চোখ জুড়ানো সুন্দরবনে– মাহফুজ নান্টু

 

ভোর ৫টায় ঘুম চোখে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। পাশে তাইয়্যবা শুয়ে আছে। আমার মেয়ে। তার নিষ্পাপ মুখটায় তাকিয়ে আছি। ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। কত দিন ঘুরতে যাই না। আমার প্রথম বিমান চড়ার কথা । সুন্দরবন যাবো। মনের মধ্যে একটা উত্তেজনা কাজ করছে। ফ্রেশ হয়ে রওনা হলাম। পথিমধ্যে মহিউদ্দিন মোল্লা ভাইয়ের ফোন। কতদূর এলাম। সকাল ৭ টা। কান্দিরপাড় থেকে সিএনজি অটো রিকশা যোগে জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাম। রয়েল বাসে ঢাকা। পথে আরামসে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। মোল্লা ভাই বাসে ঘুমাতে পারেন না। আমি যে কোন গাড়িতে ঘুমাতে পারি। বাসে আমার ঘুম দেখে মোল্লা ভাইয়ের নিশ্চয়ই খারাপ লাগছে!

 

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকায় একসাথে হলাম। দাউদকান্দির চেনা মানুষ পরিবেশ বন্ধু পাখিপ্রেমী মতিন সৈকত, ভয়েস শিল্পী এসএম মিজান ভাই, তার সাথে সাংবাদিক শরিফ প্রধান, কাজী সোহেল ও মনির হোসেন। তাদের দেয়া ঠিকানামতে আমরা একসাথে হলাম। নাস্তা সেরে বিমান বন্দরেরর উদ্দেশ্য রওনা করলাম। বেলা পৌনে ১ টা। বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। এবার বিমানে উঠার পালা। ভেতরে বেশ উত্তেজনা কাজ করছে। প্রথম বিমান ভ্রমণ। বোডিং পাস নিয়ে আমরা ভেতরে গেলাম। বিমানবন্দরের ভেতরে বাস অপেক্ষা করছে। বাস দিয়ে আমরা বিমানের কাছে পৌঁছালাম। কত বিমান দাঁড়িয়ে আছে। ছোট বিমান বড় বিমান। বেশ কিছু হেলিকপ্টার। আমরা সারিবদ্ধভাবে বিমানে উঠলাম। ক্যাপ্টেন জানালেন কিছুক্ষণের মধ্যে বিমান উড্ডয়ন করবে। দুটো ঝাঁকি দিয়ে রানওয়ে ছেড়ে বিমান যখন আকাশে ভাসতে লাগলো আমার হার্টবিট বাড়তে লাগলো। মিনিট দুয়েক পরে জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখি ঢাকা শহরের বড় দালানগুলো ছোট বাদামের খোসার মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভয়ে পৌষের শীতেও আমার গায়ে ঘাম দিলো। দোয়া দুরুদ পড়তে ছিলাম। হঠাৎ করে মনে পড়লো ২০১৮ সালের কথা। ওই বছর ইউএস বাংলা বিমান নেপালে অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। অন্তত ৫০ জন যাত্রী সে সময় মারা গিয়েছিলো। আমাদের বহনকারী বিমানটিও ইউএস বাংলার। এ কথা মনে হওয়ার পর দোয়া দুরুদের স্পিড আরো বাড়িয়ে দিলাম। মনে পড়ছিলো তাইয়্যেবার কথা। কি ভীষণ বির্মষ হয়ে পড়েছিলাম তা বুঝানোর ভাষা নেই। বিমানের ভেতর সুদর্শন দুই যুবক তারা আমাদেরকে নির্দেশনা দিলেন। বিমানে আমাদের কি করণীয়। তারপর তারা জানালেন করোনার কারণে তারা আমাদেরকে খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করতে পারবে না। শুধু পানি পরিবেশন করলো। এদিকে বিমানে প্রথম ভ্রমণ। গলা শুকিয়ে আসছিলো। ঢক ঢক করে পানি পান করলাম। ঠিক ৪৫ মিনিট পর যশোর বিমানবন্দরে ইউএস বাংলা অবতরণ করলো। জোরে একটা শ^াস নিলাম। মনে হয় এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম! এবার ফটোগ্রাফির পালা।


বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে যশোর বাস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্য যাত্রা। পথে চোখে পড়লো হলুদ সরিষা খেত, খেজুর গাছ। পেটের রাজ্যে ক্ষুধার আক্রমণ। বাস্ট্যান্ডে নেমে রেস্টেুরেন্টে খেতে বসেছি। শুরু হলো শরীফ ও মিজান ভাইয়ের খুনসুটি। মজার কথার ছলে খাবার শেষ করলাম। একটু দূরে মসজিদ। সবাই অযু বানিয়ে নামাজ আদায় কললাম। শরীর মনজুড়ে একটা শান্তি পরশ বয়ে গেলো। আবারও বাসে চড়ে বসলাম। বিরতিহীন বাস। তবে যাত্রী হাত তুললেই থেমে যায়। সন্ধ্যায় বাস থেকে নেমে পড়লাম। এবার মোংলা যেতে হবে। ছোট বাস আছে। বিকল্প তেমন বাহন নেই। দীর্ঘ দু’ঘন্টা ধুলা আর ভাঙ্গা রাস্তা পার হয়ে মোংলা বন্দরে পৌঁছালাম। তারপর ট্রলারে পশুর নদী পার হলাম। আমাদের সাথে যুক্ত হলেন দাউদকান্দির ওমর ফারুক নাজমুল ভাই। তিনি এক সময় সাংবাদিকতা করতেন। পরে ব্যবসা শুরু করেন। এখন ছড়া লেখেন,টপটাপ নামে ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন।

বন্দরের একটি হোটেলে উঠে সবাই বিশ্রাম নিলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্ট প্রবেশ করলাম। কোরাল মাছ আর সাদা ভাত দিয়ে রাতে খাবার সেরে সবাই হোটেলে অবস্থান নেই। মোল্লা ভাইয়ের সাথে অন্যরা গল্পে যোগ দিলো। মোল্লা ভাইয়ের সাথে নিউজ নিয়ে যত কথা হয়,তারচেয়ে বেশী কথা হয় সংসার জীবন নিয়ে। তিনি পরমার্শ দেন শান্ত থাকার। গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টের পাইনি।

কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে তুললেন মতিন সৈকত ভাই। কুয়াশা ঢাকা ভোর শীতে ঠকঠক করছিলাম। আর এমন শীতের সকালে গোছল করে তৈরি হলাম। ব্যাগ গুছিয়ে হোটেল থেকে বের হলাম নদীর ঘাটের দিকে। সুসজ্জিত একটি ট্রলার আগে থেকে রেডি ছিলো। রাতভর জেলেরা মাছ ধরেছে। ঘাটে এসে চোখে পড়লো জেলেদের ব্যস্ততা। নানান প্রকার মাছ। আমরা আটজন চড়ে বসলাম। পশুর নদী দিয়ে ঢেউ তুলে চলতে লাগলো আমাদের বহনকারী ট্রলার। কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উকি দিলো পূব আকাশে। এ সময় ট্রলারে অগ্রভাগে জাতীয় পতাকা টানিয়ে দিলেন। বাতাসে পতাকাটা পতপত করে উড়ছিলো। এ এক অন্য রকম অনুভূতি। নদীর বুকে একটি ¯িœগ্ধ সকাল। ট্রলার এগিয়ে চললো। এবার মাঝ নদীতে পরোটা ভাজি ও ডিম দিয়ে নাস্তার পর্ব শেষ হলো। ট্রলারে ছবি তোলা,গল্প করার মাঝে কখন যে দেড় ঘন্টা পার হলো খেয়াল করতে পারিনি। নদীর মাঝে দেখলাম বাতিঘর। কোথায় ডুবো চর আছে জাহাজ চলাচলের সময় বাতিঘরগুলো তারই নির্দেশনা দেয়।

আমরা পৌঁছালাম সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে। ঘাটে পা দিয়েই আমি ও মোল্লা ভাই ডাবের পানি পান করলাম। আহ! কি মিষ্টি পানি। নোনা পানির রাজ্য ডাবের মিষ্টি পানি ব্যবসা করেন দু’জন নারী। তাদের ব্যবহারে ছিলো আপন মানুষের মতো। দিনের বেশীর ভাগ সময় তাদের নৌকায় কাটে। ঘাটে আমাদেরকে স্বাগত জানালো সুন্দর বনের কিছু বান্দর (বানর)। বনে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে। তবে এত সবের মাঝেও শরীফ ভাই ও মিজান ভাইয়ের মাঝে ছবি তোলা নিয়ে যথেষ্ট মধুর ঝগড়া হচ্ছিলো। কে কার চেয়ে ভালো ছবি তুলতে পারে তা নিয়ে তাদের প্রতিযোগিতা। নিজেদের ছবি তোলা নিয়ে মিজান ও শরীফ ভাইয়ের প্রতিযোগিতা ভ্রমণ দলটির সবার আলোচনার বিষয় হয়ে উঠলো। এবার সুন্দরবন ঘুরে দেখার পালা। একজন গানম্যান আমাদের সাথে দেয়া হলো। বনে মামাদের নাকি উৎপাত বেড়েছে। তিনি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মানে বাঘকে আদর করে মামা ডাকেন। তাতে নাকি বাঘ তাদের উপর আক্রমণ করে না।

বনে প্রবেশের সময় আমাদের গানম্যান বললেন, ঘুরার সময় যেন তার ছবি তুলে দেয়া হয়। কথাটি শুনেই শরীফ ভাই টিপ্পনি কাটলেন। এতো আদিগিল্লার জ¦ালায় বাঁচি না, নতুন আদিগিল্লার আগমন! কথাটা শুনে মোল্লা ভাই হো হো করে হেসে উঠলেন। আমরাও মজা পেলাম। বনের শুরুতেই মিঠা পানির পুকুর। চারকোনার পুকুরটিতে লাল শাপলা নজরে পড়লো। কত জায়গায় ঘুরি, তবে একটি পুকুরে এক সাথে এত লাল শাপলা আগে কখনো দেখিনি।

বনের মাঝে ইট পাথর আর কাঠ দিয়ে চলাচলের জন্য সেতুর মত রাস্তা তৈরি করা আছে। এই রাস্তা দিযে বনের সৌন্দর্য্য অবলোকন করে দর্শনার্থীরা। বনের ভেতর সুন্দরী গাছ। কাদাপনিতে হরিণের পায়ে ছাপ ছিলো স্পষ্ট। বন্দুক হাতে গানম্যান সামনে হাঁটছেন। আমরা পেছনে তাকে অনুসরণ করছি। মোবাইলে লাইভে আছেন মিজান ভাই। চলাচলের রাস্তাটি নাজুক। এ নিয়ে লাইভে কথা বলছিলেন মিজান ভাই। কথার মাঝেই হঠাৎ কাঠের তক্তা ভেঙ্গে পড়ে যান মিজান ভাই। তবে ব্যাথা পেলেও লাইভ বন্ধ করেননি। ঠিক ওই সময়ে লাইভে যোগ দিয়ে মতিন সৈকত ভাই রাস্তাটি সংস্কারের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।

হাড়বাড়িয়া থেকে ফেরার পথে সুন্দরবনের মধু কিনলেন নাজমুল ভাই। আমরা চেখে দেখলাম। আহ! কি স্বাদ। সুযোগ পেয়ে শরীফ ভাই দু’বার মধু খেলেন। এ নিয়েও মিজান ও শরীফ ভাইয়ের মাঝে চললো কথা কাটাকাটি। আমাদের মজাই লাগছিলো। মধুর স্বাদ পরখ করতে পেরে মনে মনে নাজমুল ভাইকে ধন্যবাদ দিলাম।

এবারপালা করমজল। ট্রলারে চড়ে বসলাম। এক ঘন্টা পর করমজলে এলো ট্রলার। ঘাটে এসে চোখে পড়লো হাজারো দর্শনার্থী। আমরা এগিয়ে গেলাম। বনের মধ্যে হরিণ ও কুমিরের সান্নিধ্য পেলাম। ঘাস কিনে হরিণকে খাওয়ানোর পর বন ঘুরে দেখার পালা। করমজলের একটি পুকুরপাড়ে নজরে পড়লো একটি বিশাল কুমির। হাজারো দর্শনার্থী কুমিরটিকে ঘিরে ছবি তুললেও কুমিরটি ছিলো নির্বিকার। হয়তো জমিদার টাইপ কুমির,নড়তে মন চায় না!
করমজলে ওয়াচ টাওয়ার আছে। বাঘ দেখার আশায় ওয়াচ টাওয়ারে উঠলাম। গাছ ছাড়া কিছুই নজরে পড়লো না। শরীফ ভাই বলে উঠলেন, বাঘ কোথায় ইদুরতো চোখে পড়লোনা। আবারো সবাই হেসে উঠলাম।

এবার ফেরার পালা। যথারীতি আবারো ডাবের পানি পান করলাম। পশুর নদী হয়ে যখন মোংলা বন্দরে দিকে যাচ্ছিলাম তখন একটি যৌন পল্লী নজরে পড়লো। খদ্দেরের আশায় নদীর তীরে বসে আছেন নারীরা। পশুর নদীতে জোয়ার ভাটা হয়। ওদের জীবনেও জোয়ার ভাটা আছে কি না জানি না। নদীর ট্রলার নৌকায় তাদের চেয়ে থাকায় কেমন যেন এক করুণ আর্তনাদ ফুঠে উঠেছিলো। জীবন যেখানে যেমন।

বেলা আড়াইটা। আমরা মোংলায় পৌঁছালাম। এবার যাবো বাগেরহাট। পথে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো সবাই। আমাদের বহন করা গাড়িটি দ্রæত চলতে লাগলো। পাকা রাস্তা কাঁচা রাস্তা আর ধুলাবালি পেরিয়ে পৌঁছালাম বাগেরহাট। লাল ইটের নান্দনিক ডিজাইনের ষাটগুম্বুজ মসজিদটি চোখের সামনে। টিকেট কেটে ভেতরে প্রবেশ করলাম। বইয়ে দেখা সেই ষাটগুম্বুজ মসজিদ। হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। অযু বানিয়ে সবাই নামাজ আদায় করলো। কি শান্তি! মসজিদের ভেতরের ডিজাইনে সবাই মুগ্ধ হলো। এবার মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার পালা। মসজিদ প্রাঙ্গণে সবুজ ঘাস। যেন মখমলের কার্পেট বিছানো। কত রকম পোজে কত ছবি ক্যামেরা বন্দি করা হলো। মসজিদত প্রাঙ্গণে খান জাহান আলী (রঃ) এর সঙ্গীদের কবর চোখে পড়লো। ষাটগুম্বুজ মসজিদ থেকে বেরিয়ে পড়লাম। তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আমরা খান জাহান আলীর মাজারে উপস্থিত হই। মাজার জেয়ারত করি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের বাগেরহাট প্রতিনিধি আহসানুল করিম ভাই স্বস্ত্রীক আমাদের সাথে দেখা করলেন। আমাদের গল্প চলতে লাগলো। মাজারের পাশে ঘোড়া দীঘি। বিশাল দীঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে সবাই ছবি তুললো। দিঘিতে কুমির আছে। বিকাল হওয়ায় আমাদের চোখে পড়েনি।

এবার ফেরার পালা। আমরা আবারো খুলনার উদ্দেশ্য রওনা হলাম। সন্ধ্যা ৭ টায় আমাদের কাফেলা এসে থামলো রুপসা নদীরপাড়ে। চা খেয়ে সবাই একটু সতেজ হয়ে নিলো। ট্রলারে করে রুপসা নদী পার হলো সবাই। ঘাটে প্রচুর ভীড়। রাতে আব্বাসের হোটেলে খাসির গোশত দিয়ে ভাত খাওযা হবে এমন কথা বলছিলেন আমাদের ভ্রমণ দলের অধিনায়ক মিজান ভাই। খুলনার বিখ্যাত আব্বাসের হোটেল। চুইয়ের ঝাল দিয়ে রান্না করা খাসির গোশত খেতে নাকি অনেক মজা। আব্বাসের হোটেলে আমরা সবাই প্রবেশ করলাম। হোটেলের দেয়ালে লেখা পাতের গোশত ফেরত নেয়া হয় না। কি সাংঘাতিক! সাদা ভাত আর খাশির গোশত পরিবেশন করা হলো। তেল বেশি দিয়ে রান্না করা। খাওয়ার শেষ সময়ে ওয়েটার এসে বললো আপনারা তো চুই খাচ্ছেন না। এবার সবাই চুইয়ে মনযোগ দিলো। মুখে দিতেই ঝালে অস্থির আমি। কেউ কেউ উপভোগ করছিলো চুই ঝাল। চুইয়ের ঝালে আমি অসহায়। এই চুইয়ের ঝাল খেতে নাকি ভীড়বাট্টা লেগে থাকে। তেল বেশির কারণে পেটের পীড়ায় পড়লেন মোল্লা ভাই। ওষুধ খেয়ে এ যাত্রায় রক্ষা। খুলনা রেলওয়ে স্টেশন।

 

আমরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি। খবর পেয়ে খুলনার ফটো সাংবাদিক বাপ্পি খান ভাই চলে আসলেন। কুশল গল্পের মাঝে ট্রেন চলে আসলো। আমাদের ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে বাপ্পি খান বিদায় নিলেন। ট্রেন চলতে লাগলো। আমরা ব্যাগ গুছিয়ে আসন গ্রহণ করলাম। তবে ট্রেনের জানালার ফাঁকফোকর দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া আসছিলো। ঠিককমতে ঘুম আসছিলো না। ট্রেনের কামরায় দুটো শিশু অনবরত কান্না করছিলো। শিশুটির বাবা-মা কোন ভাবেই শিশু দুটির কান্না থামাতে পারছিলেন না। হঠাৎ মিজান ভাই বলে উঠলেন, তারা মনে হয় শিশু পাচারকারী। ঘুম ঘুম চোখে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। এক ভ্রমণে বিমান,ট্রেন, বাস, রেল, অটোরিক্সা, সিএনজি, নৌকা, ট্রলার সবই চড়া হলো। এক অন্য রকম অনুভূতি। দীর্ঘ আট ঘন্টার ভ্রমণ শেষে ঢাকায় পৌঁছালো সুন্দরবন এক্সপ্রেস। নাস্তা সেরে নিলো সবাই। এবার বিদায়ের পালা। আমি ও মোল্লা ভাই আবার রয়েল রাসে চড়ে বসলাম। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কুমিল্লায়। এই ঝটিকা ভ্রমণ মনে থাকবে অনেক দিন।

লেখক:কুমিল্লা প্রতিনিধি, নিউজ বাংলা টোয়েন্টি ফোর।