ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ভবন-মিলনায়তন ভাঙ্গার দরপত্রে সমঝোতা
আরো পড়ুন:
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাািড়য়া
হেফাজতকাণ্ডে প্রথম দফায় আগুন-ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয় এবং ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন। দ্বিতীয় দফায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙ্গার দরপত্র নিয়ে সমঝোতার বিষয় নিয়ে আলোচনা সরব। সমঝোতার মাধ্যমে ক্রয়কৃত দরপত্র দাখিলে বাঁধা দেওয়ায় পৌরসভার আন্তত ২০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এর আগে পৌরসভা ভাঙচুরের ক্ষতি নিরূপণ নিয়ে সমালোচনা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুটি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ভেঙ্গে ফেলার দরপত্র আহবান করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা। ২৮টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র ক্রয় করে। ১৫ জুন দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল। নির্ধারিত সময়ের পর বাক্স খুললে মাত্র তিনটি দরপত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে ‘শামীম এন্টারপ্রাইজ’ নামীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ প্রায় ২৩ লাখ টাকা দর দিয়ে দরপত্র দাখিল করেন যা পৌরসভার নির্ধারিত প্রাক্কলন মূল্যের সামান্য বেশি। দরপত্র দাখিল করা ‘বাবু বিল্ডার্স’ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হন মাত্র পাঁচ লাখ টাকা দর দিয়ে। এর বাইরে দরপত্র জমা দেয়া ‘এম.এম বিল্ডার্স’ কোনো পে অর্ডার জমা দেননি। অবশ্য কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট ও ৫ ভাগ আয়কর জমা দিতে হবে। সে অনুসারে কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে ওই দুই ভবন কিনতে প্রায় ২৮ লাখ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। আর বাজার দাম তোলা হচ্ছে অন্তত ৪৩ লাখ টাকা।অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ ব্যক্তিদের কাজ দিতে অনেক কম দামে ওই ভবন বিক্রি করে দেয়ার সব ধরণের প্রক্রিয়া চলছে। বৃহস্পতিবার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ‘শামীম এন্টারপ্রাইজ’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ কাজ দেয়ায় প্রাথমকি সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, দরপত্র ক্রয় করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা নিজেরা বসে আলোচনা করে ঠিক করেছেন কোন প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে। সে সাথে কাজ না পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সুবিধা নেবে কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। এমনটি হলে পৌরসভা বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। একাধিক সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের সাবেক কয়েক নেতা মিলে কাজটি নিয়েছেন। তাঁদের উদ্যোগেই দরপত্র ক্রয় করা অন্যান্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠক হয়। সেখানে জানানো হয়, দরপত্র কেনা প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে ২৫/৩০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। এ অবস্থায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বাক্সে দরপত্র ফেলেন নি। নিয়ম অনুসারে দরপত্র আহবান যেন বাতিল না হয় সে কারণে সমঝোতার ভিত্তিতে তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাগজ বাক্সে ফেলা হয়। পৌরসভা একেটি দরপত্র বিক্রি করে চার হাজার টাকা করে। এদিকে সর্বোচ্চ দরদাতার পক্ষে ওই ভবন দু’টি বিক্রির প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। ভবন দু’টি ৪২ লাখ টাকা দাম উঠেছে। এর পেছনে রয়েছেন তাঁরা চাইছেন ৪৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে। গত ১৭ জুন বৃহস্পতিবার পৌর কর্তৃপক্ষের ডাকা সভার পরই তাঁরা বিক্রি চুড়ান্ত করার কথা।
পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী মো. কাউছার আহমেদ বলেন, ‘ইস্টিমেট (প্রাক্কলন) মূল্যের উপরে যে প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেবে নিয়ম অনুসারে সে প্রতিষ্ঠানই কাজ পাবে। সবকিছু নির্ভর করবে মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের উপর। বিক্রি হওয়া ২৮টি দরপত্রের মধ্যে পৌরসভাতে তিনটি দরপত্র জমা পড়েছে, মঙ্গলবার সবার সামনে সবগুলো খোলা হয়েছে।’
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নিকাশ চন্দ্র মিত্র জানান, ‘মূল্যায়ন কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। কমিটিতে থাকা জেলা প্রশাসন ও গনপূর্ত বিভাগের প্রতিনিধি, কাউন্সিলরসহ অন্যান্যরা এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।’
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে গত ২৬-২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। এতে ১৫ জন নিহত হয়। ২৮ মার্চ পৌরসভা ও তৎসংলগ্ন আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে ভাঙচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ করা হয়। পৌরসভার এক তালিকায় মিলনায়তন ভবনটির দাম ধরা হয়েছে ছয় কোটি টাকা।