তিন নেতা ও বঙ্গোপসাগরে চাষাবাদ

inside post
মনোয়ার হোসেন রতন ।।
সন্ধ্যা নামে সাগর পাড়ে। লাল সূর্যটা হেলে পড়ে নীল জলের বুকে। ঠিক তখনই, তিন জন নেতা জড়ো হলেন বঙ্গোপসাগরের ধারে—নাতি-পুতি বয়সী হলেও গল্পে তাঁদের চিরসবুজ যৌবন! গল্প যে শুরু হতেই হবে।
প্রথম নেতা হেসে বললেন:
“আমার দাদা প্রতিদিন তালগাছ দিয়ে দাঁত মাজতেন।” দুই নেতা তৎক্ষণাৎ চমকে উঠে বললেন, “তালগাছ দিয়ে? দাদার মুখটা ছিল কত বড়, রে ভাই?”
দ্বিতীয় নেতা মুচকি হেসে বললেন:
“তা শুনুন। আমার দাদা ঘুম থেকে উঠেই দুই হাত তুলে একটু দাঁড়াতেন, আর তখনই আকাশ থেকে একেকটা প্লেন নেমে আসতো। পাইলটরা ভাবতো, বুঝি এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করছে!”
প্রথম আর তৃতীয় নেতা চোখ কপালে তুলে বললেন, “আচ্ছা, তাহলে দাদার হাত কতটা লম্বা ছিল, বলো তো!”
তৃতীয় নেতা আর থেমে থাকতে পারলেন না।
বললেন, “আরে ভাই, সেই তালগাছ আর প্লেন—দুটোই এখন আমাদের শোকেজে সাজানো আছে।” প্রথম ও দ্বিতীয় নেতা বিস্ময়ে গলা তুলে বললেন, “তোমাদের শোকেজটা কি এয়ারপোর্টের মতো বড় নাকি?”
তিনজনেই হেসে উঠলেন—একটা রাজনৈতিক নিঃশ্বাস, একটা স্মৃতির ঢেউ, একটা ব্যঙ্গের জোয়ার! তারপর হঠাৎ করে একসাথে বলে উঠলেন: “বঙ্গোপসাগরটাও তো এক সময় আমাদের ছিল!”
তিনজনেই গলা নামিয়ে বললেন, “হ্যাঁ রে ভাই, তখন আমরা বঙ্গোপসাগরে চাষাবাদ করতাম!”
সাগরের ঢেউও হেসে ওঠে, বাতাস গায়ে লাগিয়ে বলে, “সত্যিই কি তা সম্ভব? না কি কেবল কথার সেচে চাষ হয় গর্বের ধান?” এই হচ্ছে আমাদের গল্পের কাব্য।
যেখানে নেতারা ইতিহাসকে ছেঁটে নিজেদের নামে পুঁজি বানান। তাঁরা বলেন—”এই নদী আমার, এই আকাশ আমার, এই সমুদ্রও আমার!” পাঠক ভাবেন—”তবে দেশের জনগণের কী থাকে?”
এই তিন নেতার গল্পের ভাঁজে লুকিয়ে আছে একটা সময়, যখন তারা ছিলেন দেশের কান্ডারি—স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, অঙ্গীকারের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সময় গড়াতে গড়াতে তাদের গল্পগুলো হয়ে গেছে, দাঁত মাজা তালগাছের, আকাশের প্লেনের, আর শোকেজে আটকে রাখা ইতিহাসের খণ্ডচিত্র। ‘গল্প বলো, গালি দাও, গরিবের পেটে রাজনীতির চাষাবাদ করো!’
তবু, পাঠকের চোখে এখনো হাসি ফোটে। কারণ এইসব গল্পে থাকে একটা ব্যঙ্গ, একটা চিত্রকল্প, একটা খোঁচা—যা নেতাদের চশমা ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়ে জনতার জিজ্ঞাসায়।
তারা প্রশ্ন করে—”আপনাদের শোকেজে দেশের স্বপ্নও রাখা আছে কি?” “তালগাছ দিয়ে দাঁত মাজতে গিয়ে আমরা কি পাথরে দাঁত ভাঙছি না?” “প্লেন যদি হাত দেখেই নামে, তবে দেশ কেন উঠে বসে না সত্যিকারের নেতৃত্বে?”
এভাবেই গল্প চলে।
সাগরের পাড়ে তিন নেতা আর আমরা—হাসি আর হতাশার টানাপোড়েনে বসে থাকি।
আমাদের অদেখা বঙ্গোপসাগর আজো আছে, তবে চাষাবাদের মাঠ নয়, এখন সেটা পলিটিক্সের পলি জমার ডেল্টা।
শেষমেশ, সাগরের ঢেউ ফিসফিসিয়ে বলে—
“আমি এখন কারও একার না।” “যে ভালোবাসে, যে রক্ষা করে, সেই-ই আমার প্রকৃত মানুষ।” তিন নেতা চুপ।
সাগরের গর্জন থেমে যায়।
শুধু পাঠকের হৃদয়ে বাজে—
একটা ব্যঙ্গাত্মক তান,
একটা আবেগঘন হাসি,
আর একরাশ চিন্তার ঢেউ…
আরো পড়ুন