জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে তিন প্রশ্নে ঐক্য গঠনের আহ্বান

inside post
মনোয়ার হোসেন রতন ।।
ভূমিকা:
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ, ঠিক সেই সময়ে তিন বিশিষ্ট প্রবাসী ব্যক্তিত্ব—পিনাকী ভট্টাচার্য, ইলিয়াস হোসাইন এবং কনক সারওয়ার—একটি ত্রিপাক্ষিক ঘোষণা দিয়েছেন, যেখানে তারা জাতির সামনে তিনটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।
এই প্রশ্নসমূহ একদিকে রাষ্ট্রীয় অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার দাবি তোলে, অন্যদিকে দেশের ভবিষ্যৎ সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে। বিষয়টি জাতীয় রাজনৈতিক চেতনাকে নাড়া দিয়েছে।
প্রথম প্রশ্ন: গণহত্যা, লুটপাট ও দুর্নীতির বিচার
তাঁদের প্রথম প্রশ্নে রয়েছে:
“গণহত্যা, খুন, গুম, নানা প্রকারের জুলুম এবং দেশের সম্পদ লুটপাটকারীদের বিচার করতে হবে।”
স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও বেশি সময় পরও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, এবং দুর্নীতির মহোৎসবের দায় আজো বহন করে চলেছে জাতি। ২০০৯ সাল থেকে চলমান শাসনব্যবস্থার অধীনে গুম-খুন ও নিখোঁজের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগের কারণ হয়েছে। এই পরিস্থিতির অবসানে একটি গণতান্ত্রিক ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে জাতির কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করা আজ সময়ের দাবি।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান
তাঁরা বলেন:
“রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী প্রভাবতাসমূহ নিশ্চিহ্ন করতে হবে।”
এই বক্তব্যে রাজনৈতিক চেতনার এক গভীর সংকেত নিহিত রয়েছে। পতিত সরকার যেভাবে বিরোধী কণ্ঠকে দমন করছে, সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশ ও সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করছে, তা এক ধরনের ‘দলীয় একনায়কতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার আলামত।
ফ্যাসিবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—বিরোধী মতকে নিষিদ্ধ করা, বিরোধী দলের উপর দমনমূলক পদক্ষেপ, এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ। বর্তমান বাস্তবতা তাই প্রমাণ করে, আর তাই দ্বিতীয় প্রশ্নটি কোনো আবেগ নয়, বাস্তবতারই প্রতিফলন।
তৃতীয় প্রশ্ন: রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ
“রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কে ইন্ডিয়ার হস্তক্ষেপ স্থায়ীভাবে রুখে দিতে হবে।”
এই প্রশ্নটি শুধু একটি রাজনৈতিক বিবৃতি নয়; বরং এটি একটি ভূরাজনৈতিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আত্মমর্যাদাশীল পররাষ্ট্রনীতি প্রয়োগ করা প্রত্যেক স্বাধীন রাষ্ট্রের কর্তব্য।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, নির্বাচন, সেনা ও গোয়েন্দা প্রশাসন কিংবা নদী সীমান্ত ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের প্রভাব যে মাত্রায় বাড়ছে, তা শুধু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার নয়, বরং জাতীয় চেতনাবোধের জন্যও এক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপসংহার:
এই তিনটি প্রশ্ন এককথায় একটি নতুন রাজনৈতিক চেতনার ডাক। এই ডাক শুধু সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নয়, বরং সেই প্রতিটি নাগরিকের জন্য, যিনি এই দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং মানবিক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন।
এই প্রশ্নগুলোকে কেন্দ্র করে একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য আজ দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সৎ নেতৃত্ব এবং জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ। অন্যথায় জাতি আবারও একটি দুঃস্বপ্নের অতল গহ্বরে তলিয়ে যেতে পারে।
শেষ কথা:
জাতির সামনে এই তিনটি প্রশ্ন এখন কেবল স্লোগান নয়, এটি হয়ে উঠছে নতুন মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি নীরব দর্শক হয়ে থাকবো, না কি এই আহ্বানের অংশ হয়ে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো?
আরো পড়ুন