কেকে গৃহিণীদের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
গাংচর। কুমিল্লা নগরীর কোতয়ালী থানা সংলগ্ন এলাকা। দোতলায় বাসা। সিঁড়ি মাড়িয়ে উঠতেই নাকে লাগে মিষ্টি ঘ্রাণ। দোতলায় উঠে দেখা গেল কেক তৈরির উৎসব। কেক তৈরি করছেন হ্যাপী ঘোষ। তাকে সহযোগিতা করছেন কয়েকজন নারী। বেগুনি,সবুজ,সাদাসহ নানা রঙের কেক। যেন কেকের মেলা বসেছে। নাম ভেনিলা,চকলেট,চকলেট মোখা,রেড ভেলভেট,ময়েস্ট,ব্ল্যাক ফরেস্ট,হোয়াইট ফরেস্ট,পানদান, ফ্রুটস কেক প্রভৃতি। কুমিল্লায় চাহিদা বেশি চকলেট কেকের। হ্যাপী ঘোষের স্পেশাল চকলেট মোখা কেক।
বাসায় গিয়ে দেখা যায়,কেউ চুলায় কেক ভাজছেন। কেউ ক্রিম মিক্স করছেন। মিক্সার মেশিনের গর গর শব্দে মুখর চারপাশ। কেউ কেকের ওপর ক্রিম মাখছেন। কেকের ওপর ডিজাইন করছেন হ্যাপী ঘোষ।
হ্যাপী ঘোষ বলেন,মেয়ে রূপকথা কেক পছন্দ করতো। নগরীর মুরাদপুরের নিশিতা আহমেদের নিকট কেক বানানো শিখেন। মেয়ের জন্য বানানো কেক নাচের শিক্ষক অভিজিত সরকার দিয়েছেন। তিনি খেয়ে পছন্দ করলেন, তিনি প্রচারণা শুরু করলেন। তখন বাধ্য হয়ে বাণিজ্যিক ভাবে কেক তৈরি শুরু করেন। তার কোন পেইজ বা প্রচারণা নেই। নেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক কোন নামও। সবাই বলে রূপকথার মায়ের কেক। তবুও স্বাদ ও মান ভালো হওয়ায় দিন দিন ক্রেতা বাড়ছে। ভালো মানের উপাদান দিয়ে কেক তৈরি করেন। সীমিত দামে বিক্রি করেন। যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলে-মেয়ে ও তার হাত খরচ হয়ে যায়। মানুষ খেয়ে ভালো বললে তার আনন্দ লাগে। ছেলে মেয়ে বড় হলে কেক নিয়ে আরো বড় পরিসরে কাজ করবেন। অর্ধশতাধিক নারীকে কেক বানানো শিখিয়েছেন। তাদের অনেকে বাণিজ্যিকভাবে কেক তৈরি করে সফল হয়েছেন।
নার্গিস সুলতানা ও টুম্পা রানী দাস বলেন, পরিবারের শিশুদের কেক অনেক পছন্দ। বাজারে তৈরি কেকের মান নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। পরিবারের চাহিদা মেটাতে কেক তৈরি করা শিখেছি। হ্যাপী ঘোষ আমাদের কেক বানানো শিখিয়েছেন।
চিত্রশিল্পী ইলিয়াস হোসাইন বলেন, নগরীর বিভিন্ন উৎসবে নারীদের ঘরে বানানো কেকের চাহিদা বাড়ছে। বাইরের দোকান থেকে এখন কেক কেনার পরিমাণ কমে গেছে। আমিও এই ধরনের কেকের ক্রেতা। হ্যাপী ঘোষ মান সম্পন্ন কেক তৈরি করে নগরীতে সুনাম কুড়িয়েছেন। সাথে তিনি অর্ধশতাধিক নারীকেও বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম ভিক্টোরিয়া ই-কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা কাজী আপন তিবরানী বলেন, পরিবারকে সময় দেয়ার পাশাপাশি ঘরে কেক তৈরি আয়ের একটি ভালো মাধ্যম। নগরীতে কেক তৈরি করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছেন শতাধিক নারী।
(ছবি:ইলিয়াস হোসাইন)