আব্বা আম্মার কাছে খোলা চিঠি

॥তারিকা রাব্বী॥
আসসালামু আলাইকুম, আমার বিশ্বাস ভালো আছেন আপনারা। আব্বা, আজকে আপনার প্রথম সন্তান আমোদ-এর বয়স ৬৮ হলো, সে এখন ৬৯ বছরে পথ চলা শুরু করলো। ১৯৮০ সালে তখনকার নজরুল পরিষদের মাঠে আমোদ-এর ২৫ বছরের জন্মদিনটা আপনি করেছিলেন জাকজমক করে। বেশ মনে আছে আমার।
তারপর বড়পা দেশে গিয়ে ১৯৯৪ সালে কুমিল্লা জিমনিশিয়ামে করলো ৪০ বছরের বর্ষপূর্তি। আপনি তখন প্রথম স্ট্রোককে পরাজিত করে মাত্র উঠেছেন। আর এমনিতে প্রতি বছর আমোদ আঙিনায় আমোদ-এর বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান, ওই দিনটা ছিল আমাদের কাছে তৃতীয় একটা ঈদের দিনের মতো। কত পরিকল্পনা আপনার, সবাইকে সাথে নিয়ে (যদিও ছোট বলে আমি সব সময় দুধ ভাতই থাকতাম, তাল পাতার সিপাই’র মতো শুধু পাশে বসে থাকতাম) কাকে কাকে দাওয়াত করা হবে, কারা কারা বক্তৃতা করবেন, চা নাশতা কি দেয়া হবে।
ঢাকার আত্মীয়রা আসতেন আর কুমিল্লার সবাই তো আছেই বিশেষ করে নানু ২/১ বার উনার হাতে বানানো নাস্তাও পরিবেশন করেছিলেন। আর আম্মা? আহারে আম্মার ব্যস্ততা। এখন অবাক লাগে কি করে একজন মানুষ মেশিনের মতো কাজ করতে পারে, আমার আম্মা ছিলেন সেই মেশিন। আমার সব চেয়ে ভালো লাগতো সেই বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের দিন আমাদের বাসার সামনের অনেক টুকু রাস্তা জুড়ে থাকতো অতিথিদের গাড়ি, তার উপর ডিসি, এসপিদের গাড়ির সাথে থাকতো পুলিশ প্রহরী। কথায় বলে Memories are timeless treasures of the heart.   আমার জীবনের মূল্যবান এবং মধুর কিছু স্মৃতি এসব।
আমরা ভালো আছি আব্বা, খুব যে ভালো আছি তা বললে ভুল হবে। তবে আপনার শেখানো জীবন শিক্ষা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আপনিই বলতেন, হেরে যাওয়ার জন্য কারো জন্ম হয় না। আর আম্মা তোমাকে অনেক মিস করি, বুকের ভিতর কামড়ে উঠে ওই কষ্ট। ওয়াসিফের স্ট্রোকের পর প্রথম যেদিন ওকে নিয়ে যাই তোমার কবর জেয়ারত করতে, বাচ্চাটা আমার অনেক কেঁদেছিলো তোমার পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে।
তবে তোমরা দুইজনই খুব গর্বিত হবে একটা কথা জেনে যে, তোমরা ছেলেমেয়েরা আজো এক সাথে হাসে একসাথে কাঁদে। জানি না কয়জন পিতামাতা এমন ভাগ্যবান হয় যে তাদের সব সন্তানদের বন্ধন এমন শক্তিশালী হয়। আল্লাহ পাকের কাছে শুকরিয়া করার ভাষা থাকে না।

আজকের আমোদ-এর সাথে আম্মার কিছুটা পরিচয় থাকলেও আব্বা একেবারেই অপরিচিত। আব্বা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, আপনার কাগজের নৌকা এখন ইন্টারনেটে প্রকাশিত হচ্ছে, শুধু তাই না যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও আমোদ তার স্বকীয়তা নিয়ে বিচরণ করছে। কুমিল্লার কিছু তরুণ ছেলেপুলে কি অদম্য উৎসাহ আর উদ্দীপনায় এই কাজ করে যাচ্ছে। যদিও ভাইয়া প্রবাসে থেকে, থাকছে প্রধান কান্ডারী হয়ে। আজকে আমি ওই সব তরুণ সাংবাদিকদের আমাদের সবার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 

সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ওরা কেউ আপনাকে দেখেনি, মহিউদ্দিন মোল্লা এই তরুণ দলের মধ্যে সবার বড়। আর ছোটগুলো তো আমাদের বাচ্চাদের সমান প্রায়। ভাবতেই ভালো লাগে আব্বা- আপনার অবর্তমানে এই তরুণ সংবাদিকগুলো ভাইয়ার মধ্যে আপনার নীতি নিষ্ঠার স্বাদ পেয়ে আপনার আমোদ-এর জন্য কাজ করে যাচ্ছে, আমোদ’কে বাঁচিয়ে রেখেছে।
মহিউদ্দিন মোল্লা, মাহফুজ নান্টু, তৈয়বুর রহমান সোহেল, ইলিয়াছ হোসাইন, মোহাম্মদ শরীফ, আবু সুফিয়ান রাসেল, আবদুল্লাহ আল মারুফ ওদের সবাইকে আজ আপনাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি ওদের কর্মকাণ্ডে এতোই আপ্লুত হই যে, শুধু মনে হয় আব্বা আপনি যদি দেখতেন ওদের কত যে ভালোবাসতেন, কত কাজ শিখাতেন আবার বকাও দিতেন।

আর আম্মা তুমি হয়তো অল্প বিস্তর পেয়েছো ওদের। মূলতঃ আব্বা আম্মা, এই তরুণ সাংবাদিকদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্যই আপনাদের কাছে আমার এই খোলা চিঠি।
আব্বা আম্মা, ভাবতেই কেমন লাগছে আজ। আমোদ ৬৯ বছরে পথ চলা শুরু করলো। জানি না ৭০ বছরে কে থাকবো কে থাকবো না, তবে কথা দিচ্ছি, আপনাদের দেয়া শিক্ষা আর মানবিকতা কাজে লাগিয়ে যতদিন হায়াত আছে এগিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ। আমরা সবাই একদিন আবার মিলিত হবো ইনশাল্লাহ।
অনেক দোয়া, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা আপনাদের দুইজনের জন্য।
লেখক: প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী ও উপদেষ্টা সম্পাদক শামসুন নাহার রাব্বীর ছোট মেয়ে।