে ১৩টি।
খামারি সেলিম মিয়া বলেন,তার ৮টা দুধের গাভী ছিলো । এখন খাদ্যের দাম বাড়ায় বিক্রি করে ফেলেছেন। পানি এক কেজির দাম ৩০টাকা,দুধ এক কেজির দাম ৪০টাকা! কিভাবে খামার টিকবে?
সফিকুর রহমান বলেন. লস দিতে দিতে খামারিরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। আগে তার ১৮টা গরু ছিলো, এখন শুধু আছে একটা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশন কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল আজিজ বলেন, ২০০৬সাল থেকে ডেইরি ফার্ম শুরু করেন। ২০১৯ পর্যন্ত আমরা ভালো ব্যবসা করেন। ২০২০সালের করোনার ধাক্কায় পিছিয়ে যেতে থাকেন। ২০-২২সাল পর্যন্ত ব্যবসা মোটামুটি ভালো ছিলো। এরপর থেকে লস দিতে দিতে অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এই এলাকায় ২৫০টি খামার ছিলো, এখন তা ৬০টায় চলে এসেছে। সরকার দৃষ্টি না দিলে বাকি খামারিরাও হারিয়ে যাবেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার ডা. মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন,দানদার খাদ্যের দাম বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। খামরিরা দুধের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এছাড়া তারা কোন ভুর্তকীও পচ্ছেন না। খামারের বিদ্যুত বিল কৃষির আওতায় আনা এবং খাদ্যে ভুর্তকির বিষয়ে আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় চেষ্টা করে যাচ্ছেন । এছাড়া লোকসান কমাতে আমরা কৃষকদের ঘাস জাতীয় খাদ্যে নজর দিতে বলেছি।

 

inside post
আরো পড়ুন