কুমিল্লার ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরছে আবদুছ ছালাম বেগের শবনম আর্ট হল
স্টাফ রিপোর্টার।।
কুমিল্লার ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরছে আবদুছ ছালাম বেগের শবনম আর্ট হল। দেশের অন্যতম বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাজে মুগ্ধ সবাই। কুমিল্লা নগরীর মোড়ে মোড়ে তৈরি করা হয়েছে নানা শিল্পকর্ম। রাজগঞ্জ, ফৌজদারি, পুলিশ লাইন, কান্দিরপাড় ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্য কল্পে শিল্পের ছোঁয়া। যা কুমিল্লাকে নতুন প্রজন্মের নিকট নতুন ভাবে উপস্থাপন করছে।
নগরী ঘুরে দেখা যায়, পুলিশ লাইন মোড়ের রয়েছে স্বাধীনতার স্মৃতি বহন করা একটি শিল্পকর্ম। যার একদিকে রয়েছে থ্রি নট থ্রি রাইফেল, অন্য দিকে বাংলাদেশের মানচিত্র। যা এসএস মেটালে তৈরি। নিচের অংশে রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উল্লাস, সাত বীরশ্রেষ্ট, পাক বাহিনীর ক্ষমতা হস্তান্তর, শহীদ পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিন আহমেদের প্রতিকৃতি ।
ফৌজদারী মোড়ে আরবি হরফে পবিত্র কালিমা খচিত ফলকটির উচ্চতা ভূমি থেকে ১৬ ফিট, ব্যাস ১০ ফিট। তিনটি স্তম্ভের মাঝখানে আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম আরবি হরফের সাথে বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ লিখা আছে। সর্বোচ্চে আল্লাহু লিখা এবং এর নিচের অংশে রয়েছে ছয়টি আরবি ক্যালিওগ্রাফি ট্যারা কাটা সমৃদ্ধ পানির ঝর্ণা রয়েছে। ঈদগা মোড়ে রয়েছে কুমিল্লার কৃতী সন্তান ও শহীদদের প্রতিকৃতি। পানির ঝর্ণা বেষ্টিত এ শিল্পকর্মে রয়েছে ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, বীরমুক্তিযুদ্ধা রফিকুল ইসলাম, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী শচীন দেন বর্মণ, নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী, কুমিল্লা বার্ড প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খান, শহীদ পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিন আহমেদের প্রতিকৃতি। সবোর্চ্চে কসকস ফুল শোভা বাড়িয়েছে এ শিল্পকর্মের। রাজগঞ্জ মোড়ে জাতীয় ফুল শাপলা ফুল তৈরি করা হয়েছে। যা দেখে শিশু কিশোররা যেমন জাতীয় বিষয়ের সাথে পরিচয় হচ্ছে।
সব বয়সীদের মাঝে দেশ প্রেম ও ভালোবাসা জাগ্রত হচ্ছে। নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে রয়েছে বিশ্বের বুকে কুমিল্লা এমন বার্তাবহ স্থাপনা। যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতি। কুমিল্লার ঐহিত্যবাহী খাদি, ধর্মসাগড় দিঘি, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সমাধি, শাহসুজা মসজিদ, বাখরাবাদ গ্যাস অফিস, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, শালবন বিহার, গোমতী নদী, রাণীর কুটির, শতবর্ষী ভিক্টোরিয়া কলেজ, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, নগর ভবনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রতিকৃতি। গোল আকৃতির এ স্থাপনার চারদিকে ঝর্ণা। মাঝখানে রয়েছে বিশ্বের মানচিত্র। মানচিত্রের চার দিকে গ্রহ উপগ্রহ।
বিশ্বের মানচিত্রের সর্বোচ্চ চূড়ায় রয়েছে কুমিল্লার মানচিত্র। একপাশে হারমোনিয়ামের আকৃতি সচীন দেব বর্মনের কুমিল্লা এ কথা জানান দেয়। শিল্পী মোহাম্মদ শাহীন জানান, কুমিল্লা নগরীর বেশীর ভাগ শিল্পকর্ম আমার হাতে তৈরি। প্রতিটি কাজেই নানা রকম বার্তা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটা কাজ ব্যতিক্রম ও নান্দনিক। বিশেষ করে আল্লাহর ৯৯ নামের চত্বর বাংলাদেশে এটি ই প্রথম। উপরের প্রতিটি কাজ শবনম আর্ট হলের আবদুছ ছালাম বেগের ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে।
নগরীর ২০নং ওয়ার্ড বাসিন্দা মো. কাউছার বলেন, গত এক দশকে এসব শিল্পকর্ম করা হয়েছে। যা দেখে আমরা মুদ্ধ। রাতে আলোয় ঝলমলে খুবই চমৎকার দেখায়। তবে প্রতিটি কর্মের আলাদা আলাদা নাম দিলে আরও ভালো হতো। এমন স্থাপনা আরও করা যেতে পারে। কাজী নজরুল ইসলাম, মহেশচন্দ্র, ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মূরাল তৈরি করা যেতে পারে।
শবনম আর্ট হলের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুছ ছালাম বেগ বলেন,একদশকের বেশী সময় শবনম আর্ট হল নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করছে। শুধু কুমিল্লা নয় দেশেও দেশের বাহিরেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শুধু বিজ্ঞাপন নয়, জনসচেতনতা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা প্রচারেও কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী যখন যে সিদ্ধান্ত দেন, আমরা তা প্রচারে বদ্ধপরিকর।
প্রসঙ্গ, আবদুছ ছালাম বেগ সাবেক ছাত্রলীগ ও ডুবলীগের নন্দিত নেতা ও বর্তমান কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য। তিনি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের সোনাইসার গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বেগবাড়ীর কৃতী সন্তান।