আন্দোলনে চোখ গেছে যুবকের,বাহারের বিরুদ্ধে মামলা
প্রতিনিধি।।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে কুমিল্লায় গুলিতে এক যুকের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ওই যুবকের পুরো শরীরে লেগেছে দেড় শতাধিক ছররা গুলি। এ ঘটনায় হত্যা চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে প্রধান আসামি করে আদালতে একটি মামলা হয়েছে। শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী চৌধুরী মুহাম্মদ আহাদ।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৯ নম্বর আমলি আদালতে মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা নামে এক বিএনপি নেতা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এফআইআর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় ৬৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার কুমিল্লা-৬ (সিটি করপোরেশন, আদর্শ সদর উপজেলা ও সেনানিবাস এলাকা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি।
গুলিতে বাম চোখ হারানো ওই যুবকের নাম মো.সাগর হোসেন (২১)। তিনি জেলার দেবিদ্বার উপজেলার জাফরাবাদ গ্রামের আবদুল মমিনের ছেলে। মামলার বাদী গোলাম মোস্তফা কুমিল্লা নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি এবং কুমিল্লা কোটবাড়ি এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ী। গুলিবিদ্ধ সাগর হোসেনকে নিজ দোকানের কর্মচারী হিসেবে মামলায় উল্লেখ করেছেন মোস্তফা। এ মামলায় তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই বাবলুকে। এছাড়া অপর আসামিদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। যাদের অধিকাংশই আ ক ম বাহাউদ্দীনের অনুসারী।
মামলায় বলা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা কোটবাড়ি বিশ্বরোডের পূর্ব পাশে কুমিল্লা শহরমুখী সড়কে বিক্ষোভ মিছিল চলছিল। সেখানে অন্যান্য ছাত্র-জনতার মতো সাগরও যোগ দেয়। প্রধান আসামির (বাহার) নির্দেশে মামলার আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ বৈষম্যরিরোধী নিরীহ ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। ২নম্বর আসামি তাঁর হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে। এতে গুলি সাগরের বাম চোখে, মুখে ও মাথার বিভিন্ন অংশে বিদ্ধ হয়। ৩ নম্বর আসামি তাহার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সাগরকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর বুক লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এভাবে অন্যান্য আসামিরা সাগরসহ আন্দোলনরতদের ওপর গুলিবর্ষণসহ হামলা চালায়।
শুক্রবার মামলার বাদী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, সাগর আমার দোকানে প্রায় দশ বছর ধরে কাজ করে। সেদিন আসামিরা তাঁকেসহ আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে এভাবে আগ্নেয়াস্ত্রসহ হামলা চালিয়েছিল। আমরা হামলাকারীদের বিচার চাই। সাগরের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ছেলেটার পুরো শরীর ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা। বলতে গেলে ছেলেটার জীবনই শেষ।
বাদীপক্ষের আইনজীবী চৌধুরী মুহাম্মদ আহাদ বলেন, দীর্ঘ আধা ঘণ্টার বেশি সময় শুনানির পর আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সাতদিনের মধ্যে এফআইআর করতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।