অটোরিকশা নয় রিকশা,সাড়ে ৬ঘন্টা পর ভোট স্থগিত!

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া।।
টানা সাড়ে ছয় ঘন্টা নাগাদ চলে ভোট গ্রহণ। নির্বাচন শেষ হওয়ার মাত্র দেড় ঘন্টা আগে প্রজ্ঞাপন জারি করেন (শুধু চেয়ারম্যান পদে) নির্বাচন স্থগিত করলো নির্বাচন। এমনটি হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে। ব্যালট পেপারে ‘অটোরিকশা’র স্থলে ‘রিকশা’র জন্য ভোট শুরুর সাড়ে ছ’ঘন্টা পর নির্বাচন স্থগিত করা নিয়ে প্রার্থী, ভোটারসহ স্থানীয় জনমনে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২৮ এপ্রিল) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে স্থানীয় প্রশাসন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়ে আইনানুগ সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন। এরই ফলশ্রুতিতে রোববার সকাল আটটা থেকে সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলমান প্রচণ্ড তাপদাহ সত্ত্বেও ভোটাররা উৎসবমুখরতায় মেতে ওঠেন। ভোট গ্রহণ শুরু থেকে টানা সাড়ে ছয় ঘন্টা নাগাদ সময়ে ১১ টি কেন্দ্রের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি। ভোট গ্রহণের আট ঘন্টা সময় সমাপ্ত হতে আর বাকি মাত্র দেড় ঘন্টা। এমনি সময়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কুটি ইউনিয়ন পরিষদের শুধুমাত্র চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন স্থগিত করেন। এই নিয়ে তুমুল মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান পদের একজন প্রার্থী ইউসুফ আহম্মেদ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে বেলা দেড়টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কসবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের সময় তাকে ‘অটোরিকশা’ প্রতীক দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচনের ব্যালেট পেপারে মুদ্রিত হয়েছে ‘রিকশা’ প্রতীক। রিটার্নিং কর্মকর্তা ওই আবেদনটি নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করেন। তৎপ্রেক্ষিতে এক ঘন্টা পর আড়াইটার দিকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ সচিব মো. আতিয়ার রহমানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কুটি ইউনিয়ন পরিষদের শুধুমাত্র চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন স্থগিত করেছেন। তবে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদের নির্বাচন স্থগিত করা হয়নি। ওই দুই পদের নির্বাচন যথারিতি চলবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘প্রাপ্ত তথ্যমতে ব্যালেট পেপারে ভুল প্রতীক মুদ্রণ হওয়ায় চলমান কসবার কুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন স্থগিত করা হলো।’ বেলা আড়াইটার দিকে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অমিত কুমার দাস চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন স্থগিত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেন।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ইউসুফ আহম্মেদ বলেন, ‘আমি নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছি ‘অটোরিকশা’। নির্বাচনকালী পুরো সময় আমি প্রচারণাও চালিয়েছি ‘অটোরিকশা’। কিন্তু ব্যালট পেপারে আমার প্রতীক মুদ্রিত হয়েছে ‘রিকশা’! আমার কর্মী-সমর্থকেরা ভোট দিতে গিয়ে ব্যালট পেপারে প্রতীক খুঁজে পায়নি।তাদের মাধ্যমেই আমি বিষয়টি জানতে পেরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।’
আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও কুটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘এটি একটি বড় ভুল। রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে একটি আর ছাপিয়েছে অন্যটি। রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাদের সাথে একটি বৈঠকও করেনি। তাদের ভুলের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। নির্বাচনে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ছিলাম।’ চেয়ারম্যান পদের আরেক প্রার্থী ফারুক ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের রিটানিং কর্মকর্তার ভুলের দায় আমরা প্রার্থীরা নিবনা। এই দায় রিটার্নিং কর্মকর্তাকেই নিতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা অনেক শ্রম দিযেছি। প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে ভোটাররা উপস্থিত হয়েছে। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ছিলাম। আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি করছি, যে পরিমাণ ভোট হয়েছে তা গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে গণনা করতে হবে।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ইউপি নির্বাচন রিটার্নিং কর্মকর্তা অমিত কুমার দাস বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর প্রত্যেক প্রার্থীর নির্ধারিত প্রতীক নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে পাঠানো হয়। ব্যালট পেপার মুদ্রণের সময় ভুলক্রমে অটোরিকশার স্থলে প্যাডেল রিকশা ছাপা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের চোখে পড়েনি। দুপুর দেড়টার দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউসুফ আহম্মেদ লিখিতভাবে বিষয়টি জানায়। তখনই নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করলে বেলা আড়াইটার দিকে নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন স্থগিত করেন। কিন্তু সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য পদের নির্বাচন চলতে থাকবে।’
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ শাহারিয়ার মুক্তার বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদের এক প্রার্থীর প্রতীক মুদ্রণে ভুল হওয়ায় শুধুমাত্র চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। অন্য সকল পদের নির্বাচন চলবে।’