খিরাই এখন মরা খাল

 

খিরাই। একটি নদীর নাম। এটি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুরের মতলব হয়ে মেঘনা নদীতে পড়েছে। ১০বছর আগেও এই নদী ছিলো খরস্রোতা। নদীতে নৌকা ও ট্রলার চলতো। প্রাকৃতিক মাছের উৎস ছিলো। দুই পাশের ২০হাজার বিঘার বেশি জমি সেই নদীর পানি দিয়ে সেচ দেয়া হতো। সেই খিরাই এখন মরা খাল। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রোগ ব্যাধি বাসা বেধেঁছে। পলিতে নদীর পেট ভরাট হয়ে গেছে, কচুরিপানা বিভিন্ন স্থানে জমাট বেঁধে আছে। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
সংবাদ সূত্রমতে,নদীটি চাঁদপুর উত্তর মতলব ও কুমিল্লা দাউদকান্দির মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ধনাগোদা নদী থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এটি মোল্লাকান্দি দিয়ে উৎপত্তি হয়। গোয়ালমারী বাজার হয়ে জুরানপুর,কালা সাদারদিয়া,চরগোয়ালী,দুর্গাপুর,পশ্চিম নোয়াদ্দা,নৈয়ার,কাদিয়ার ভাঙ্গা,নশিপুর,মারুকা,চৌধুরীপাড়া,নারায়ণদিয়া হয়ে চাঁদপুরের মতলব হয়ে মেঘনা নদীতে পড়েছে। এটি দাউদকান্দি উপজেলার গোয়ালমারী,বিটেশ^র ও মারুকা ইউনিয়ন অতিক্রম করেছে।

 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,নদীর গোয়ালমারী এলাকায় ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। বীরভাগ গোয়ালী ও কাদিয়ারভাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে নদীতে কচুরিপানা জমাট বেঁধে আছে। কয়েকটি স্থানে মাছ না থাকায় ভেল জাল তুলে রাখা হয়েছে। যেন মাছের জন্য প্রার্থনায় রত ভেল জাল। শীতের শুরুতেই নদীর পানি এখন তলানিতে, বোরো মৌসুমে নদীর অনেক এলাকা পানি শূন্য হয়ে যাবে। কোথাও নদীর পেটে দোকান ও বাড়ির ভবন তোলা হয়েছে। কোথাও নদী ভরাট করে জমি বাড়ানো হয়েছে।
স্থানীয় নৈয়ার সাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন শিকদার ও বীরভাগ গোয়ালীর বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক মাহবুব আলম বলেন, দাউদকান্দি থেকে লোকজন নদীর মাধ্যমে এই এলাকায় আসতো। এখন নদীর গতিপ্রবাহ নেই। এক সময় দেশিয় মাছে নদী খলবলিয়ে উঠতো, এখন নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। পনি সংকটে নদীর দুই পাশের জমির প্রয়োজনীয় সেচ দেয়া যাচ্ছে না। ৯০দশকের প্রথম দিকে নদীটি খনন করা হয়। এটি আবারও খনন করা প্রয়োজন।

 

দাউদকান্দি এলাকার বাসিন্দা কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, নতুন প্রজন্ম নদীর নাম জানে না। তাদের নদীর গুরুত্ব বুঝাতে আমাদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। খিরাই নদীটির গতিপথ পরিদর্শন করেছি। এটি খনন হলে ২০হাজারের বেশি জমি ফুল ফসলে হেসে উঠবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিগার সুলতানা বলেন, খিরাই নদী নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা সমন্বয় সভায় কথা বলেছি। এবিষয়ে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবো।

 

দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, এখানে নতুন যোগদান করেছি। আমার বাসভবনের নাম খিরাই। জানতে পারলাম এটি স্থানীয় একটি নদীর নাম। নদীর গতিপথ পরিদর্শন করবো। নদী খননের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ফোরামে কথা বলবো।

 

আমরা মনে করি,নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে মানুষ বাঁচবে। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। ফসল উৎপাদনে সেচের প্রয়োজন। সেচের জন্য চাই সচল নদী। প্রাকৃতিক মাছের উৎস নদী। পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে নদীকে বাঁচাতে হবে। নদীটি খননে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব নিতে হবে।