কুমিল্লার পুকুর ধানী জমি নদীতে হলুদ উৎসব

মহিউদ্দিন মোল্লা ।।
কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার পুকুর, ধানী জমি ও নদীর চরে বিনাচাষে সরিষার আবাদ হয়েছে। এতে চারিদিকে বসেছে হলুদের উসব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, এবার কুমিল্লায় দ্বিগুণের বেশি জমিতে সরিষার চাষ হচ্ছে।

মাঠে গিয়ে দেখা যায়,বুড়িচং উপজেলার পরিহলপাড়া। মাঠের মাঝে পুকুর। হুমায়ুন কবির তার পুকুরের পানি নিষ্কাশন করে সেখানে সরিষার আবাদ করেছেন। সকালের কুয়াশার মাঝেও হাসছে সরিষা। ফুলে ফুলে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করছে। দুই চারটা ছোট পাখিও খাবার সংগ্রহ করতে এসেছে। কিচির মিচির শব্দ তুলে উড়ে বেড়াচ্ছে।

হুমায়ুন কবির বলেন, এসময় মাছ তেমন বৃদ্ধি পায় না। তাই পুকুরে সরিষা চাষ করেছি। ভালো ফসল হয়েছে। প্রথমে অনেক হাসাহাসি করেছে। এখন দেখতে আসে। জমির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে।
হরিপুর এলাকার মো. ইউসুফ বলেন, রোপা আমন কাটার ১০দিন আগে ধানী জমিতে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দিয়েছি। ধান কাটার পর সরিষা বেড়ে উঠেছে।
পূর্ণমতি এলাকার কৃষক তারা মিয়া বলেন,ধান কাটার পর দেখি জমি চাষের ট্রাক্টর আনার ব্যবস্থা নেই। পাশের জমিতে ফসল। কৃষি অফিস জানিয়েছে চাষ ছাড়া সরিষা করা যাবে।
এতবারপুর গ্রামের গোমতীর চরের কৃষক সামছুল হক বলেন, আমরা মাঝে দীর্ঘদিন সরিষা চাষ করিনি। এবার চরের অনেক জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।

বুড়িচং উপজেলার মনিপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. জিয়াউদ্দিন মজুমদার, রামপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সুলতানা ইয়াসমিন ও পূর্ণমতি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার বিলকিস আক্তার বলেন,এই এলাকায় আগে তেমন সরিষার চাষ হতো না। এবার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করায় কোথাও দ্বিগুণ কোথাও তিনগুণ সরিষার আবাদ হয়েছে।
বুড়িচং উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় বলেন, বিনাচাষে পতিত জমি,পুকুর, ধানী জমিতে ও নদীর চরে সরিষা চাষ করা হয়েছে। অন্য ফসল থাকায় অনেকে সরিষা চাষের ইচ্ছে থাকলেও তা করতে পারতো না। এবার তাদের বিনা চাষের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করায় আগ্রহী হয়েছে। আমরা ৮০০জন কৃষকের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করি। নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের ছিলো। বাস্তবায়ন করেছেন আমাদের কৃষক ও উপ-সহকারী কৃষি অফিসাররা। গত বছর ৬২হেক্টরের স্থলে এবার ১৬৮হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, সরিষার চাষ নিয়ে কৃষকদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। গতবার জেলার ১৭উপজেলার ৮হাজার ৭৬৫হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এবার তা দাঁড়িয়েছে ১৫হাজার ৫৫০ হেক্টরে। আমাদের কৃষক ও মাঠ কর্মকর্তাদের আন্তরিক কার্যক্রম ভালো ফল দিয়েছে। এতে ভোজ্য তেলের সংকট কমবে। আমাদের অর্থনীতিতে নতুনমাত্রা যোগ হবে।