খালা শাশুড়ি ও তার দুই সন্তানকে হত্যা করে জহিরুল

বাঞ্ছারামপুরের ত্রিপল মার্ডার
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের ত্রিপল মার্ডারের খুনি আপন ভাগ্নি জামাই। পারিবারিক কলহের জেরে ভাগ্নি জামাই জহিরুলের হাতে  দুই ছেলেসহ জীবন দিতে হলো প্রবাসীর স্ত্রী জেকি আক্তারকে। ঘটনার মূলহোতা জহিরুলকে আটক করেছে পুলিশ। সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
প্রকাশ, মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকালে জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের চর ছয়ানী গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী শাহ আলমের বসত ঘর থেকে তার স্ত্রী জেকি আক্তার (৩৫), তার বড় ছেলে মাহিন আলম (১৬) ও ছোট ছেলে মহিন আলমের (৭) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার আলগী গ্রামের জহিরুল ইসলামের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় মা-পুত্র তিনজন। খালা শাশুড়ি জেকি আক্তার আর তার দুই সন্তান। জেকি আক্তারকে হত্যার পর ঘটনা দেখে ফেলায় একে একে তার দুই সন্তানকে হত্যা করে ভাগ্নে জামাই জহিরুল। এরপর বাইরে থেকে গেইট তালা দিয়ে সে পালিয়ে যায়। পুলিশ মঙ্গলবারই জহিরুলকে আটক করে। এদিকে নিহত জেকি আক্তারের পিতা হাজী আবুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বাঞ্ছারামপুর থানায় দায়ের করেছেন হত্যা মামলা।
পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জেকি আক্তারের বড় বোন শিল্পী আক্তারের মেয়ে ১৯/২০ বছর বয়সী আনিকা আক্তারের মেয়ের জামাই জহিরুল ইসলাম। আনিকার সঙ্গে তার বনিবনা ছিলোনা। এ নিয়ে শ্বশুরবাড়ির সাথে জহিরুলের কলহ চলছিলো। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে সোমবার খালা শাশুড়ি জেকি আক্তারের বাড়িতে আসেন জহিরুল। তার আসার বিষয়টি জেকি তার বড় বোন শিল্পী এবং বোনের মেয়ে আনিকাকে জানায়। জহিরুলকে জায়গা না দিতে তার শাশুড়ি শিল্পী আক্তার ছোট বোন জেকি আক্তারকে জানায়। বড় বোনের কথানুযায়ী জেকি তার ভাগ্নি জামাই জহিরুলকে চলে যেতে বললে সে ক্ষুব্ধ হয়। একপর্যায়ে জেকির পরিবার নিয়ে আপত্তিকর কথা বললে জেকি আক্তার বটি দা নিয়ে জহিরুলের দিকে এগিয়ে আসে। এই দা দিয়েই কুপিয়েই প্রথমে খালা শাশুড়ি জেকি আক্তারকে হত্যা করে জহিরুল। এসময় জেকির বড় ছেলে মাহিন এগিয়ে এলে তাকে এবং তার ছোট ভাই মহিনকে হত্যা করে। মূলত জহিরুল তার পরিচয় আড়াল করতে জেকিকে হত্যা পরবর্তীতে তার দুই সন্তানকে হত্যা করে। তবে জেকির সাত মাস বয়েসী কন্যা সন্তান অজিহাকে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায় বিছানার ওপর। ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে কাজের মহিলা এসে দেখেন শাহ আলমের দালান ঘরের গেইট লাগানো। অনেক ডাকাডাকির পর সাড়া না পেয়ে বাড়ির অন্যান্য লোকজনকে নিয়ে চেষ্টা করে গেইট খুলে সবাই ভেতরে ঢুকেন। ভেতরে গিয়ে দেখেন ঘরের মেঝেতে ও বাথরুমে শাহ আলমের স্ত্রী ও দুই সন্তানের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। শিশু সন্তান অজিহা আক্তার বিছানায় অক্ষত অবস্থায় পড়েছিলো। পুলিশ নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের পর ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
উল্লেখ্য, বিগত ২০ বছর আগে উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের চর ছয়ানী গ্রামের সুলতান সরকারের পুত্র শাহ আলমের সাথে পার্শ্ববর্তী দরিয়ারচর গ্রামের হাজী আবুল হোসেনের কন্যা জেকি আক্তারের বিয়ে হয়।
বিগত ১৫ বছর ধরেই শাহ আলম মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব প্রবাসী। দাম্পত্য জীবনে শাহ আলম ও জেকি তিন সন্তানের জনক-জননী। দুই পুত্র মাহিন ও মহিন এবং একমাত্র শিশুকন্যা অজিহাকে নিয়ে গোছানো সংসার ছিলো জেকি আক্তারের।  ভাগ্নি জামাইর নির্মমতায় দুই পুত্রসহ জীবন দিতে হলো জেকি আক্তারকে। মাত্র সাত মাস বয়েসী একমাত্র অবুঝ কন্যাশিশু অজিহা আক্তার হলো মাতৃহীনা।