ক্ষতিগ্রস্ত কুমিল্লার চার উপজেলার বাঁধ ও সড়ক

 

inside post

গোমতীতে মাটি কাটা নৈরাজ্য
আল-আমিন কিবরিয়া।
গোমতীতে মাটি কাটা নৈরাজ্য চলছে। এতে কুমিল্লার আদর্শ সদর, বুড়িচং, দেবিদ্বার ও মুরাদনগর অংশে গোমতীর বাঁধ ও আশপাশের ছোট-বড় সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জেলার অন্যতম সবজি ভান্ডার হিসেবে পরিচিত গোমতীর চরাঞ্চল।
সূত্র জানায়,বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী কুমিল্লার গোমতী। দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার। এই নদীর দুই পারের চরে গত ২০ বছরে গড়ে উঠেছে মাটি ক্রয়-বিক্রয়ের বাণিজ্য। চরের মাটি কেটে অন্য স্থানে নেয় ড্রাম ট্রাক ও টলি ট্রাক্টর দিয়ে। এসব মাটিবাহী ট্রাক-ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচল ও অতিরিক্ত ওজনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর বাঁধ ও আশপাশের গ্রামীণ সড়কগুলো। প্রায় ঘটেছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বাতাসে ধূলিকণা উড়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন বেড়িবাঁধ এলাকার জনজীবন। জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস ও দাউদকান্দি উপজেলা হয়ে গোমতী নদী মিলিত হয়েছে মেঘনা নদীর সাথে।


সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই ছয় উপজেলার মধ্যে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত আদর্শ সদর, বুড়িচং, দেবিদ্বার ও মুরাদনগর অংশে গোমতীর বাঁধ ও আশপাশের ছোট-বড় সড়কগুলো। গোমতীর চরাঞ্চলে নেই তেমন শাকসবজি চাষ।
নদীচরের মাটি ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই কৃষকদের থেকে কিনে রেখেছে ফসলি জমি। বানিয়েছেন নিজস্ব মাটি বিক্রির ঘাট। এই ঘাটকে কেন্দ্র করে চরের অবশিষ্ট আবাদযোগ্য জমির উপর দিয়ে হয়েছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। এই পথ হয়ে বাঁধ কেটে তৈরি রাস্তা দিয়ে ট্রাক-ট্রাক্টরগুলি উঠে আসে বাঁধের কাঁচা-পাকা সড়কে। বাঁধের সড়ক ব্যবহার করে নির্দিষ্ট স্থানে মাটি পৌছে দিতে চলে গ্রামের ছোট-বড় সড়কে।
মুরাদনগর সদর থেকে বাঁধের সড়ক দিয়ে মাঝে দেবিদ্বার ও শেষে পরবে বুড়িচং’র কংশনগর বাজার। দুইপাশের গোমতী বাঁধের সড়ক ব্যবহার করলে আসা-যাওয়ায় দূরত্ব হবে ৭০ কিলোমিটার। কিন্তু এই সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। দীর্ঘদিন ট্রাক-ট্রাক্টর চলায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এর মধ্যে কিছু অংশ পাকা হলেও উঠে গেছে পিচ-খোয়া। একই অবস্থা আশেপাশের সড়কগুলোর।


কথা হয়েছে গোমতী পাড়ের কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ ১৫ জনের সাথে। তারা জানান, গোমতী নদীর চর এখন কংকাল। নদীচরের প্রায় অংশ কাটা শেষ। যেটুকু বাকি আছে, রক্ষা করতে পারলে কৃষকরা বাঁচবে। শীত মৌসুম থেকে এখন পর্যন্ত মাটিবাহী ট্রাক্টরগুলো চলে বাঁধ এলাকার সড়কগুলো ধ্বংস করে ফেলেছে। প্রায় গ্রামবাসী সড়ক রক্ষায় বাধা দিলেও ট্রাক্টর চালকেরা তা মানেননি।
গোমতী নদীর বাঁধের সড়ক হয়ে প্রতিদিন ব্যবসার কাজে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ যায় তিতাসের রিপন আহমেদ। তিনি জানান, ছোট বেলা দেখেছি এই নদীর চরে কতকিছুর চাষ করতেন কৃষকরা। যখন থেকে চরে মাটি কাটা শুরু হলো উৎপাদন কমে গেছে নদীচরের শাক-সবজির। আর কৃষকরা হারাচ্ছে তাদের ফসলি জমি।
তিতাস, মুরাদনগর ও দেবিদ্বার উপজেলার ৮জন সিএনজিঅটো রিকশা ও অটোরিকশা চালক জানান, গোমতী বেড়িবাঁধ সড়ক ও আশপাশের সব সড়কই ভাঙ্গাচোরা। চলাচল করলে গাড়ির বিভিন্ন পার্স বিকল হয়ে যায়। ধুলাবালি ও ভাঙাচোরা রাস্তা হওয়ার কারণে কোনো চালক বা যাত্রী যেতে চায়না এসব সড়ক দিয়ে।
দেবিদ্বার ফাতহাবাদ ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী। এক সময় গোমতী চরে তার আবাদযোগ্য জমি ছিল ২০ শতাংশ। সে জমিতে ফালাতেন বিভিন্ন ফসল। তিনি জানান, আমরা গরীব। আমাদের পাশের কৃষি জমি বিক্রি করে ফেলেছে। ভাঙ্গন আতঙ্কে আমিও বিক্রি করে দিয়েছি।
দেবিদ্বারের পৌর এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক মুন্সী বলেন, গোমতী নদী, নদীর চর ও বেড়িবাঁধ আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রক্ষা করতে হবে। না হলে গোমতী পাড়ের জনজীবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মুরাদনগর উপজেলার পরমতলা গ্রামের আবুল বাশার বলেন, সকালে একটু মোটরসাইকেল নিয়ে কাজে মুরাদনগর সদরে গিয়েছিলাম। রাস্তায় শুধু ধুলাবালি উড়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, আমরা আভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। সাম্প্রতিক সময়ে বুড়িচং এলাকায় নদীর অংশে মাটি কাটা বন্ধে অভিযান চালিয়েছি।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, আমরা প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করে থাকি। আপনার জানেন তার শেষ রাতে মাটি কাটে। এজন্য অভিযান পরিচালনা করতে আমাদের একটু সমস্য হয়। ভবিষ্যতে গোমতী চরে মাটি কাটা বন্ধে অভিযান আরো বাড়ানো হবে।

আরো পড়ুন