খাবার বিক্রির টাকায় জাপানি বৃদ্ধাদের রঙিন স্কুল

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই পাহাড়ের একটি গহিন এলাকা বড় ধর্মপুর। ২০১৬সালে সেখানের নির্জন জঙ্গলে গড়ে উঠে মজুমদার ওয়ান ড্রপ প্রাইমারি স্কুল। এটির ৪০ভাগ ব্যয় বহন করেন কুমিল্লার তারিক-উল- ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার মজুমদার। বাকিটা বহন করেন তাদের জাপানি বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক তোশিকো ওনিশিসহ তার সহপাঠিরা। তোশিকো ওনিশি অবসরে জাপানের বিভিন্ন স্কুলে খাবার বিক্রি করেন। সেই টাকা এখানে সহায়তা করেন।
বৃহস্পতিবার চার জাপানি বন্ধু আসেন লালমাই পাহাড়ের মজুমদার ওয়ান ড্রপ প্রাইমারি স্কুলে। সেখানে তারা জানান স্কুল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। জামা,জুতা,বই-খাতা,দুপুরের খাবার স্কুল বহন করে।
তোশিকো ওনিশি বলেন,শিশুদের মুখের হাসি দেখতে সদূর জাপান থেকে এসেছি। আমাদের দেশে তরুণের সংখ্যা কম,এখানের তরুণদের দেখে হিংসে হয়! তাদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা কোন এনজিও নয়,বন্ধুরা নিজেদের আয় থেকে অংশ নিই। বয়স হয়েছে, কতদিন চালাতে পারবো না জানি না। কেউ ইচ্ছে করলে স্কুলের খরচ বহনে অংশ নিতে পারেন।
সংস্কৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানের মানুষ অতিথি পরায়ণ। তবে মানুষ সময় অনেক অপচয় করেন। এদিকে তিনি এখানের বিরিয়ানির খুব ভক্ত বলে জানান।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের প্রধান ফটকে জাপানি,ইংরেজি ও বাংলায় স্কুলের নাম লেখা। ফটকের ওপরে পতপত করে উড়ছে সবুজের ওপরে লাল বাংলাদেশি ও সাদার ওপরে লাল বৃত্তের জাপানি পতাকা। শিক্ষার্থীদের পরনে সবুজ প্যান্ট ও সাদা জামা। কক্ষের পাশ দিয়ে যেতে শিক্ষার্থীরা সমস্বরে সালাম ও শুভেচ্ছা জানায়। কারো চেয়ার টেবিল লাল ও সবুজ রঙের। কারো গুলো সাদা। ১ম-থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত এখানে পড়ানো হয়। শিক্ষার্থী ১০০জন। বৃহস্পতিবার ১ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেও বরণ ও খেলাধুলার আয়োজন ছিলো। তাদের সাথে জাপানিদের মজা করতে দেখা যায়।
স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল ইয়াসমিন আলী বলেন,এখানের অধিকাংশ শিশুর পরিবারের কেউ স্কুলে যায়নি। কারো মা নেই পরিবারে। কারো বাবা নেই। নানা বা দাদার পরিবারে বড় হচ্ছেন। কেউ কেউ সকালের খাবার খেয়ে স্কুলে আসতে পারেন না। এখানের শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পড়া দেখিয়ে দেয়ারও কেউ নেই। বইয়ের সাথে তাদের জীবন পরিচালানা ও পরিচ্ছন্নতায় আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। হাত পরিষ্কার করা,ওয়াশরুম ব্যবহার ইত্যাদি।
স্কুলের উদ্যোক্তা তারিক-উল-ইসলাম মজুমদার বলেন, জাপানে কিছু বন্ধু রয়েছে। তারা একবার কুমিল্লায় বেড়াতে আসেন। তারা কান্দিরপাড়ে কিছু ভিক্ষুককে অনেক টাকা দিতে থাকেন। বিষয়টি আমার স্ত্রী নাহিদা আক্তার মজুমদারের নজরে আসে। তিনি বলেন-এভাবে তো মানুষের উপকার হবে না। পাহাড়ের শিক্ষার আলো জ¦ালাতে কাজ করা যেতে পারে। সেনিরিখে আমরা তাদের প্রস্তাব দেই। জাপানি বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক তোশিকো ওনিশিসহ তার সহপাঠিরা এই স্কুলের ব্যয় ভার বহনে সহযোগিতা করেন। প্রতি জানুয়ারি মাসে এসে তারা স্পোর্টস ডে করেন।