গাছতলায় বিনামূল্যের পাঠশালা

inside post

মহিউদ্দিন মোল্লা,কুমিল্লা।।
বাড়ির উঠান। উঠানের গাছতলায় বিনামূল্যের পাঠশালা। চলছে প্রায় এক দশক ধরে। নীল আকাশ তাদেও ছাদ আর প্লাস্টিকের বস্তা তাদের বেঞ্চ। সেখানে ৭২জন শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়ে। কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার দক্ষিণ খোসবাস ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে এই পাঠশালার অবস্থান। এই পাঠশালার কারণে গ্রামে ঝরে পড়ার হার কমেছে। এছাড়া করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময়েও তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাঘাত হয়নি।
গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, হোসেনপুর ছোট গ্রাম। গায়ে গায়ে লাগানো ছোট ঘর। অধিকাংশ বাসিন্দার পেশা কৃষি ও শ্রম বিক্রয়। তাদের সন্তানদের নিয়ে চলছে গাছতলার পাঠশালা। শিক্ষকরা পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন। কেউ লিখছেন কেউ মাথা দুলিয়ে পড়ছেন। এই পাঠশালার উদ্যোক্তা ওই গ্রামের ছেলে ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ইলিয়াস হোসাইন। বর্তমানে তার পেশা ফটোগ্রাফি।
ইলিয়াস হোসাইন বলেন,একজন মেয়ে আছে নাম মিলি(ছদ্মনাম)। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। পড়ালেখার প্রবল ইচ্ছে। মা-বাবা মাঝে মাঝে চায় বিয়ে দিতে। আইনের ভয় দেখাই। উৎসাহ দিয়ে এখন পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।
এমন সুবর্ণা,আকলিমা নামের মেয়ে আছে। তারা শ্রমিক পরিবারের। পরিবারের শিক্ষা দেয়ার আগ্রহ নেই। ওরা প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে আজ ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী। ওদের কারো কারো ইচ্ছে শিক্ষক হবে। ভালো চাকরি করবে। পরিবারের দারিদ্রতা দূর করবে।
তিনি বলেন, কুমিল্লা নগরীর ধর্ম সাগরপাড় পার্কের ভেতর অবকাশ ছাউনিতে ১৩জন পথশিশুদের পড়ানো দিয়ে শুরু। তারপর খেয়াল করলাম নিজের গ্রামের অনেক মানুষ আছে সন্তানকে টাকার অভাবে পড়াতে পারছেনা। ৫ম শ্রেণীতে উঠেই শিশুদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই অবকাশের দ্বিতীয় শাখা বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত করা। গ্রামে শুরু করি ২০১৩সালের ২০সেপ্টেম্বর। ২০জন শিশু এবং ১০জন শিক্ষক দিয়ে যাত্রা শুরু। প্রথমে মসজিদের মাঠে ও স্কুলের বারান্দায়। পরে বাড়ির উঠানে শিশুদের পড়ার স্থান নির্ধারণ করি। এখন পর্যন্ত বাড়ির উঠানেই পড়াচ্ছি। বর্তমানে শিশুর সংখ্যা ৭২জন। ওরা বিভিন্ন স্কুলে পড়ে। এখানে শিশু শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিশু আছে। বিকেল হলেই সবাই ব্যাগ কাঁধে পড়তে চলে আসে। ওদেরকে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত পড়ানো হয়। এখন করোনা মহামারির কারণে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদেরকে দুটো শাখায় ভাগ করে দিয়েছি। একটা শাখা ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত। দ্বিতীয়টি ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত। এই শিশুদেরকে এইখান থেকেই খাতা-কলম, ব্যাগসহ সকল ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হয়। ঈদের আনন্দ থেকে যাতে বঞ্চিত না হয় শিশুদের খুশির জন্য প্রতি ঈদে নতুম জামা কাপড় দেয়া হয়। শীতের মৌসুমে সমস্যা হয় না। বর্ষাতে উঠান ভিজা থাকার কারণে বসতে পারেনা, তাই বৃষ্টির দিন বন্ধ থাকে। যদি তাদের জন্য একটা ঘর এবং জায়গা পেতাম তাহলে সুবিধা হতো। পরিচালনার আর্থিক জোগানটা করে থাকি নিজের অর্থ এবং ফেইসবুকসহ বিভিন্ন বন্ধু মহলের সহযোগিতায়।
তিনি আরো বলেন, প্রথম যখন শুরু করি তখন গ্রামের কিছু মানুষ নেতিবাচক আচরণ করা শুরু করছিলো। আনন্দের বিষয় হলো এখানে যারা বাধা দিয়েছিলো এখন তাদের সন্তানও এখানে পড়তে আসে। গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন,ইলিয়াসের শিক্ষা কার্যক্রমের কারণে এলাকার শিশুরা উপকৃত হচ্ছে। আমরাও তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।
বর্তমান ইউনিয়ন সদস্য আক্তার হোসেন বলেন,উদ্যোক্তা ইলিয়াস আমার প্রতিবেশী। তার উদ্যোগের কারণে শিশুরা ঝরে পড়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে।

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুল ইসলাম বলেন, শিশুদের ব্যক্তি উদ্যোগে বিনাশ্রমে পড়ানো অবশ্যই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। একদিন তাদের কাজ পরিদর্শন করবো।

আরো পড়ুন