আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন; বিদ্যুতের লোডশেডিং আর জনবল সংকটে ভোগান্তিতে যাত্রীরা

 

 

মো.ফজলে রাব্বি, আখাউড়া

বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং আর জনবল সংকটের ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সীমান্ত পথে দু’দেশের ভ্রমণ পিপাসু পাসপোর্টধারী যাত্রীদের চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের। করোনার কারণে দু’বছর বন্ধ থাকার পর ভারতে চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া ও ভ্রমণ পিপাসুরা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পারাপার হচ্ছেন। ফলে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং আর জনবল সংকটের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই দেশের পাসর্পোট ধারী যাত্রীরা।

আখাউড়া উপজেলার কালিকাপুর ও ভবানীপুর মৌজার ৩ একর ১০ শতাংশ জায়গার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন। সেখানে বিদ্যমান ভবনটি ১৯৫৩ সালে নির্মাণ করা। বর্তমানে চেকপোষ্টে একটি কার্যালয় ও ব্যারাক ভবন, একটি এসআই কোয়ার্টার ও একটি রান্নাঘর আছে। ১৯৬৫-৬৬ সালে এই ভবনে অভিবাসন কাজ শুরু

ইমিগ্রেশন সূত্রে জানাগেছে, আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনে ৩ জন এ.এস.আই থাকার কথা থাকলেও আছে ২ জন। ৭ জন পুলিশ সদস্য বরাদ্দ থাকলেও আছে মাত্র ২ জন। একটি এসআই কোয়ার্টার থাকলেও তা বহু আগেই পরিত্যাক্ত হয়ে আছে। মূল ভবনের একটি অংশে পুলিশ সদস্যরা ব্যারাক করে থাকছেন, সেটিও অনেক সংকৃর্ণ। মূল ভবনটি বেশ পুরাতন হওয়ায় ছাদের পলেস্তার খসে পড়ে যাত্রীদের মাথায়। অপর দিকে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং এবং সার্ভার জটিলতার ফলে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানাগেছে, প্রতিদিন আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে প্রায় ১ থেকে দেড় হাজার যাত্রী ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করেন। এই যাত্রী সংখ্যার বিপরীতে বর্তমান আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবনটি একেবারেই ছোট এবং জরাজীর্ণ। বারবার সংস্কার করে কোনো রকমে টিকে আছে ভবনটি। টানা বৃষ্টি হলে হাঁটুপানি জমে ইমিগ্রেশন ভবনের সামনে। তখন যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বর্তমান ভবনটিতে যাত্রীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত বসার জায়গা এবং টয়লেট ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। ফলে জনাকীর্ণ পুরাতন ভবনে এবং খোলা আকাশের নিচে প্রচন্ড রোদ কিংবা বৃষ্টির মধ্যেও যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

অপর দিকে আখাউড়া ইমিগ্রেশনে নির্মাণাধীন নতুন ভবনের নকশা নিয়ে আপত্তি তুলেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বিএসএফের বাঁধার মুখে গত সাড়ে ৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ভবনের কাজ। বিষয়টি নিয়ে এখনও বিএসএফ কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় ইমিগ্রেশনের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে চার দফায় বিএসএফের আপত্তির কারণে কাজ বন্ধ হলো।

চট্রগ্রাম থেকে আসা ভারতগামী যাত্রী বিমল ঘোষ(৫৫) জানান, সকাল ১০ টায় এসেছি এখনো ১১টায়ও লাইনেই আছি। এত গরমের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ বোধ করছি। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুতিক পাখা না থাকার কারণে ইমিগ্রেশন ভিতর পছন্ড গরমে তাপদাহ সৃষ্টি হয়েছে।

আখাউড়া কাস্টমস সূত্রে জানাগেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৫২২ জন যাত্রী। এ অর্থ বছরে যাত্রীদেরকাছ থেকে ভ্রমনকর হিসেবে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ কোটি ২৭ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা।

২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ৪ হাজার ৬০৯ জন যাত্রী। ভ্রমনকর হিসেবে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩ লক্ষ ৪ হাজার ৫শ টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে আখাউড়া দিয়ে ভারতে গেছেন ৫৬ হাজার ৪৬৫ জন যাত্রী। রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ কোটি ৮২ লক্ষ ৩২ হাজার ৫শ টাকা।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ স্বপন চন্দ্র দাস জানান, প্রতিদিন আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে হাজারেরও বেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়াত করেন। কিন্তু বর্তমান দুই কক্ষের একতলা ইমিগ্রেশন ভবনটি যাত্রীর তুলনায় বেশ ছোট এবং জরাজীর্ণ। বর্তমানে দুইটি ডেক্সে যাত্রীদের সেবা দিচ্ছি। দশটি ডেক্স করার জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুতের লোডশেডিং এর ফলে জটিলতা দেখা দেয়। এতে করে যাত্রীদের সেবা দিতে গিয়ে আমাদেরও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।