কসবার কুটি বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পুড়লো ৩৫ দোকান

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
তখন রাতের আঁধার। আচমকা বাজারে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। আগুণের তীব্রতায় একে একে পুড়তে থাকে তেলের মিল, চালের গুদাম, লাইব্রেরিসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি অগ্নি নির্বাপক ইউনিট স্থানীয় জনতার সহায়তায় আড়াই ঘন্টা প্রানান্তকর চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও ততোক্ষণে পুড়ে ছাই হয় অন্তত ৩৫ টি দোকান। আগুণ লাগার সুস্পষ্ট কারণ না জানায় কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। ভয়াবহ এই ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার প্রাচীনতম ব্যবসাকেন্দ্র কুটি বাজারের।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে উপজেলার কুটি ইউনিয়নের কুটি বাজারে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের সূদ্রপাত ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের পাঁচটি ইউনিট প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও তেলের মিল, চালের গুদাম, লাইব্রেরিসহ ৩৫ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এলাকাবাসী, বাজারের দোকান মালিকগণ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে মার্কেটের একটি দোকানে হঠাৎ করেই আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই পার্শ্ববর্তী দোকানগুলোয় ছড়ায় আগুনের লেলিহান শিখা। একে একে ৩৫টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কসবা উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন অফিসার আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ খালিদ জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে কুটি বাজারে আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালানো হয়। আগুনের তীব্রতা বেশী হওয়ায় কসবার পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আখাউড়া থেকে অগ্নি নির্বাপকে মোট পাঁচটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। রাত সাড়ে ১০ টা থেকে শুরু করে প্রায় তিনটা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে তাৎক্ষনিক স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।চালের গুদাম, লাইব্রেরি ও তেলের মিলসহ বিভিন্ন পণ্যের ৩৫টি দোকান পুড়ে গেছে। কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাও এখন বলা যাচ্ছে না। ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের ফলে অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবাসয়ীরা ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ‘জনতা অয়েল মিল’র মালিক বাবু মুন্সী বলেন, ‘মার্কেটটির বেশিরভাগ দোকানই পাইকারি দোকানদার। প্রত্যেকের দোকানে প্রচুর পরিমাণে মালামাল ছিলো, সবই পুড়ে গেছে। আমার মিলের একটি মেশিনের দাম দুই লক্ষাধিক টাকা। আগুনে ৭/৮টি মেশিন পুড়ে গেছে। প্রচুর টাকার মালামাল মজুত ছিলো। আগুনে আমার প্রায় ৩৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হলুদ-মরিচ-আদা-পেঁয়াজের পাইকারী ব্যবসায়ী মুছা মিয়া বলেন, ‘আগুনে আমার প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুনে পুড়ে মার্কেটের ৩৫টি দোকানের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ উল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আগুনের প্রকৃত কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ণয় করতে সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) আহবায়ক এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে তিন কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’