কুমেক হাসপাতালে পদে পদে টাকা

 

পাঁচ শ’ শয্যার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ(কুমেক) হাসপাতাল। প্রায় হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। বহিঃবিভাগে দিনে ১৭ শ’ থেকে দুই হাজার রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। অপারেশন, ইকো, ই.সি.জি, এক্স-রে, ট্রলি সেবা পাওয়ার জন্য পদে পদে গুণতে হয় অতিরিক্ত টাকা। হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, কিছুটা শৃংঙ্খলা ফিরেছে। স্বল্প জনবলে সেবা দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ পেলেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। শুরুতে ২৫০ শয্যা, পরে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এখানে বহি:বিভাগের ১৪টি শাখা , অন্ত:বিভাগের ১৬টি শাখায় আবাসিক ভাবে রোগী সেবা গ্রহণ করেন। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দিনে ১৬০ জন রোগী আবাসিক বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি বা ব্যবস্থা পত্রের অর্থিক লেনদেনের কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছে না। ভর্তি ফি কতো টাকা, তা কোথাও লিখা নেই। আন্তঃবিভাগে ভর্তির জন্য ৩০, ৫০ ও ১০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে।
পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন শাহ আলম। তিনি বলেন, বেড খালি নাই। তাই বারান্দায় থাকতেছি। সিটের জন্য কিছু টাকা দিতে হয়েছে আয়াকে। কত টাকা দিয়েছেন? এ প্রশ্নের তিনি উত্তর দিতে রাজি হননি। তিনি জানিয়েছেন, সব কথা বললে এখানে থাকতে দিবে না।
গাইনি বিভাগের একজন রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, ঝাড়ু দিতে আসলে একদিন পর একদিন টাকা দিতে হয়। তখন ২০ টাকা ৩০ টাকা দেই। রোগী ভর্তির সময় ট্রলিতে ১০০ টাকা দিতে হয়েছে। এ টাকা নিয়ে তার তাথে তর্ক বিতর্ক হয়েছে। ডাক্তার, নার্স বিষয়ে তিনি বলেন, তারা আসেন, রোগী দেখেন। সেটা তাদের সময় মতো। রোগীর অবস্থা রাতে খারাপ হয়ে গেলে, ডেকেও কোন নার্স পাওয়া যায় না। সবাই ঘুমে থাকে।

অর্থপেডিক সার্জারি বিভাগে এক সাপ্তাহ পূর্বে পায়ের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন বুড়িচং উপজেলার আব্দুল আহাদ। তার স্ত্রী জানান, পূর্বে নিচতলায় (বহিঃবিভাগে) ডাক্তার দেখানোর পর অপারেশনের জন্য এখানে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু ৭/৮ দিনেও অফারেশনের ডেট আসেনি। বেশি দিন হাসপতালে থাকার কারণে যে খরচ, তা দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে এক দুই দিনে অপারেশন করতে পারতাম।

 

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, সমস্যা অনেক। চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষকে সেবা দিতে। হাসপতাল প্রতিষ্ঠার পর শুধু একবার জনবল নিয়োগ হয়েছে। কম জনবল নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি টিকেট কাউন্টারে টিকেটের মূল্য লেখা আছে। হয়তো কেউ কাগজটি তুলে ফেলেছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ট্রলি রয়েছে। ট্রলি ব্যবহারে কোন টাকা লাগে না। প্রতিটি ওয়ার্ডে ট্রলি নিয়ে কোন সমস্যা হলে সর্দার, ওয়ার্ড মাস্টারদের মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া আছে, তাদের জানালে হবে। নার্স বা অন্য কেউ যদি দায়িত্ব পালন না করে তাও দেয়ালে অভিযোগ কমিটির মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া আছে। অপারেশন নিয়ে যে কথাটি আসছে, এখানে ১২টি অপারেশন থিয়েটার আছে। বৃহত্তর কুমিল্লার সকল রোগী ভর্তি হন, তাই ধারাবাহিক ভাবে ওটি করতে হয়। ইকো, এক্স-রে মেশিনও পর্যাপ্ত আছে। বিশেষ করে এক্স-রে করার জন্য বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ভিতরে তিনটি মেশিন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ তিনটি এক্স-রে মেশিন আছে। যা রোগীর বেডে মেশিন নিয়ে এক্স-রে করা যায়। এরপরও যদি হাসপাতালের কোন স্টাফ অতিরিক্ত টাকা অথবা রোগীর সাথে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যায়, সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমরা মনে করি, চিকিৎসা সেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। রোগীকে হয়রানি, সরকারি প্রতিষ্ঠানে রশিদ ছাড়া লেনদেন স্পষ্ট দুর্নীতি। ৬জেলার মানুষের ভরাসাস্থল কুমেক হাসপাতাল। এটিতে সেবা আরো গতি পাক। মানুষ ভালো সেবা পাক। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।