উপজেলার হাসপাতালে বাড়ছে নরমাল ডেলিভারি

 

চান্দিনা  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

মাসুমুর রহমান মাসুদ, চান্দিনা।।

কুমিল্লার চান্দিনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দিন দিন রোগীদের আস্থা অর্জন করে চলেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অন্তঃবিভাগ, বহিঃবিভাগ সেবা, প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা, ডিজিটাল এক্সরে, ইসিজি এমনকি আল্ট্রাসনোগ্রাম পর্যন্ত হচ্ছে এই হাসপাতালে। গাইনি, এনেসথেসিয়া, মেডিসিন এবং সার্জারি বিভাগে চারজন কনসালটেন্ট সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালটিতে বর্তমানে বিনামূল্যে গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারির পাশাপাশি সিজরিয়ান সেকশন (সি-সেকশন) করা হচ্ছে। এছাড়া বিনামূল্যে মাইনর ও মেজর সার্জারিও হচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। অন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে রোগীরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ৩০টিরও বেশি ঔষধ পাচ্ছেন। এর মধ্যে ৫টি মূল্যবান এন্টিবায়োটিক ঔষধও রয়েছে।

সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লোকবলসহ বিভিন্ন সংকট থাকলেও গত মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা ব্যাপক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। এখানে ৯শত ৫১ জন রোগীকে বিনামূল্যে মাইনর ও মেজর সার্জারি করা হয়েছে। অন্তঃবিভাগে ২ হাজার, ৭শত ২১জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। বহিঃবিভাগে গত তিন মাসে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ গ্রহণ করেছেন ৩৬হাজার ৮শত ৮০জন রোগী।

এদিকে একই সময়ে এখানে ১শত ৬১টি জন গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করা হয়েছে। পাশাপাশি ৩৪ টি সিজরিয়ান সেকশন (সি-সেকশন) করা হয়েছে।

২০১৯ সালে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু অদ্যাবধি এখানে ৫০ শয্যার লোকবল নিয়োগ দেয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করার প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে এখানে ২জন মেডিকেল অফিসার, ২জন নার্স, ৫জন মাঠকর্মী এবং অন্যান্য পদে আরও ১৬ জন লোকবল সংকট রয়েছে। এছাড়া টিকাদান বিভাগে গত কয়েকমাস ধরে পেন্টাভ্যালেন্ট ও নিউমোকোকাল কনজুগেট ভ্যাকসিন (পিসিভি) এর সংকট রয়েছে। এত কিছুর পরেও এখানে আশানুরূপ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন রোগীরা।

রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে আগত রোগীদের বেশিরভাগই দরিদ্র, দুঃস্থ, অসহায় ও নিম্ন মধ্যবিত্ত। তাদের অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনা করে যথা সম্ভব টাকা খরচ থেকে বাঁচিয়ে রেখে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন এখানকার চিকিৎসকরা। হাসপাতালের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান চান্দিনার বাসিন্দা হওয়ায় আগত রোগীরা অত্যন্ত ভালো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।

চলতি বছরের মার্চ মাসে এই হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগে ১ হাজার ৯৫টি, এপ্রিল মাসে ৯শত ৪০টি, মে মাসে ৮শত ৬৭টি ডিজিটাল এক্স-রে করা হয়। একই সময়ে এখানে ১ হাজার ৪২জন রোগীকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়েছে।

উপজেলার হারং গ্রামের রোগী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে আসি। এখানে ভালো ডাক্তাররা আছেন। চিকিৎসা সেবা পাই। এখান থেকে আমি ডায়াবেটিসের জন্য বিনামূল্যে ইন্স্যুলিনও নিয়ে যাই।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে হাসপাতালটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কেবিন, বিনামূল্যে ঔষধসহ যাবতীয় চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজেবেলিটিস (এনডিডি) এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।

টিকাদান বিভাগে এবছরের জানুয়ারি মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত ৫ হাজার, ১শত ৫০ জন শিশুকে ১০টি রোগের ৭টি ভ্যাকসিন সম্পন্ন করা হয়।

অপরদিকে অসংক্রামক রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এর রোগীদের জন্য এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনডিসি কর্নার রয়েছে। এখানে এসব রোগের চিকিৎসা সেবা, বিনামূল্যে ঔষধ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে প্রতিদিন।

চিকিৎসা সেবা প্রদানের এই গুরু দায়িত্বটি পালন করছেন ৪ জন কনসালটেন্ট, আবাসিক মেডিকেল অফিসার সহ ১১ জন মেডিকেল অফিসার, ৩২ জন নার্স, ২জন ল্যাব টেকনেশিয়ান, ১জন এক্স-রে টেকনেশিয়ান, ১জন গাড়ি চালক সহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। হাসপাতালটিতে বর্তমানে ১টি আইসিইউ সুবিধা সম্বলিত এ্যাম্বুলেন্সসহ মোট ২টি এ্যাম্বুলেন্স সচল রয়েছে। রোগীদের চিকিৎসা সেবায় সাধারণ শয্যার পাশাপাশি ৫টি কেবিন রয়েছে।

এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান বলেন, ‘অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় এখন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্তঃবিভাগ, বহিঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম এর বাড়ি চান্দিনা উপজেলায় হওয়ায় এই হাসপাতালটি সবার সুনজরে রয়েছে। এখানে প্রশাসনিক যে কোন সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান হয়। খুব শীঘ্রই ১০০ শয্যায় উন্নীত হবে বলে আমি আশাবাদী। তখন আরও বৃহৎ পরিসরে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’