কালাডুমুর নদের জন্য তার ২০ বছরের সংগ্রাম
অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কালাডুমুর নদ। সম্প্রতি নদটির পুনঃখনন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। খনন শেষে হাসবে পঞ্চাশ হাজার বিঘা কৃষি জমি। উৎপন্ন হবে ১২ লক্ষ ৫০ হাজার মণ বোরো ধান। ১১ ডিসেম্বর গৌরীপুর বাজার সংলগ্ন লক্ষীপুর ব্রিজ পয়েন্টে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার মাধ্যমে খনন কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধন করেন দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) মোহাম্মদ আলী।
এই নদের জন্য ২০ বছর কাজ করছেন স্থানীয় শিক্ষক ও পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত। নদটি পুনঃখননের জন্য তিনি মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, কোদাল মিছিল, প্রতিকী অনশন, নদী মেলা ও নদী অলিম্পিয়াড করেন।
উল্লেখ্য-গোমতী নদীর শাখা কালাডুমুর নদ। দাউদকান্দির গৌরীপুর থেকে উৎপত্তি হয়ে গৌরীপুর, জিংলাতলি, ইলিয়টগঞ্জ উত্তর এবং দক্ষিণ ইউনিয়ন অতিক্রম করে পার্শ্ববর্তী মুরাদনগর, চান্দিনা, দেবিদ্বার এবং কচুয়া উপজেলায় প্রবাহিত হয়েছে। কালাডুমুর নদ আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার বিঘা জমির প্রায় ১২ লক্ষ ৫০ হাজার মণ বোরো ধান উৎপাদনে সেচের পানির একমাত্র উৎস। এছাড়া খরা মৌসুমে প্লাবন ভূমির মৎস্য প্রকল্পগুলো পানি সরবরাহ করার পাশাপাশি নৌ-পথের নাব্যতা সৃষ্টি, প্রাকৃতিক মাছের অভয়ারণ্য, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ সুরক্ষায় নদটি পুনঃখনন অপরিহার্য। কালাডুমুর নদের পেটে বালি পলি জমেছে। নদের চেহারা ঢাকা পড়েছে কচুরিপানায়। শুকনো মৌসুমে নদটি শুকিয়ে যায়। বোরো ধান আবাদে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
নদটির দরদী মতিন সৈকত বাংলায় মাস্টার্স করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এলাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক। স্ত্রী,এক ছেলে,এক মেয়েসহ কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর গ্রামের বাড়িতে বাস করেন। শিক্ষকতার পরে মাছ চাষ,ফসল ফলানো,পাখির পরিচর্যা,বিষমুক্ত ফসলের আন্দোলনে সময় কাটে তার।
এছাড়া ২০ বছর ধরে তিনি ২০০ বিঘা জমিতে স্বল্প মূল্যে বোরো ধানের জমিতে সেচ দিচ্ছেন। অন্যত্র প্রতি বিঘা জমিতে সেচ দিতে দুই হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। সেখানে বিঘা প্রতি তিনি দুইশ’ টাকা করে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এস এম মিজান বলেন,মতিন সৈকতের নদী,ফসল ও প্রকৃতি নিয়ে কাজকে কেউ কেউ পাগলামি মনে করেন। তবে এমন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো লোকদের কারণে সমাজটা এখনও সুন্দর আছে। মতিন সৈকতের চেষ্টার কারণে কালাডুমুর নদ তার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।
টুপটাপ সম্পাদক ছড়াকার ওমর ফারুক নাজমুল বলেন,নদী আর কৃষির প্রতি তার দরদ দীর্ঘদিনের। প্রকৃতি যোদ্ধা মতিন সৈকতের চেষ্টায় কালাডুমুর খনন হচ্ছে। তার এইসব শুভ উদ্যোগ বেঁচে থাকুক।
কালাডুমুর নদ পুনঃখনন শুরু হওয়ার বিষয়ে মতিন সৈকত বলেন, কালাডুমুর পুনঃখনন ছিল আমার জীবনের অন্যতম সেরা লক্ষ্য। কৃষি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি জনকল্যাণে বহুমুখী উপকারে আসবে।
স্থানীয় দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, কালাডুমুর নদ পুনঃখনন মতিন সৈকতের আন্দোলনের ফসল। মাননীয় এমপি মহোদয় কালাডুমুর নদ পুনঃখননের জন্য জাতীয় সংসদে অনেক বার আবেদন করে গৌরীপুর থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার পুনঃখননের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
নদটি পুন:খনন শেষ এলে এলাকার কৃষকরা উপকৃত হবে।