কুমিল্লায় নয় শিক্ষার্থীর পেটে ২৪ হাজার ইয়াবা !

 

স্কচটেপে ইয়াবা পেচিয়ে সেগুলো গিলে ফেলে। পরে গন্তব্য পৌছে ইয়াবাগুলো পেট থেকে বের করে পাচার করে। এমনভাবে ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত ৯ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের পেট থেকে বের করা হয় ২৩ হাজার ৯৯০ পিস ইয়াবা। সোমবার গ্রেফতার করা শিক্ষাথীদের মঙ্গলবার বিককেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২ টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানী কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
মেজর সাকিব জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-১১ সোমবার রাতে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা আমতলী বিশ্বরোড এলাকায় চেকপোস্ট বসায়। এ সময় একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ওই ৯ শিক্ষার্থীকে আটক করে। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে এক্সরে করলে ওই ৯ শিক্ষার্থীর পেটের ভেতর অস্বাভাবিক বস্তু ধরা পড়ে।

পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শে বিশেষ পদ্ধতিতে ওই শিক্ষার্থীদের পেটের ভিতর থেকে ২৩ হাজার ৯৯০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার চরপাড়াতলা গ্রামের মোঃ তোফায়েল আহমেদ (১৯)। সে এইচএসসি বর্ষের শিক্ষার্থী। ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার দত্তের বাজার গ্রামের মোঃ মিনহাজুল ইসলাম রিফাত (২২), এইচএসসি পরীক্ষার্থী, পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী সদর থানার পশুরবুনিয়া গ্রামের মোঃ সোহেল (২১), এসএসসি পাশ করেছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার পিজাহাতি গ্রামের মোঃ মিতুল হাসান মাহফুজ (২২), সে ডিগ্রী পরীক্ষার্থী। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার চরপাড়াতলা গ্রামের মোঃ আশিকুল ইসলাম (১৯) এইচএসসি পাশ (পরশু রেজাল্ট দিয়েছে)। গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার আমবাগ(কোনাবাড়ী) গ্রামের মোঃ সিয়াম ইসলাম (১৯) এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাকশি (পাঠানবাড়ী) গ্রামের মোঃ রিশাত পাঠান (২২) ডিগ্রী পরীক্ষার্থী। ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার নয়াবাড়ী গ্রামের মোঃ গোলাপ (২২) ডিগ্রী পরীক্ষার্থীএবং ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাগশি গ্রামের মোঃ সেলিম (২২), সে এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

মাদক মামলা দায়ের শেষে গ্রেফতারকৃতদের কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মোহাম্মদ সহিদুর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত যুবকদের আদালতে নেয়া হলে বিচারক তাদের তাদের কারাগারে প্রেরণ করেন।

এদিকে, গ্রেফতারকৃত তরুণরা জানান, ময়মনসিংহের এক বড় ভাই মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। তিনি এই পদ্ধতি অনুসরন করেই সে টেকনাফ থেকে ইয়াবা বহন করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করত। তার গ্রুপের কয়েকজন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে সে এলাকার তরুণদের টার্গেট করে এবং প্রথমে আসামী সেলিমকে ম্যানেজ করার পর আসামী সেলিমের মাধ্যমে আসামী রিফাত, গোলাপ, রিশাদ, তোফায়েল ও আশিককে এ কাজে আসতে বাধ্য করে। অপরদিকে জনৈক মাদক ব্যবসায়ীর মহাখালীর বন্ধুর মাধ্যমে প্রথমে আসামী সোহেলকে এবং আসামী সোহেলের মাধ্যমে আসামী মিতুল ও সিয়ামকে মাদক পরিবহনের কাজে সম্পৃক্ত করা হয়। প্রথমে তাদেরকে গাঁজা ও ইয়াবা ফ্রি তে সরবরাহ করা হয় এবং মাদকের আসরে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে তাদেরকে ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত করে ফেলা হয়। পরবর্তীতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রলোভন এবং উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখানো হয়। অপরদিকে মাদকাসক্ত হয়ে এই তরুণেরা মাদকের টাকা সংগ্রহ করার জন্য জনৈক মাদক ব্যবসায়ীর দেয়া প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায়। গত জানুয়ারি ২০২১ এ প্রথম পেটের ভিতরে করে ইয়াবা বহন করে সফলভাবে তা ডেলিভারী দিতে সক্ষম হয় তারা। তবে তাদেরকে প্রাপ্ত টাকা না দিয়ে অর্ধেক টাকা ট্রাক্স হিসেবে রেখে দেয় জনৈক মাদক ব্যবসায়ীরা। তাই এই তরুণরা এই কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পূর্বের কাজের ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পুনরায় এই কাজ করতে তাদেরকে বাধ্য করা হয়।

গ্রেফতারকৃত তরুণরা আরো জানায়- মাদক কারবারীদের নির্দেশে তাদের আব্দুল্লাপুর এর একটি বাস কাউন্টারে যেতে বলা হয়। সেই কাউন্টারে আগে থেকেই উক্ত তরুণদের জন্য কক্সবাজার জেলার টেকনাফগামী বাসের টিকিট কেটে রাখা হয়। বাস টেকনাফ গিয়ে থামলে সেখানে থাকাজনৈক মাদক কারবারী তাদের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায়। হোটেলের যে কক্ষে তাদের রাখা হয় সে কক্ষটি সারাদিন বাইরে থেকে তালা মেরে রাখা হয়। সন্ধ্যা নাগাদ মাদক কারবারীর ২ থেকে তিনজন লোক হোটেলে এসে ওই তরুণদের সাথে দেখা করে এবং ইয়াবা পেটে বহন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এক্ষেত্রে প্রথমে কলার রস দিয়ে খেজুরের মতন ছোট ছোট পলিথিনে মোড়ানো ইয়াবার পোটলাগুলো পিচ্ছিল করে তারা গিলে ফেলে। এরপর নাইট কোচে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। পথে সার্বক্ষণিক মাদক কারবারীরা তাদেরকে নির্দেশনা দিতে থাকে। মাদক কারবারীদের নির্দেশনা অনুযায়ী ইয়াবাগুলো কখনো নরসিংদী,কখনো আশুলিয়া আবার কখনো মহাখালীতে নির্ধারিত স্পটে মাদক কারবারীদের নিকট পৌছে দিতে হয়। আটককৃতরা র‌্যাবকে আরো জানায় গত ১ বছরে অসংখ্যবার তারা এ প্রক্রিয়ায় টেকনাফ থেকে ঢাকায় ইয়াবা এনেছে। পারিবারিক দৈন্যদশা, বেকারত্ব, ও মানসিক অবসাদের কারণে মাদক কারবারীদের ব্লাকমেইলিংয়ের ফাঁদে পা দিতে হয়েছে তাদের বলেও জানান তারা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় রাজধানী ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ, সহ বিভিন্ন এলাকায় এমন আরো কয়েকটি তরুণ শিক্ষার্থীদের গ্রুপ এ পন্থায় মাদক কারবারীদের নির্দেশনায় ইয়াবা আনা নেয়া করে থাকেন। এই প্রক্রিয়ায় ইয়াবা বহন করায় যেকোনো সময় মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ঝুঁকি জেনেও টাকার লোভে মাদক ব্যবসায়ীদের এমন ফাঁদে পা দিচ্ছে বর্তমান সময়ের অনেক তরুণ।