অচল দেহে রোজগারের সংগ্রাম

ছয় বছর ছিলেন বিদেশের হাসপাতালে
বাবা-মা হারান অল্প বয়সে
অর্ধমৃত অবস্থায় বিয়ে
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
ইমরান হোসেন। বয়স ৫১ বছর। বাসা কুমিল্লা নগরীর তেলিকোনা গোবিন্দপুকুরপাড়ে। মাথার অংশ ছাড়া শরীরের প্রায় পুরোটা অচল। হাত কিছুটা নাড়াতে পারেন, তবে তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। ৪বছর বয়সে মা ও ১৬ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। ২০১০সালে কাজের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া যান। সেখানে কাজ করতে গিয়ে ঘাড়ে ব্যথা পান। অপারেশন করাতে গিয়ে পুরো শরীর অচল হয়ে যায়। ৬মাস আইসিইউতে ছিলেন। ৬বছর ছিলেন বিভিন্ন হাসপাতালে। সেই অর্ধমৃত ইমরান ২০১৭সালে দেশে ফিরে আসেন। কোন সঞ্চয় নেই। পুঁজি নেই। তবে তিনি ভেঙে পড়েননি। নেমে পড়েন অনলাইনে টিকেটের ব্যবসায়। একসময় তাও বন্ধ হয়ে যায়। এখন অনলাইনে কুমিল্লার খাদি ও বাটিক কাপড় বিক্রি করেন। তার জীবন সংগ্রামের গল্প এলাকাবাসীর মুখে মুখে।
ইমরান হোসেনের বাসা নগরীর তেলিকোনা গোবিন্দপুকুরপাড়ে গিয়ে দেখা যায়,তিনি হুইল চেয়ারে বসা। সামনে একটি ট্রাইপডে মোবাইল ফোন লাগানো। তিনি অনলাইনে লাইভে ক্রেতাদের বাটিকের কাপড় দেখাচ্ছেন। লাইভ শেষে ক্রেতারা ফোন দিতে থাকেন। কেউ বাসায় এসে কাপড় নিতে চান। কেউ কুরিয়ারে পাঠাতে বলেন। তিনি কুরিয়ারের লোকজনকে খবর দিলে তারা কাপড় নিয়ে যান।
ইমরান হোসেন বলেন, দক্ষিণ কুরিয়ায় তিনি কাজ করতেন ইয়াংজুসি শহরে। ঘাড়ে ব্যথা পাওয়ার পর তনদুচন শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ৬বছর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে টাকা বকেয়ার জন্য হাসপাতাল থেকে রোগী নামিয়ে দেয় না, তবে কম খরচের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। ৪ কোটি টাকা বিল আসে। সেই কষ্টের জীবন তিনি ভুলতে পারেন না। বাড়িতে তার দেহটা নিয়ে আসতে পারবেন কিনা সেই নিশ্চয়তা ছিলো না। দূতাবাস,বিদেশি কমিউনিটির সহযোগিতায় দেশে ফিরেন। তার শরীরের অবস্থা এখন থেকেও আরো বেশি খারাপ ছিলো।
তিনি জানান, ইলেকট্রিক হুইল চেয়ারে দোকানে গিয়ে কাপড় কিনে আনেন। এছাড়া বাসার বাজারও তিনি করে আনেন। পণ্য বিক্রি ও ধর্মপালন নিয়ে তার সময় কাটে। তার স্ত্রী রুমি আক্তার তাকে সহযোগিতা করেন। তিনি স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে বলেন,বিদেশ যাওয়ার আগে আমাদের জানাশোনা ছিলো। বিদেশে অসুস্থ হয়ে পড়ি। অনেকটা জীবন মৃত। তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে জানান। স্ত্রীর বক্তব্য-বিয়ের পরও তো তিনি অসুস্থ হতে পারতেন। ২০১৬সালে ফোনে তাদের বিয়ে হয়। ২০১৭সালে দেশে আসেন। তাদের সন্তান নেই। তিনি তার স্ত্রীকে ত্যাগী ও মহিয়সী নারী বলেও অভিহিত করেন।
ইমরান হোসেন বলেন, তার ব্যবসা বাড়াতে একজন সহযোগী বা পার্টনার প্রয়োজন। প্রয়োজনে তিনি পুঁজি দিবেন। পার্টনারকে পণ্য কিনে আনায় ও অনলাইনে পণ্যের প্রচারণায় সহযোগিতা করতে হবে। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পরিশ্রম করে সম্মানজনক রোজগার করতে চান বলেও জানান।
নগরীর আলোকিত বজ্রপুর সংগঠনের সংগঠক রফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন,ইমরানকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি খুবই সংগ্রামী মানুষ। তার জীবনের গল্প সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে। তার আত্মমর্যাদা বোধ প্রখর। কারো কাছে হাত না পেতে তার রোজগারের চেষ্টা সমাজের অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।

inside post
আরো পড়ুন