গায়েবি খারিজ আতংকে মুরাদনগরের দড়ানিপাড়া গ্রামের মানুষ

অফিস রিপোর্টার।।

 আমির হোসেন। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দড়ানিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ক্রয় করা সম্পত্তিতে তার বসবাস তিন দশক ধরে। মাস তিনেক আগে জানতে পারেন নিজের ক্রয় করা সম্পত্তির খারিজ করে নিয়েছেন তার আরেক ভাই। একই গ্রামের ইউসুফ মিয়া ও স্বপন মিয়া নামের দুই ব্যক্তির বাবা-দাদাদের থাকার জায়গায় খারিজ করে ফেলেন পাশ্ববর্তী খোকন নামের আরেক ব্যক্তি। আমীর হোসেন, ইউসুফ ও স্বপনের মত দড়ানিপাড়া গ্রামের অন্তত: ১০জন মানুষ এখন নিজের ঘর বাড়ি বাঁচাতে দৌড়ের মধ্যে আছেন। ওই গ্রামে এখন জমি হারানোর আতঙ্ক বিরাজ করছে অনেকের মধ্যে। একই অবস্থা মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। সরেজমিনে দড়ানিপাড়া গ্রামে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই আতঙ্কের পেছনে আছেন ওই উপজেলার ভূমি অফিসের কানুনগো মো. সেলিম। তিনি তার আত্মীয় স্থানীয় বাসিন্দা ঝারু মিয়ার মাধ্যমে টাকা নিয়ে একজনের জমি আরেকজনের নামে উঠিয়ে দেন। সেলিম কানুনগো যোগদানের কিছুদিন পর থেকে জায়গা জমির গায়েবী খারিজ শুরু হয়। স্থানীয় কামরুল হোসেন বলেন, পরিশ্রমের টাকায় কেনা জমি। খারিজ হয়ে গেছে অন্য আরেকজনের নামে। সেলিম কানুনগো আসার পর থেকে পুরা উপজেলার একই হাল। একই

গ্রামের আমির হোসেনের স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম বলেন, গার্মেন্টসে কাজ করছি। গেরামের মাইনসে দূর ছাই করতো। নিজের ছেলে মেয়ের কথা চিন্তা করে কারো কথা শুনিনি। ২০০৯ সালে ভাসুর দেলোয়ার প্রফেসরের কাছ থেকে টমেটোর বাগানের জায়গাটা কিনেছি। জংগল আর বড় গর্ত ছিল তখন। টাকা জমিয়ে জায়গাটাকে ভরাট করে ছেলে মেয়ের থাকার উপযুক্ত করে বিল্ডিং করেছি। কিছু জায়গায় সবজির চাষ করি। আর এখন শুনি আমার আরেক ভাসুর নাকি জমিটা খারিজ করে নিয়েছে। কানুনগো সেলিম কোন বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে আমাদের জমিটা টাকা খেয়ে আরেকজনের নামে খারিজ করে দিয়েছেন। হোসনেয়ারার স্বামী আমির হোসেন বলেন, আমার ভাই দেলোয়ারের কাছ থেকে তার অংশ কিনে নিই। আরেক ভাই ভাই জাকির হোসেন এখন তার জায়গা বলে আমার ঘর তোলা জায়গা খারিজ করেছে। আর টাকার বিনিময়ে এই কাজ করেছে কানুনগো সেলিম। আমির হোসেনের ভাই জাকির হোসেন বলেন, বাবার জায়গার কিছু অংশ আমি। পাই তাই খারিজ করেছি। সামনের আরেকটি শুনানি আছে। স্থানীয়

গোমতা ইসহাকিয়া হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, সেলিম কানুনগোকে দিয়ে স্কুলের প্রায় ৭০ শতক জায়গা নিজের নামে খারিজ করে নিয়েছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। অভিযুক্ত ঝারু মিয়া বলেন, সেলিমকে তিনি চেনেন একজন কানুনগো

( কানুনগো মো. সেলিম )

হিসেবেই। সেলিমের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। কে বলেছে আমার নাম, আমি খোঁজ নেব। আমার নামে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কানুনগো সেলিম বলেন, ওই এলাকায় আমার কোন আত্মীয় স্বজন নেই। আমরা সব কাজ নিয়ম মতই করি। আমির হোসেনের জায়গাটা নিয়ে এক পক্ষ আপত্তি জানিয়েছে। আমরা রিপোর্ট দেব বলেছি সাত দিন পর। ব্যস্ততায় দিতে পারিনি। শিগগিরই শুনানি ডাকবো। স্কুলের জায়গা নিয়ে কোন ঝামেলা নেই। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সঠিক নয়। মুরাদনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাজমুল হূদা বলেন, আমার কাছে এই বিষয়ে কোন অভিযোগ আসেনি। যারা ভুক্তভোগী তাদের বলেন আমার কাছে আসতে। অভিযোগ আসলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।