বাবার স্বপ্ন পূরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,চিকিৎসা সেবা

মহিউদ্দিন মোল্লা ।।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার অজপাড়াগাঁ মড়হ। সেই গ্রামে গড়ে উঠেছে জাতীয় মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই গ্রামে রাত গভীরে অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাওয়া যায়। করোনাকালসহ বিভিন্ন সময়ে এলাকায় খাদ্য সহায়তাও দেয়া হয়। প্রতি মাসে আয়োজন করা হয় বিনামূল্যে চিকিৎসা শিবির। গ্রামের মকছুদ -মমতাজ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে এই সব সেবাধর্মী কাজ করা হয়।
ট্রাস্ট সূত্র জানায়,মড়হ গ্রামের বাসিন্দা মকছুদুর রহমান চৌধুরী ৫০ সালে মেট্রিক পাশ করেন। পাশের উপজেলা নাঙ্গলকোট সদরে লজিং থেকে লেখাপড়া করেন। টানাটানির সংসারে বেড়ে উঠেন। তিনি কর্মজীবনে তহশিলদারের চাকরি করেন। পাঁচ ছেলে এক মেয়ের সবাইকে লেখা পড়া করান। গায়ের এক শার্টে তিন বছর পার করতেন। এক ছেলে শারিরীক অসুস্থ। বাকীরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে মিজানুর রহমান চৌধুরী সহকারী পুলিশ সুপার,২য় ছেলে মশিউর রহমান চৌধুরী অসুস্থ,৩য় ছেলে মজিবুর রহমান চৌধুরী সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী, ৪র্থ ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী পুলিশ পরিদর্শক, ৫ম ছেলে আনিসুর রহমান চৌধুরী ব্যবসায়ী। সবার ছোট মেয়ে মৌসুমী চৌধুরী এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন। মকছুদুর রহমান চৌধুরী ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম মারা গেছেন। তবে তাদের স্বপ্নকে মরতে দেননি সন্তানরা। মকছুদুর রহমান চৌধুরীর স্বপ্ন ছিলো গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে এলাকাকে আলোকিত করবেন। বিভিন্ন সময়ে বাঁশ কাঠ যোগাড় করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে উদ্যোগ নেন। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তিনি এগুতে পারেননি। তবে তার জমানো অর্থ, ছেলে-মেয়ের সঞ্চয় ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় মড়হ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মকছুদ-মমতাজ হাই স্কুল এন্ড কলেজ। ট্রাস্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাত গভীরেও অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাওয়া যাবে নামমাত্র ফি দিয়ে। এছাড়া করোনাকালসহ বিভিন্ন সময় এলাকায় খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়।

ওই গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষাবিদ এহতেশাম হায়দার চৌধুরী বলেন, মকছুদ-মমতাজ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে সুন্দর অবকাঠামো ও পরিকল্পনা নিয়ে মকছুদ-মমতাজ হাই স্কুল এন্ড কলেজ যাত্রা করেছে। আশা করছি প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে এই এলাকা আলোকিত হবে।
৪র্থ ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন,বাবার ছোট চাকুরি ছিলো,স্বল্প বেতন। তা দিয়ে আমাদের বড় করে তুলেছেন। তার স্বপ্ন ছিলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। আমরা ভাই-বোনেরা ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতা নিয়ে মড়হ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছি মকছুদ -মমতাজ হাই স্কুল এন্ড কলেজ। মড়হ বড় গ্রাম। ভালো মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। এই গ্রামের আড়াই কিলোমিটার দূরে লক্ষণপুর,মনোহরগঞ্জ সাড়ে তিন কিলোমিটার,কেয়ারী তিন কিলোমিটার। ওইসব গ্রামে এই গ্রামের শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে। আমরা গতানুগতিক ধারার বাইরে আন্তর্জাতিক মানের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাই। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা যেন তার ক্লাসরুম,তার ওয়াশরুম পরিস্কার রাখে। এখান থেকে যেন সে জীবন গড়ার শিক্ষা নিয়ে বের হয়। প্রতিষ্ঠানের ফিও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান থেকে কম নেয়া হবে। আমাদের ইচ্ছে, এখানে গ্রাম আর শহরের শিক্ষার মানের মধ্যে পার্থক্য থাকবে না।