কুসিকের ভিন্নমতের কাউন্সিলদের বরাদ্দ নেতাদের প্রদান

 সিদ্ধান্ত আসতো এমপি বাহারের বাসা থেকে
অফিস রিপোর্টার।

বাবা এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও মেয়ে মেয়র তাহসীন বাহার সূচনা। তবে মেয়ে নামে মেয়র থাকলেও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে(কুসিক) সাবেক সংসদ সদস্য বাহারের কথাই ছিলো এই প্রতিষ্ঠানের আইন। তার বাসা থেকে পরিচালিত হতো সকল কার্যক্রম। সিটি কর্পোরেশনের ৪ হাজার ফাইল নিজের ঘরে আটকে রেখেছিলেন এমপি বাহার। আওয়ামী লীগ না করা ও তার ভিন্নমতের হওয়ার অপরাধে দুই মেযাদে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের অন্তত ১১ জন কাউন্সিলরকে তাঁদের ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ অর্থ দলীয় কর্মীদের মাঝে বিতরণ করেন বাহার।
খবর নিয়ে নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ না করা ও নিজ মতের না হওয়ার কারণে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম কিবরিয়া, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুর রহমান, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ একরাম হোসেন বাবু, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ রাজিউর রহমান, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী জিয়াউল হক, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বাবুল, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ রেজাউল করিম, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী মাহবুবুর রহমান, ২৪ মোঃ মহিবুর রহমান পুরুষ কাউন্সিলর এবং ১১,১২,১৩ নম্বরের নারী কাউন্সিলর রুমা আক্তার ও ১৯,২০,২১ নম্বরের সংরক্ষিত কাউন্সিলর তাহমিনা আক্তারকে সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করেন।
২০২২ সালের ১৫ জুন এমপি বাহারের কর্মী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আরফানুল হক রিফাত সাবেক সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তারপর থেকে ওই ১১ জন কাউন্সিলরের দুঃখ দুর্দশা শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিফাত। এবার তাঁরা আর বঞ্চিত হবে না। এমন আশায় গুড়েবালি। ২০২৪ সালের ৯ মার্চ উপনির্বাচনে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক এমপি বাহারের জ্যেষ্ঠ কন্যা তাহসীন বাহার সূচনা। তারপর আবারো শুরু হয় ওই ১১ কাউন্সিলদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিতের কাজ।
বুধবার সকালে কুমিল্লা নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়া বলেন, বাবা সংসদ সদস্য আর মেয়ে তাহসীন বাহার মেয়র। এই দাপটে আমরা যারা অন্য দলের রাজনীতি করতাম আমাদেরকে কোনঠাসা করে রাখতো। তাহসীন বাহার যেদিন থেকে মেয়র হয়েছে সেদিন থেকে আইন কানুন বলে কিছুই ছিলো না। এমপি বাহারের কথাই শেষ কথা, সেটাই ছিলো কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের আইন। শুধু তাই নয় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের অন্তত ৪ হাজার ফাইল নিজের ঘরে নিয়ে রাখছেন সাবেক এমপি বাহার। তাঁর নিজের চারজন ঠিকাদারের বাইরে আর কেউ কোন কাজ পায়নি। গেলো ঈদে কাজ না করে বিভিন্ন কাজের টাকা বন্টন করেন বাহার। তাঁর অনুসারী ২৫ জন কাউন্সিলরকে ১০ লাখ টাকা করে দেন। শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতি না করায় ও নিজ মতোর বাইরের আমরা ১১ জন কাউন্সিলর কোন টাকা বরাদ্দ পাইনি।
এছাড়া গেলো ঈদে প্রতিজন কাউন্সিলরকে গরিব দুস্থদের জন্য মন্ত্রণালয় গড়ে এক লাখ থেকে আড়াইলাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়।
সাবেক এমপি বাহার আমাদের ১১ টি ওয়ার্ডের গরিব দুস্থদের বরাদ্দকৃত এই টাকা তাঁর কর্মীদের দিয়ে দেন। শুধু তাই নয় নিজে মেয়র এবং বাবা এমপি এমন অহংকারে তাহসীন বাহার সিটি কর্পোরেশনের ভেতর নিজের লোকবল দিয়ে একটা বলয় তৈরি করেছিলেন। এতে মেয়রের ধারেকাছে ঘেষতে পারতেন না সেবাগ্রহীতারা।
সিটি কর্পোরেশনের সরকারি পাজেরো গাড়িটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন। ৫ আগাস্ট সরকার পতনের পর এই গাড়িটি আর নেই। এই গাড়িটি কি মেয়র বিক্রি করে দিছেন না কি করছেন সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন কাউন্সিলর কিবরিয়া।
নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ একরাম হোসেন বাবু বলেন, মাসিক মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত কোনভাবেই সাবেক এমপি বাহারের জন্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সে জন্য গত ঈদে গরিব দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত কোন টাকা পাইনি। এসব টাকা তিনি তাঁর কর্মীদের উপহার হিসেবে দিয়েছেন। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের ২৫ জন কাউন্সিলরকে তিনি ২ কোটি টাকা করে বিভিন্ন কাজ দেন। শুধু ভিন্ন দলের রাজনীতি করি বলে কোন কাজ পাইনি।
নগরীর ১০,১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রুমা আক্তার জানান, শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি বলে ঢাকায় মেয়রের শপথ অনুষ্ঠানে নেয়া হয়নি। শীতের সময় আমার তিন ওয়ার্ডের বরাদ্দকৃত কম্বল দেয়নি মেয়র। এছাড়াও শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না বলে নারী দিবসের অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দেয়নি। পদে পদে আমাদেরকে বঞ্চিত করেছেন মেয়র তাসহীন বাহার।
উল্লেখ্য-গেলো ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তাহসীন বাহার ও সাবেক সংসদ বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকায় দেখা যায়নি। কেউ কেউ বলছেন আত্মগোপনে আছেন তাঁরা। তাদের ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।