কুমিল্লার বালুমহাল থেকে ৮০শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায়

তৈয়বুর রহমান সোহেল।।
কুমিল্লার বালুমহালগুলো থেকে দুই বছরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ রাজস্ব আদায় করা হয়। যা পূর্বের অর্থ বছর থেকে ৮০শতাংশ বেশি। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে বালুমহালগুলো ইজারা দিয়ে এ রাজস্ব আদায় করে কুমিল্লার জেলা প্রশাসন।
কুমিল্লার গোমতী, মেঘনা ,পাগলী ও কাঁকড়ী নদীতে মোট ১৩টি বালুমহাল রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি বালুমহাল গোমতী নদীর, যার ছয়টি অবস্থিত কুমিল্লা আদর্শ সদরে। বাকিটি বুড়িচংয়ে। মেঘনা নদীর কুমিল্লা অংশে আছে চারটি বালুমহাল। পাগলী নদীর বালুমহালটি বুড়িচংয়ে এবং কাঁকড়ী নদীর বালুমহালটি চৌদ্দগ্রামে অবস্থিত।
সূত্রমতে,২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৩টি বালুমহালের মধ্যে আটটির ইজারা হয়, পাঁচটি বালুমহালের ইজারা হয়নি। ওই বছর এ ইজারাকৃত আটটি বালুমহালে রাজস্ব আদায় হয় এক কোটি ৬৬ লাখ ৬৩ হাজার ৭০০ টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ইজারা হয় ১০টি বালুমহালের, ইজারা হয়নি তিনটির। এ বছর তিন কোটি ১৩লাখ ৩১হাজার ১৩৫টাকা ইজারা আদায় করা হয়। মোট ইজারা আদায় হয় চার কোটি ৭৯ লাখ ৯৪ হাজার ৮৩৫ টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের তুলনায় এক কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার ৪৩৫ টাকা বেশি ইজারা আদায় হয়। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ৮০.০২শতাংশ বেশি। বালুমহালগুলো থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে আদায়কৃত রাজস্ব অন্যান্য যেকোনো বছরের চেয়ে অনেক বেশি।
এ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ইজারা আদায় করা হয়েছে মেঘনার সেনারচর ও সাপমারা বালুমহাল থেকে। এ বালুমহাল থেকে ইজারা আদায় করা হয়েছে এক কোটি ২১হাজার টাকা। গত অর্থবছরে এ বালুমহাল থেকে ইজারা আদায় হয়েছিল ৩০ লাখ টাকা। নলচর মেঘনা নদী ভরাটিয়া বালুমহালে গেলো অর্থবছরে ৭২লাখ এবং এ অর্থবছরে ৮০লাখ টাকা ইজারা আদায় হয়েছে। মেঘনার অপর দুই বালুমহাল, চালিভাঙ্গা বালুমহাল ও মূল মেঘনা নদী বালুমহাল দুই অর্থবছরেই অবিক্রিত থাকে। গোমতী নদী বালুমহাল প্রথম খণ্ডে গত অর্থবছরে ১৯ লাখ ৫২ হাজার ৫০০, এ অর্থবছর ৪৭ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮৭, দ্বিতীয় খণ্ডে যথাক্রমে ৯ লাখ ৬২ হাজার ও ২৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮৭, তৃতীয় খ-ে যথাক্রমে ২১ লাখ ৫১ হাজার ও ২৭ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮৭,চতুর্থ খ-ের গত অর্থ বছর ইজারা না হলেও এ বছর ছয় লাখ ৬০ হাজার, পঞ্চম খ-ে যথাক্রমে পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ ও ৭ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮৭, ষষ্ঠ খণ্ডে যথাক্রমে ছয় লাখ পাঁচ হাজার ৭০০ ও ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮৭ টাকা ইজারা আদায় হয়েছে। গোমতী নদীর এ ছয় খণ্ডের সবগুলোই আদর্শ সদর উপজেলায় অবস্থিত। গোমতী নদী বালুমহালের সপ্তম খ- বুড়িচংয়ে অবস্থিত। দুই অর্থবছরে এ বালুমহাল অবিক্রিত থাকে। বুড়িচংয়ে অবস্থিত পাগলী নদীর একমাত্র বালুমহালটি থেকে এ অর্থবছর ৫০ হাজার ২০০ টাকা ইজারা আদায় হয়েছে, গত অর্থবছর তা অবিক্রিত থাকে। চৌদ্দগ্রামের কাঁকড়ী নদীর একমাত্র বালুমহাল থেকে যথাক্রমে এক লাখ ৯৫ হাজার ও দুই লাখ এক হাজার টাকা ইজারা আদায় করা হয়েছে।
এবছর ইজারা হওয়া বালুমহালগুলোতে ইজারাদার, ঠিকাদার ও শ্রমিকসহ যুক্ত আছে ১২ হাজার লোকবল। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দৈনিক ৮০০ টাকা। কর্মদক্ষতা অনুসারে কোন কোন শ্রমিক দিনে ১২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান। শ্রমিকদের বেশিরভাগের বাড়ি হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব এবং কুমিল্লার দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলায়।
সরেজমিন কুমিল্লার গোমতী নদীর জালুয়াপাড়া, টিক্কারচর ও পালপাড়া বালুমহালে গিয়ে দেখা যায়, নির্দিষ্ট সীমানায় ড্রেজার মেশিনে লতানো পাইপ দ্বারা নদীর ভূ-গর্ভ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এরপর মেশিনে ছেঁকে পানি ও মাটি অপসারণ করে শুধুমাত্র বালু বড় ও মোটা আকৃতির পাইপ দ্বারা চরে রাখা হচ্ছে। সেখানে বালুর স্তূপ একেকটা ছোট পাহাড়ের আকার ধারণ করেছে। বালু শুকানো হলে কোনও কোনও বালুমহালে বেলচা ও কোদাল দিয়ে কেটে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। আবার কোনও বালুমহালে এক্সকাভেটর দিয়ে কেটে বালু ট্রাকে তোলা হচ্ছে। বালুমহালগুলোর একেকটির দৈর্ঘ্য নদীর ১ থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বালুমহালের বালু পুরো কুমিল্লা জেলার চাহিদা মেটায়। বাকি বালুমহালের বালু মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও ফেনীসহ আরও কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হয়।
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত বাবুল জানান,‘ সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস ছিল কুমিল্লার বালুমহালগুলো। ৬০ বছর ধরে দেখে আসছি গোমতী নদীর বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তারও অনেক আগে, আমার ধারণা ১০০ বছরেরও বেশি আগে বালুুমহালগুলো থেকে বালু উত্তোলন হতো। পুরোনো গোমতী নদীর বালুমহালগুলোর একেকটি স্তূপ পাহাড়ের আকার ধারণ করতো। বৃহত্তর কৃমিল্লার সবগুলো ভবন নির্মাণ হতো এ বালু দিয়েই। তখন বালুমহালের সংখ্যা ছিল ৫০-এর বেশি। এখন ধীরে ধীরে তা সংকুচিত হয়ে এসেছে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন,‘ এবার দুটি বালুমহাল বেশি ইজারা দিতে পারায় এবং পূর্বের তুলনায় বেশি ইজারা মূল্য পাওয়াতে রেকর্ড রাজস্ব আয় হয়েছে। আমরা বালুমহালের সংখ্যা বাড়িয়ে বেশি রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে কাজ করছি। পরবর্তী অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে আরও বেশি রাজস্ব যোগ হবে বলে আশা করি।’