ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে রেলসেবা চালু
অবশেষে ঘটলো প্রতীক্ষার অবসান। দীর্ঘ প্রায় আট মাস পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে চালু হলো রেলসেবা। বিগত ২৬-২৮ মার্চ হেফাজতকাণ্ডে ধ্বংসপ্রাপ্ত স্টেশনটির সংস্কার কাজ শেষে শনিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন কমলাপুর স্টেশন থেকে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে থেকে স্টেশনটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। দুপুর ১ টা ২০ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে ঢাকা-সিলেটগামী আন্ত:নগর জয়ন্তীকা এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতির মধ্যদিয়ে স্টেশনটির পুর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়। এতে লাঘব হলো জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজত ইসলামের কর্মী-সমর্থকেরা। আন্দোলনের প্রথম দিনে বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি রেলওয়ে স্টেশনটিতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্টেশন মাস্টারের কক্ষ, টিকিট কাউন্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সিগন্যালিং সিস্টেম পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলায় ২৭ মার্চ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে সকল ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রাবিরতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েন এখানকার রেলযাত্রীরা। এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী সাতটি আন্ত:নগর, সাতটি মেইল ও লোকাল ট্রেন যাত্রাবিরতি করতো স্টেশনটিতে। এসব ট্রেনে প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুই হাজারেরও বেশী যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতেন। মাসে সরকারের রাজস্ব আয় হতো অর্ধ কোটি টাকা। হেফাজতকাণ্ডে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টারের রুম, অপারেটিং রুম, ভিআইপি রুম, প্রধান বুকিং সহকারীর রুম, টিকিট কাউন্টার, প্যানেল বোর্ড, সিগনালিং যন্ত্রপাতি, পয়েন্টের সিগন্যাল বক্সসহ লেভেল ক্রসিং গেটসহ অন্যান্য স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঘটনার পরদিন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে সব আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়।
দীর্ঘ প্রায় আট মাস পর আবার চালু হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন। শনিবার সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের মাধ্যমে যাত্রাবিরতির উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। ট্রেনের যাত্রীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রেলমন্ত্রী। এসময় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে রেলমন্ত্রী বলেন, যারা স্বাধীনতার বিরোধী, যারা বাংলাদেশ চায় না তারাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছিলো। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া চলমান আছে। পূর্বে ট্রেনগুলো যেভাবে যাত্রাবিরতি ছিলো, আজ থেকে একইভাবে যাত্রাবিরতি করবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে ১৪ টি আন্ত:নগর, আটটি মেইল এবং চারটি কমিউটার ট্রেনের যাত্রাবিরতি রয়েছে।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.সেলিম রেজা, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন চত্বরে এক সূধী সমাবেশের আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম.পি রেলস্টেশন সংস্কারে প্রধানমন্ত্রীর অনন্য ভূমিকার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি স্টেশন ভাংচুরের সাথে জড়িতদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানান। বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী মনির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, প্রেস ক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি,সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আল আমিনুল হক, শহর আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা যুবলীগ সভাপতি শাহানুর ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত শোভন, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান আরিফ প্রমুখ।
আরো পড়ুন:
উল্লেখ্য, হেফাজতকাণ্ডে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের সিগন্যাল সিস্টেম ধ্বংস হওয়ায় দীর্ঘ প্রায় আট মাস স্টেশনটি বন্ধ থাকে। এরপর রেল মন্ত্রণালয়ের দৃঢ় হস্তক্ষেপে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশ থেকে সিগন্যালিং সিস্টেম এনে পুন:সংযোগের মাধ্যমে পুনরায় স্টেশনের কার্যক্রম চালু হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সোয়েব মিয়া জানান, শনিবার উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনটি আবারো ডি ক্যাটাগরি থেকে বি ক্যাটাগরিতে রূপান্তরিত হয়েছে।