ছাপা কাগজে নিজের নাম দেখার আনন্দ

আবু সুফিয়ান রাসেল
ক্লাসে বইয়ের বাইরে খুব একটা পড়তাম না। ক্লাসের বইও ঠিকঠাক পড়তাম, তাও না। অল্প স্বল্প খেলাধুলা করতাম। বাড়িতে সবার ছোট ছিলাম। এ সুযোগ পেয়েছি দীর্ঘ সময়। আর মনে হয় একটু দূরন্ত ছিলাম। দূরন্ত কিশোর। সিক্স বা সেভেনে উঠার পর মামাতো ভাইয়ের পড়ার টেবিলে একটা সাময়িকী দেখলাম। কয়েকটা গল্পও পড়লাম। ভালই লাগলো। রম্য, বাস্তবতা আর প্রেম কাহিনি। প্রেমমের উষ্ণতাই বেশি।
স্লোগান লেখকই পাঠক, পাঠকই লেখক। লেখকের নাম, ঠিকানা মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া আছে। লেখকরাও তরুণ, তরুণী। শুধু ভালোবাসার গল্প। সাময়িকীর নাম মাসিক মৌচাকে ঢিল। সম্পাদক শফিক রেহমান। বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস যুবক যুবতীদের কাছে পরিচয়ে মৌচাকে ঢিল ভূমিকা রেখেছে। মৌচাকে ঢিলের নিয়মিত পাঠক হয়ে গেলাম। গদ্য পাঠে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। সাথে মাসিক মদিনা, সাপ্তাহিক ২০০০, আল কাউছার, আদর্শ নারী, কারেন্ট এ্যাপেয়ার্সসহ কুমিল্লার বাজারের সব সাময়িকী পড়া শুরু করলাম। পত্রিকার ঈদ ম্যাগাজিনও ক্রয় করে পড়তাম। মাসে যখন তিন চার শ’ টাকা এভাবে চলে যেতো, তখন একটা পাঠক ফোরাম তৈরি করলাম। সবাই মাসে ৫০ টাকা দিবে। দু’টি বাংলা দৈনিক, একটি ইংরেজি দৈনিক আর মাসিক ম্যাগাজিন ক্রয় করে অদল বদল করে পড়তাম।
পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়ার সময় যখন দেখতাম ব্যক্তির নাম বা পরিচিত কারো নান। নিজেরও নামটা স্থান পাবে সে লোভ করতাম। নবম, দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় কুমিল্লা হাউজিং খেলার মাঠে প্রতিদিন বিকালে যেতাম। মাঠের উত্তর পাশের বাসায় একটা সাইন বোর্ড দেখি মাসিক কিশোরচিত্র। সেখানে যাই পত্রিকার ট্যাবলেট সাইজের আট পাতার কিশোর সাময়িকী। ৯০ শতাংশ লেখা, চিত্র শিশু কিশোরদের। সবাই স্কুল বা কলেজে পড়ে। নাম, স্কুলের নাম, শ্রেণি ও ছবি দেওয়া আছে। তারা আমার কাছাকাছি বয়সের। পত্রিকায় ছবিসহ লেখা প্রকাশ একটা স্বপ্ন হয়ে গেলো। তখন কিশোরচিত্র আরো মন দিয়ে পড়তে লাগলাম। সম্পাদক ছিলেন প্রবীর বিকাশ সরকার। সম্পাদককে দাদা ডাকতে শুরু করলাম প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে যেতাম। আড্ডা দিতাম। একটু ভাব তৈরি হলো। দাদা বললেন, দিনলিপি লিখতে, কিছু দিন লিখলাম। কাগজে একটা গল্প লিখলাম বাবা দিবস। দাদা কম্পিউটার টাইপ করলেন। বানান ঠিক করলেন। আরো ভালো শব্দ দিয়ে সাজিয়ে নাম, ছবিসহ প্রকাশ করলেন। সে কি আনন্দ। দশ কপি পেপার নিলাম। বন্ধুদের দেখাই। পরিচিতজনদের দেই। কয়েক কপি ফটোকপি করেছি। এরপরও ভাবতাম, যদি আমার নামটা পেপারে আসতো। ছাপা কাগজে নিজের নাম দেখলে ভালো লাগে। এখনো তাই…..।
লেখক: অফিস রিপোর্টার, সাপ্তাহিক আমোদ।