দুর্গম গ্রামে বন্ধুদের ভালোবাসা

অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক। সড়কের কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার কৃষ্ণপুর ব্রিজ। ব্রিজ থেকে পশ্চিমে নামলেই সড়কে হাঁটু পানি। হেঁটে চলেছেন ৫০ ও ৬০এর বেশি বয়সী বন্ধুদের একটি দল। তাদের সাথে অভিজ্ঞ ৬জন চিকিৎসক। যাচ্ছেন পানিবন্দি মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা ও ওষুধ প্রদান করতে। প্রায় দুই কিলোমিটার পথ কখনও হেঁটে কখনও নৌকায় পৌঁছলেন মনপাল মোল্লা বাড়ি। পুরো গ্রামে পানি, মোল্লা বাড়ি যেন ছোট্ট দ্বীপ। আগেই চিকিৎসক আসার ঘোষণা হয়েছে। বাড়ির ঘাটে রোগীদের একাধিক নৌকা। যেন কোন ছোট্ট নদী বন্দর। যতœ দিয়ে রোগী দেখা শুরু করেন চিকিৎসকরা। খোলা আকাশের নিচে গরমের মধ্যে রোগী দেখেন। সব মিলিয়ে ৬০০জন রোগীকে সেবা দেন। শনিবার কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনপাল গ্রামে বন্ধু ফোরাম কুমিল্লা এই আয়োজন করে।


কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোকসানা আক্তার, ডা. মোঃ নিজাম উদ্দিন, ডা. নুসরাত জাহান, ডা. মাসুদুর রসিদ সৈকত, ডা. মিয়া মোঃ নাদিম ও ডা. মাধবী সরকার একটানা বিকাল পর্যন্ত সেবা দেন। সেবার আনন্দ তাদের কোন ক্লান্তি ছুঁতে পারেনি।
সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বন্ধু ফোরাম কুমিল্লার আহ্বায়ক কাজী ফখরুল আলম, যুগ্ম- আহ্বায়ক এ জে ড এম আফজাল জুয়েল, সদস্য এফ এ এম শাহরিয়ার, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাসুক আলতাফ চৌধুরী, ফোরামের সদস্য শারমিন সুলতানা দীপ্তি, মোঃ মাহফুজুর রহমান,স্বেচ্ছাসেবক নুর মিয়া মোল্লা ও অহিদুল ইসলাম।
সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোকসানা আক্তার বলেন, এসে দেখলাম আসলেই এখানে মেডিক্যাল টিম প্রয়োজন ছিলো। এই প্রান্তিক মানুষ গুলোকে সেবা দিতে পেরে আমাদের খুব ভালো লাগছে। এসব এলাকায় এরকম আরো মেডিক্যাল টিম আসা প্রয়োজন। আমি মনে করি সব পেশার মানুষদের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।


শারমিন সুলতানা দীপ্তি বলেন,আমরা এখানে এসে দেখলাম অধিকাংশ রোগীর পায়ের পাতা ও আঙুলে ঘা হয়ে আছে। সাথে আছে চুলকানি। বয়স্কদের প্রেশারের সমস্যা আছে। এই প্রান্তিক এলাকায় এসে মানুষকে সেবা দিতে পেরে ভালো লাগছে।
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাসুক আলতাফ চৌধুরী বলেন,এটি বন্ধু ফোরামের একটি মানবিক উদ্যোগ। এখানে ৬জন চিকিৎসক সেবা দিয়েছেন। রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধও দিয়েছেন। এছাড়া সাবান,কয়েল,লাইটার ও স্যানিটারি ন্যাপকিন দিয়েছেন। তাদের এই শুভ উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
বন্ধু ফোরাম কুমিল্লার আহ্বায়ক কাজী ফখরুল আলম বলেন, আমরা অনলাইন মাধ্যমে জানতে পারি এই এলাকার মানুষ কোন চিকিৎসা সেবা পাননি। দুর্গম এলাকা হওয়ায় কেউ আসতে চান না। তাই আমরা এখানে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এখানে এসে অনেক রোগী পাই। সেবা দেয়ার সুযোগ পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত।