তাজা ইলিশ ও চরের গল্প!

মো.মহিউদ্দিন আকাশ।।
পানি ছাড়া জীবন্ত মাছ যেমন ছটফট করে তেমনি কিছুদিন পরপর ভ্রমণ না হলে রাইজিং জার্নালিস্ট ফোরামের সদস্যরা ছটফট করতে থাকে। আর সে অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হুট করে সিদ্ধান্ত ১০ মে আমরা ইলিশের শহর চাঁদপুরে যাব।
সিদ্ধান্তের পর থেকেই গ্রুপে নান্টু ভাইসহ খানাপিনা কমিটির সদস্যরা ইলিশ খাওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিলেন। ভাবখানা এমন যে,তারা চাঁদপুর শহরে গিয়ে অলরেডি মাছ কিনেই ফেলছে। কে কত পিছ খাবে? কে মাথা আর কে পেটিঁ? ইলিশ ডিমসহ আবার কেউ বলল ডিমছাড়া! সব মিলিয়ে একরকম মৃদু ঝগড়া শেষে সবাই ঘুমের রাজ্যে চলে গেল।
ফজর নামাজের পর ঘুমানোর অভ্যাস থাকলেও সেদিন সকালে ঘুম আর আসে না। কখন বের হব চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে? তবে হ্যাঁ। চাঁদপুরের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমরা সবাই একসাথে হব! আনন্দময় সময় কাটবে। মহিউদ্দিন মোল্লা ভাইয়ের মুখে পুরনো দিনের গল্প শোনব, যে গল্পে থাকে বাস্তবতার শিক্ষা। নান্টু ভাই, রহমান ভাই হাস্যরস করবে। সোহেল ভাইকে কবি বলে ডেকে কবিতার আবদার করবে। এসব ভাবতে ভাবতেই শ্রদ্ধেয় মহিউদ্দিন মোল্লা ভাইয়ের কল- কইও? এই তো ভাইয়া আসতেছি বলে গেলাম পুরাতন চৌধুরী পাড়ায় অবস্থিত প্রাচীন পত্রিকা আমোদ অফিসে।
সেখানে গিয়ে মাহফুজ নান্টু ভাইকে পেলাম নতুন রুপে নতুন সাজে। এরপর আসলেন আব্দুর রহমান ভাই, তারপর মহিউদ্দিন মোল্লা ভাই।
অটোরিকশায় করে আমরা গেলাম ছন্দুতে। সেখানে নাস্তা সেরে জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডে যেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে তৈয়বুর রহমান সোহেল ভাই ও আবু সুফিয়ান রাসেল।
বোগদাদ বাসে সামনের সিটগুলো আমাদের দখলে। হাস্যরস শুরু হলো এরই মাঝে বিশ্বরোড থেকে উঠল মোহাম্মদ শরীফ। বাসে উঠেই সদ্য সাবেক সভাপতি তার সভাপতিত্ব শুরু করে দিলেন। তবে সুবিধা করতে পারেননি কারণ দেরিতে আসার কারণে নান্টু ভাই ও রহমান ভাই তাকে ড্রাইভারের পিছনে অর্ধ সিটে বসাতে বাধ্য করলেন।
তারুণ্যের উদ্দীপনা কি আর থেমে থাকে? সেখানে বসেই বাসের হেল্পারকে বললেন – আপনাদের শেষ গন্তব্য কোথায়? আর সেখান থেকে কিভাবে নদীর কাছে যাব? আমি তো সভাপতি আমার উপর সব দায়িত্ব আমাকে জানতে হবে…!
মহিউদ্দিন মোল্লা ভাই ছোটদের আবেগ আর আনন্দ দেখে মুচকি মুচকি হাসছেন। এর মাঝেই আমরা মুদাফফরগঞ্জ পৌঁছলাম। সেখান থেকে আম নিয়ে আমাদের সঙ্গী হল আব্দুল্লাহ আল মারুফ।
আনন্দের এক পর্যায়ের ঘুমের সাগরে ডুব দিলেন আব্দুর রহমান ও মাহফুজ নান্টু ভাই। তাদের দেখে আমিও চোখ বন্ধ করলাম। চোখ খুলে দেখি চাঁদপুর।
বাস থেকে নেমেই খানাপিনা কমিটির সদস্যরা বাস স্টেশনের কলার (সবরি কলা) উপর হামলা দিল।
অটোরিকশা করে চললাম লঞ্চ ঘাটে। সেখানে আমাদের রিসিভ করলের সাংবাদিক মনোয়ার কানন,ফারুক আহমেদ এবং মাসুদ আলম ভাইসহ চাঁদপুরের সিনিয়র সাংবাদিকরা।
এরপরই চাঁদপুর নৌপুলিশের এসপি, ওসিসহ প্রশাসনের ভাইদের অভ্যর্থনায় তাদের ট্রলারে করে আমরা চললাম নদীর বুকে বলাশিয়ার চরে।
রাত পোহালেই বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে হানা দেবে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এরই মাঝে আমাদের চাঁদপুরে ভ্রমণ শুধুই ভ্রমণ নয় ঘুর্ণিঝড় বা আবহাওয়া নিয়ে সংবাদ শিখার অন্যতম প্রশিক্ষণও।


ট্রলারে নৌপুলিশ সতর্ক করছে মাইকিং করে! ৮ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে জেলেরা নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান- ট্রলার জাহাজ নোঙর ফেলুন। তারা সতর্ক করছেন আর আমরা লাইভ করছি। কেউ কেউ নিউজ লিখতে ব্যস্ত।
নৌ-পুলিশের ট্রলার চলতে চলতে নদীর মাঝে বলাশিয়ার চরে গিয়ে ঠেকল। সেখানের মানুষ অসহায় জীবনযাপন করছে। মাছ শিকার আর খাওয়াই এদের কাজ। ছোট ছোট কতগুলো শিশু দেখলাম তাদের পড়াশোনার আগ্রহ থাকলেও এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই।
সেখানকার এক মুরুব্বি জানালেন- এখানকার মসজিদে গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল। পরে ইমাম সাহেব চলে যাওয়ার পর বন্ধ করে দেয়। নতুন ইমাম সাহেব আসার পর আমরা বলছি গণশিক্ষা কার্যক্রম আবার চালু করতে! অফিসার ১০ হাজার টাকা চাইছে। আমরা গরিব! টাকা দিতে পারিনাই তাই এখানে আর গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়নি।
সেখানের মানুষের দুঃখের শেষ নেই। তবে সময় তো ফুরিয়ে যায়। আমরা চললাম চাঁদপুর শহরের দিকে। এরই মাঝে নৌ পুলিশের ওসি সাহেবের ছেলে বাবু হওয়ার আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাস্তার আয়োজনের সাথে মিষ্টি।
মিষ্টি খেয়ে মিষ্টি আড্ডা দিতে দিতেই নৌকা ঠেকল চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে। সেখানকার সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদের সাথে ফটোসেশন করে চলে গেলেও রয়ে গেলেন সবার প্রিয় কানন ও মাসুদ আলম ভাই।


তাদের সাথে শহরে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের লাঞ্চের সময় ঘনিয়ে এল।
সবাই মিলে নদীর তরতাজা ইলিশ কিনে সেখানকার হোটেলে ভাজতে দিয়ে আমরা অপেক্ষা করছি।
মাহফুজ নান্টু আর আব্দুর রহমান ভাই তো বাবুর্চির কাছেই রয়ে গেলেন, রান্নার দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।
খানাপিনা কমিটির সদস্যদের মুখে হাসি। কারণ তাজা ইলিশ ভাজা করে বাবুর্চি দিলেন প্লেটে। সাথে তো ভর্তা আছেই। গরম ভাতে ইলিশ ভাজা নিয়ে যখন সবাই খাবার শুরু করল তখন মহিউদ্দিন মোল্লা ভাই ভাবির পক্ষ থেকে পাঠানো আমের আচার সবাইকে বন্টন করে দিয়ে ভাতের উপর চাপ বাড়িয়ে দিলেন। তবে সবার খাবারে তৃপ্তি বেড়ে গেল।
খাবারের এক পর্যায়ে সবাই একজন বড় ভাইকে খুব বেশি মিস করলেন – তিনি হলেন সাপ্তাহিক আমোদ-এর সম্পাদক বাকীন রাব্বী ভাই। তিনি আমাদের সকল আনন্দে দূর থেকে শরীক হোন।
খাবারের আনন্দ যেন থামছেই না। কানন, মাসুদ ভাই আমাদের আবার নিয়ে গেলেন ওয়ান মিনিটের আইসক্রিম খাওয়াতে। মিনিট শেষ হওয়ার আগেই আইসক্রিম রেডি কিন্তুু খেতে সময় লাগল ৯/১০ মিনিট।
এবারে বিদায়ের পালা। মাসুদ ও কানন ভাইকে বিদায় দিয়ে আমরা কুমিল্লার পথে।
সবাই কুমিল্লা চলে এলেও সবার মন কাজের ফাঁকে নতুন কোন স্পটে যেতে উঁকি দিচ্ছে বারে বারে।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক,রাইজিং জার্নালিস্ট ফোরাম, কুমিল্লা।